উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য, কাইয়ুম রেজা চৌধূরীর নেতৃত্বে বিল দখল ও জেলেদের পুলিশি হয়রানী বন্ধে সংবাদ সম্মেলন


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া জেলার শিবগঞ্জের কুমিরাদহ বিলে আদালতের আদেশ অমান্য করে কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিল দখল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশী হয়রানীর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলেরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহরের একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলে মো. ইজাজ আহমেদ লিখিত বক্তব্যে তাদের প্রতি বিভিন্ন হয়রানী ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছর হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার কুমিরাদহ বিলটি ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে ইজারা নেয়।

সমিতির জেলেরা ওই বিলে ১ কোটি ৮৪ হাজার টাকার মাছও ছাড়ে। কিন্তু চৌধুরী ইসমাইল সাজ্জাদ জোয়াদ ওয়াকফ স্টেটের স্বত্বাধীকারী কাইয়ুম রেজা চৌধুরী বেআইনিভাবে বিলটি দখল করার ষড়যন্ত্র করে সাধারণ জেলেদের নামে মিথ্যা মামলায় জেলা-হাজতে প্রেরণসহ জেলে পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছে।

শুধু তাই নয়, স্টেটের ম্যানেজার মো. আলফাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে জেলেদের জাল, পাহারার টাংঘর ও ২৩টি নৌকা জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। ইজারা নেয়া জেলেদের অন্যান্য আসবাবপত্র ও সম্পদ নষ্ট করেছে এবং এসব করেছে পুলিশের সহায়তায়। সাজানো মামলায় পুলিশ নিরীহ জেলেদের পরিবারের উপর অজ্ঞাত কারণে নির্যাতন চালাচ্ছে ও হুমকী দিচ্ছে।

উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই বিল কোন পক্ষই ভোগদখল করতে পারবে না উল্লেখ করে সম্মেলনে বলা হয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রায় প্রতিদিন পুলিশ নিয়ে এসে জেলেদের বাড়িতে অভিযানের নামে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। জেলেদের এমন দুর্ভোগ ও হয়রানী বন্ধে এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান জেলে পরিবারের উপস্থিত সদস্যরা। তবে, সংবাদ সম্মেলনে করা পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সাপ্তাহিক সোনামসজিদ পত্রিকার সম্পাদক জোনাব আলী, জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’র সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু, সাংবাদিক হারুন-অর-রশীদ, মনোয়ার হোসেন জুয়েল, ডাবলু কুমার ঘোষসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, মনাকষা হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মো. সেন্টুসহ সমিতির অন্যান্য সাধারণ জেলেরা।

সাধারণ জেলেদের পক্ষে মো. ইজাজ আহমেদ জানান, ইজারা নেয়ার পর প্রায় কোটি ৮৪ হাজার টাকার মাছ ছাড়া হয় মনাকষা হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ হতে। কিন্তু আইনী জটিলতা ও আদালতের নির্দেশে ইজারার ৩০ লক্ষ টাকা ফেরত না পাওয়ায় নিজেরা মাছ না ধরে এবং অন্যদের ধরতে না দেয়ার জন্য পাহারা দিয়ে রাখে সমিতির সদস্যরা। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে চলমান মামলার কোন আদেশ না পাওয়া সত্বেও গত মাসের ১৬ তারিখে কাইয়ুম রেজা চৌধুরী ৫০-৬০ জন লোক পাঠিয়ে বিলটি দখলের চেষ্টা করে।

কিন্তু স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে তার লোকজন পালিয়ে যায়। তবে পরের দিন স্টেটের ম্যানেজার মো. আলফাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে নিজেরাই বোমাবাজি করে সমিতির সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেন্টুসহ ১২ জনকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। পরে তারা জামিনে মুক্তি পেলেও বর্তমানে কাইয়ুম রেজা চৌধুরী সাবেক প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব ও পুলিশের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া জেলেদের।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০ অনুসারে, হাটবাজার, জলমহল, বন-জঙ্গল ও ফেরী পারাপার এসব শ্রেণীর জমি সরকারের উপর বর্তায়। একই আইনে বর্ণিত ৪ শ্রেণীর জমি ওয়াকফ এস্টেটের অর্ন্তভুক্ত রাখা যাবে না, মর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সরকার যথারীতি নালিশী জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক কুমিরাদহ বিলটি জলামহল হিসেবে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ইজারা দিয়ে আসছে।

ৎএবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামসুল আলম বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলেরা কুমিরাদহ বিলে ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা কর্মকান্ড চালানোর প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে।

মামলার কিছু আসামী আদালত থেকে জামিনে আছে, অনেক আসামীর আদালতে জামিন না নেয়ায় বা তারা বিস্ফোরক মামলার আসামী হওয়ার তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

এছাড়া কোন নিরীহ মানুষকে পুলিশ হয়রানী করছেনা। ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কাজ করছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.