ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ অধ্যক্ষকে মারপিট ও ভাংচুর করায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: চাঁদার টাকা না পেয়ে পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যকে প্রকাশ্যে মারধর ও লাঞ্চিত করেছে উপজেলা ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ও ক্যাডাররা। গত বুধবার বিকেলে ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসের এই ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি ও সাধারন সম্পাদক সুমন দাস এবং কলেজ শাখার সভাপতি খন্দকার আরমান ও সাধারন সম্পাদক সাব্বির হাসানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারন সম্পাদক মুরালী মোহন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি মূলত ভর্তির দায়িত্বে থাকার কারনে মারপিটের সময় ছিলাম না, তবে পরে এসে দেখি স্যারে রুমে ভাংচুর। এ ঘটনায় স্যার বাদী হয়ে একটি মামলাও করেছেন।

কলেজের উপাধাক্ষ্য আব্দুল জলিল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন, শিক্ষকদের সাথে এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এর সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ছাত্রলীগ কলেজের প্রসপেক্টাস ও পাঠ্যসূচী প্রিন্ট করে নিয়ে এসে কলেজ কতৃপক্ষকে দিয়ে বিক্রি করাতে বাধ্য করান। এবং বিক্রির সকল অর্থ তারা গুন্ডাদের মতো এসে হিসেব নিকেষ না করেই নিয়ে যান। তারা ব্যবসা করবেন আর আমরা তাদের কর্মচারীর মতোসব কাজ করে দিব। আমরা এই সকল কাজের বিরোধিতা করলেই আমাদের উপর নির্যাতন নেমে আসে। ৬ ঘন্টা মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করেন তারা। আমি শুধু অধ্যক্ষ স্যার একজন প্রফেসর ও ডক্টরেট করা মানুষ তা গায়ে হাত তুলতে নিষেধ করায় আমার গলা ধরে নিঃশাস বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয় বলেই থেমে যান।

তিনি আরো বলেন, আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে এখানে আছি। আমরা কারো কিছু বলতেও পারছি না সহ্যও করতে পারছি না।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদীতে ভূমিমন্ত্রী পুত্র তমাল বাহিনীর শীর্ষ ক্যাডার ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব, সুমন, আরমান, সাব্বিরদের অত্যচারে অতিষ্ঠ পুরো ঈশ্বরদীবাসী। তারই ধারাবহিকতায় তারা কলেজেও ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ঘটনার দিনে তাদের দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ অধ্যক্ষ্যকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ব্যাপক মারপিট করে। কলেজের গাছ কর্তন, শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ, কোন ছাত্রীকে পছন্দ হলে জোর করে অনৈতিক কর্মকান্ড করার চেষ্টাসহ নানা ধরনের অপকর্ম করেন তারা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই, কেননা তারা ভূমি মন্ত্রী পুত্র তমাল বাহিনীর লোক। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে খেসারত দিতে হয়। কোন শিক্ষকও তাদের এই জঘন্য কর্মকান্ডের কথা উচ্চারণ করছেন না।

ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার আরমান বলেন, স্যাররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার দূর্নীতি করে থাকেন। সম্প্রতি ভর্তি ও ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছিল। আমরা এর প্রতিবাদ করলে শিক্ষকরা আমাদের উপর চরাও হয় এবং সামান্য কথাকাটাকাটি হয় মাত্র। এখানে চাদা দাবীর তো কোন প্রশ্নই আসে না। তবে তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি উচ্চ স্বরে বাক বিতন্ডার কথা স্বীকার করলেও মারপিটের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান। তবে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কথা বলার সময় স্যারদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। শিক্ষকরা যদি এই ধরনের অপকর্ম করতেই থাকে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে যাব বলেও জানান তিনি।

কয়েকজন শিক্ষক কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, ছাত্রলীগ নেতাদের কথা মতো কাজ না করার জন্যে আমাদের উপর এই হামলা করেন তারা। তাদের অন্যায় দাবী মেনে না নেওয়ার ফলে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল হাসান রনিসহ সাধারন সম্পাদক সুমন কলেজ শাখার সভাপতি সাধারন সম্পাদকসহ তাদের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অধ্যক্ষকের রুমে গিয়ে এই হামলা চালায়। এ সময় সিসি টিভি, অফিস টেবিলের কাচসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। অধ্যক্ষ সহ উপস্থিত শিক্ষকদের মারপিট এবং অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ছাত্রলীগের এ ধরনের কর্মকান্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান বলেন, সরকারী কাজে বাধাদান, জীবনের নিরাপত্তা, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে আমি ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। আমি কোন প্রকার অন্যায় কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেই।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান বাদী হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ নভেম্বর পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ভূমি মন্ত্রী পুত্র তমালের এই ক্যাডার বাহিনীর হামলার স্বীকার হয় পাবনার ৪ সাংবাদিক। তারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে অবস্থান করছেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.