উজিরপুরের হারতায় মৎস্য ঘেরকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ২ গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

 

উজিরপুর প্রতিনিধি: উজিরপুরের হারতায় মৎস্য ঘেরকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা। ২ গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা। সরে জমিনে গিয়ে স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মধ্য কালবিলা গ্রামের ৪০৫ জন কৃষক মিলে ৪শত একর জমির উপরে নিজস্ব উদ্যোগে ২০১৩ সালে কৃষি উন্নয়ন মৎস্য খামার নামে একটি ঘের তৈরী করে।

ঐ ঘেরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জু মোল্লা, ও সম্পাদক নিত্যানন্দ ফলিয়া। শুরু থেকেই মূল কর্তৃত্ব প্রদান করে ঐ এলাকার প্রভাবশালী রাড়ী বংশের ছত্তার রাড়ী, রশিদ রাড়ী, আকবর রাড়ীসহ অনেকে। হিন্দু পরিবার সংখ্যায় বেশি থাকা সত্ত্বেও সামান্য অজুহাতে রাড়ী বংশের লোকজন সংখ্যালঘু পরিবারের উপর চালাতো নির্যাতনের ষ্টীম রুলার।

ঘেরের আশপাশ দিয়ে হাটাচলা করতে পারত না সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন। বিভিন্ন সময় তাদের লোকজনকে জরিমানা দিতে বাধ্য করেছে, এমনকি শিশুদেরকে গাছের সাথে হাতপা বেধে আটকে রাখা হয়েছে। এতে করে ঐ পরিবারগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে ঘেরের ৫বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তাদের কাছে আর কোন ঘেরের চুক্তি দিবে না বলে জানিয়ে দেয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছত্তার রাড়ী ৩০মে উজিরপুর মডেল থানায় সংখ্যালঘু পরিবারদের বিরুদ্ধে উল্টো মাছ নিধনের ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরণ দাবী করে মামলা দায়ের করে। এরই সূত্র ধরে ৩১ মে দুপুরে হালিম রাড়ীকে হিন্দুরা হামলা চালিয়েছে এই ধুয়া তুলে রাড়ী বংশের ছত্তার রাড়ী, রশিদ রাড়ী, আকবর রাড়ী, হালিম রাড়ী, সাদ্দাম, সাইফুল, নাসির রাড়ী, নিতাই ফলিয়াসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোঠা নিয়ে হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় কালাচাঁদ বাড়ৈ ও পরিমাল বাড়ৈ’র স্ত্রী অপু বাড়ৈকে তারা মারধর করে।

এই হামলায় পুরো হিন্দু এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে বেলা ১টায় পুলিশ ও সাংবাদিক উপস্থিত হলে নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে লীজ বাতিল করে হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে শতশত নারী পুরুষ ইউপি চেয়ারম্যান হরেন রায়ের কাছে উপস্থিত হয়। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান হরেন রায় জানান, ঐ লীজকে কেন্দ্র করে রাড়ী বংশের লোকেরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঐ এলাকার হিন্দুদের নির্যাতন করে আসছে।

আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ব্যাপারে ছত্তার রাড়ী জানান, ৩০ মে সকালে প্রতিপক্ষরা সরকারি রাস্তা কেটে ঘেরের মাছ বের করে দিয়েছে। তাই মামলা করেছি। বেশি সংখ্যক লোক লীজ চালু করার পক্ষে আমাদের সাথে আছে। আমরা কাউকে হামলা করিনি। মিন্টু মৌলি, কালাচাঁদ বাড়ৈ, সুমন বিশ্বাস, অঞ্জু মৌরি, গীতা বাড়ৈ, রেনুকা মজুমদার জানান, আমাদেরকে প্রায়ই ঐ রাড়ী বংশের লোকেরা মারধর ও হুমকি দিয়ে আসছিল এবং আমাদের সাথে অশ্লীল আচরণ করছে।

আমরা এখানে আর ঘের চাইনা, আমাদের সন্তানেরা আতঙ্কে দিন যাপন করছে। ঘের কমিটির সভাপতি মঞ্জু মোল্লা জানান, মৎস্য ঘেরের কারণে ঐ এলাকার মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ঘের কমিটির নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও ঘেরটি চালু রাখা প্রয়োজন মনে করি। সকলে মিলেমিশে একত্রে কাজ করতে পারলেই ভাল হয়।

উজিরপুর মডেল থানার ওসি তদন্ত হেলাল উদ্দিন ঘের নিয়ে দ্বন্ধে প্রথমে একপক্ষ অভিযোগ দিয়েছে, পরে অন্য অন্য পক্ষরাও অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.