উজিরপুরে নৌকার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হরেন রায়ের বিরুদ্ধে আ.লীগ একাট্টা ফুঁসে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা-সাধারণ জনতা

উজিরপুর প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুরে নৌকার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ হরেন রায়ের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্ণীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা, নারী কেলেঙ্কারী, অনুপ্রবেশকারী, ভূমিহীন ও খাস জমি দখল, মৎস জীবিদের চাল, সরকারি গাছ আত্মসাৎ, টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির চাল কালো বাজারে বিক্রি, ভূয়া সনদপত্র প্রদান, বিত্তবানদের নামে ভিজিডি ও ১০টাকা মূল্যের রেশন কার্ড প্রদান, মুসলীম বিদ্বেষীসহ অসংখ্য অভিযোগে ফুসে উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও ভুক্তভোগী সাধারণ জনতাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই তথ্য উদ্যোক্তা সুভাষ রায় ও তার সহযোগী ভারতে পাচারকারী মনোতোষের কাছে জিম্মি ইউনিয়ন পরিষদ। উপজেলার হারতা ইউনিয়ন পরিষদে পর পর ২বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে একের পর ক্ষমতার অপব্যয় শুরু করে। তিনি হারতা দক্ষিণপাড় কচা নদী ভরাট করে পাকা ভবন নির্মান করে বেশ সমালোচিত হয়েছেন।
হারতা বাজার জামে মসজিদের নামে প্রস্তাবিত জমি দখল করে বিলাশবহুল ভবন নির্মান করেন। নরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের কাছ থেকে ভূমিহীনদের জমি দেয়ার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। হতদরিদ্র সত্তরোর্ধ লক্ষী রানী মন্ডলের নামে তাদের ভোগদখলীয় জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কথা বলে ৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে হরেন রায় নীজ নামে লিখে নিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য সুখদেব পারুয়া জানান হারতা কালীবাড়ী এলাকায় ভ‚মিহীনদের নামে ২৫ শতাংশ জমি চেয়ারম্যান দখল করেন। এছাড়া হতদরিদ্র মৎসজীবি ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামিম বেপারী দুলাল, হানিফ,ইউসুফ, কাইয়ুমসহ অনেকে জানান হরেন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ২০১৬ সালে তারা মৎস কার্ড করান। ৫ বছরে ১/২ একবার চাল পেলেও এরপর আর কোন চাল পায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বিটিসি নিউজকে জানান, হরেন চেয়ারম্যান টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে নগদ ২৫ হাজার টাকা নেন। অনেক ঘুরাঘুরি করে ৭ হাজার টাকা ফেরৎ দেন। সম্প্রতি হরেন রায়ের মোবাইল ম্যাসেঞ্জার থেকে এক কলেজ পরুয়া ছাত্রীকে তার যৌনাঙ্গের ছবি ও কুরুচিপূর্ন কথা লিখে পাঠালে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়।
২০২০ সালে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির চাল হারতা বাজারে দিপুর দোকানে বিক্রি করার সময় জনগনের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করলে স্থানীয় সাংবাদিককে প্রান নাশের হুমকী দেন তিনি। জামবাড়ী এলাকার ৪ শত মন ধান পান দুঃখী রাম তবুও তার স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ড,বুদ্ধি বিশ্বাস ঘরে তুলেন ২ শত মন ধান তার নামে দেন ১০ টাকা মূল্যের রেশন কার্ড, ২০১০ সালে সরকারি গাছ কেটে আত্মসাৎ করলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মামলা দায়ের করলে তৎকালীন সংসদ সদস্য’র মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়।
হারতা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রশিদ বেপারী জানান মুক্তিযুদ্ধ সময়ে হরেন রায়ের পিতা কুশিস্বর রায় পিচ কমিটির সদস্য থাকায় মুক্তিযোদ্ধা তার বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল।
ওই এলাকার উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী প্রবীন সদস্যবিটিসি নিউজকে জানান, হরেন রায়ের পিতা কুশিস্বর রায় বোমা মেরে জিতেন মল্লিককে হত্যা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে ঘটনায় নিহতের ভাই শিক্ষক ব্রজেন মল্লিক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিল।
হরেন রায় ১৯৯১ সালে ওয়াকার্স পার্টির সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির পক্ষে নির্বাচন করেন। ২০০১ সালে বিএনিপির ক্ষমতাকালীন সময়ে সংসদ সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সাথে হাত মিলিয়ে নির্বাচন করে সখ্যতা তৈরি করেন।
২০০৮ সালে বিএনপির মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর নির্বাচন পরিচালনা করেন। এর সুবাদে ২০১০ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হরেন রায় বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রতিযোগীতা করেন। আর ওই সময় আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন সুনিল কুমার বিশ্বাস তাকে পরাজিত করে হরেন রায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচিত হন।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নরেন্দ্রে নাথ বাড়ৈ বিটিসি নিউজকে জানান, চেয়ারম্যান মেম্বর হিসেবে কোন সুযোগ সুবিধাই তাকে দেন না। কোন মিটিং এ ডাকেন না। জন্মসনদ নথিভুক্ত না করে ভ‚য়া সনদ প্রদান করার কারণে অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। সকলের সাথে তিনি অত্যান্ত খারাপ আচরণ করেন।
৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জানান নিখিল চক্রবর্তী বিটিসি নিউজকে জানান, চেয়ারম্যান নিজের স্বার্থের জন্য যে কোন অন্যায় কাজ করতে দ্বিদাবোধ করেননা। এসকল অভিযোগের ব্যপারে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনিল কুমার বিশ্বাস ও সাধারন সম্পাদক অমল মল্লিক জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করেও নৌকার চাবী তার হাতে। ইউনিয়ন পরিষদ এখন দূর্নীতির আখরায় পরিনত হয়েছে।
উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি কমল সাহা, ইউনিয়ন সভাপতি পরিমল সাহা, কৃষকলীগ সভাপতি কৃষ্ণ দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক বরুন মল্লিক, কৃষক লীগ সভাপতি রতন সাহা বিটিসি নিউজকে জানান, হরেন রায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে হাত মিলিয়েও নৌকার চাবি নিয়ে ঘুরছেন। ২০০১ ও ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামীলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকার কারণে অনেকটা বেপরোয়া হয়েছেন। জনগণ নতুন মুখের আশা করছেন।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ হরেন রায় বিটিসি নিউজকে জানান, কিছু খাসজমি আমি ভিটি হিসেবে ক্রয় করেছি। তবে অন্যান্য অভিযোগ সঠিক নয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.