উজিরপুরে জমি বিরোধে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনায় মামলা

উজিরপুর প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলকে জমি বিরোধের জেরে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনায় আদালতে পৃথক পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। উপজেলার শোলক গ্রামের নিহত চিত্ত দত্তের স্ত্রী তৃপ্তি রানী দত্ত বাদী হয়ে ১৪ জুন ৫ জনকে আসামী করে বরিশাল মোকাম বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং নিহত আঃ হক সরদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুদি দোকানদার দুর্জয় দত্তকে শোলক গ্রামের মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে আবুল সরদার(৫০), জাহাঙ্গীর সরদার(৪৫) ও জাহাঙ্গীর সরদারের ছেলে ইমন সরদার(২৪), আবুল সরদারের ছেলে রুমন সরদার(২৬), সুমন সরদার(২২)সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন মিলে মারধর শুরু করলে তার চাচা চিত্ত দত্ত প্রতিবাদ করলে তাকেও কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে সংজ্ঞাহীন করে ফেলে। ডাক চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন চিত্ত দত্তকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষনা দেন।
এদিকে মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সুচতুর জাহাঙ্গীর সরদার, আবুল সরদার, আলম সরদার, সুমন সরদার, রুমন সরদার মিলে চিত্ত দত্তের ঘনিষ্ট বন্ধু আব্দুল হক সরদারকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাথে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং লাশ পুনরায় বাড়ির দরজায় রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে ২ জনের লাশই উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তবে ঘটনার দিন উজিরপুর মডের থানায় হত্যা মামলা হয়নি।
এ ব্যাপারে বাদী কহিনুর বেগম জানান, ২০১৭ সালে আমার স্বামী সম্পত্তি ক্রয় করেছিল। ঐ জমি আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু ভূমিদস্যু আবুল সরদার আমার স্বামীর ক্রয়কৃত জমিতে থাকা একটি রেইনট্রি গাছ জোর পূর্বক ভোগ দখল করতে চাইলে আমার স্বামী তাতে বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, চিত্ত দত্ত মারা যাওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জাহাঙ্গীর সরদার ও আবুল সরদার আমার স্বামীকে উজিরপুরে যাওয়ার কথা বলে স্থানীয় আলমগীর হোসেনের ভ্যান গাড়িতে জাহাঙ্গীর সরদার, আবুল সরদার ও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর সরদার রওনা হয়ে উজিরপুরের দিকে যায়। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরে মেম্বর জাহাঙ্গীর, আব্দুল হক সরদার, জাহাঙ্গীর সরদার ও আবুল সরদারকে বটতলা নামক স্থানে নামিয়ে দিয়ে তিনি বাটাজোড়ের দিকে যান এবং মেম্বর জাহাঙ্গীর বাটাজোড়ে যাওয়ার সময় বলে যান, আব্দুল হক সরদার, জাহাঙ্গীর সরদার ও আবুল সরদারকে তার বাড়িতে বসতে। কিন্তু অনুমান রাত সাড়ে ১০টায় জাহাঙ্গীর সরদার, আবুল সরদার, আলম সরদার, সুমন সরদার একত্রিত হয়ে আমার স্বামীকে কাঁধে নিয়ে বাড়ির দরজায় ফেলে পালিয়ে যায়। এমনকি আমার স্বামী গলা ও ডান চোখের নিচে এবং হাটুতে জখমের চিহ্ন ছিল।
বাদী তৃপ্তি রানী দত্ত জানান, জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে আবুল সরদার, জাহাঙ্গীর সরদার, ইমন সরদার, রুমন সরদার, সুমন সরদারসহ কয়েকজন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী আমার স্বামী চিত্ত দত্তকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে হত্যা করেছে। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি ওই খুনিরা। মামলা না করার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছে। অপরদিকে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য নিহতের দুই পরিবারকেই মামলা না করার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে কতিপয় প্রভাবশালীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই বৃদ্ধার হত্যা কাÐের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভূক্তভোগী পরিবার।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.