ঈশ্বরদীতে সুইপার কলোনিতে চাঁদা দাবীর অভিযোগে পুলিশ আটক, থানা ঘেরাও বিক্ষোভ মিছিল

পাবনা প্রতিনিধি:  ঈশ্বরদী শহরের রেলগেট এলাকার সুইপার কলোনিতে (হরিজনপল্লী) চাঁদাবাজির অভিযোগে এটিএসআই মতিউর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ঘেরাও করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের অন্য একটি দল ঘটনাস্থল সুইপার কলোনিতে গিয়ে লাঠিচার্জ করে আটক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যদের উদ্ধার করে আনে। এতে উত্তেজিত হয়ে কয়েক শ নারী ও পুরুষ সুইপার থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী থানায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সুইপারদের দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই মতিউর রহমান কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ সুইপার কলোনির সাজুর ঘরে ঢুকে তাঁকে আটক করেন। এ সময় বাড়ির লোকজন বাধা দিলে পুলিশ বাড়ির নারী, পুরুষ ও শিশুদের বেদরক মারধর ও অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে।

একপর্যায়ে সুইপাররা এটিএসআই মতিউরসহ পুলিশ সদস্যদের কে আটক করে রাখে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে তাদের উদ্ধার করে আনে। পুলিশের লাঠিচার্জে সুইপার কলোনির কয়েকজন বাসিন্দা আহত হয়। পরে সুইপার কলোনি থেকে কয়েক শ নারী, পুরুষ ও শিশু রাত ৮টার দিকে থানা ঘেরাও করে। ঘণ্টাখানেক সময় ধরে সুইপাররা থানার বারান্দায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি জানান। একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে তাদের বিদায় করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সুইপার কলোনির বাসিন্দা নরেজ  বলেন, ‘আমরা ময়লা পরিষ্কারের কাজ করি। আমাদের বাংলা মদ খাওয়ার অধিকার রয়েছে। পুলিশের নিষেধের কারণে আমরা আর মদ বিক্রি করি না। তবে অন্যত্র থেকে কিনে এনে সবাই খাই। এই সুযোগে পুলিশ প্রায়ই কলোনিতে গিয়ে বাসিন্দাদের থানায় কিংবা ফাঁড়িতে ধরে আনে। পরে তাদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে পুলিশ সুইপার কলোনিতে চাঁদাবাজি করে আসছে।

রেলগেট সুইপার কলোনির ইনচার্জ শিক্ষক লক্ষণ কুমার বিটিসি নিউজকে  জানান, থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ তাঁদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করেছে। প্রায়ই কলোনিতে গিয়ে মা-বোনদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে এবং পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। প্রত্যেককে ৪০-৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়াতে হয়।’

কলোনিতে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে তাঁদের আন্দোলন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান লক্ষণ।
বয়োবৃদ্ধ সুইপার পুতুল রাণী (৭৫)  বলেন, ‘প্রত্যেকেরই মান-সম্মান আছে। পুলিশ আমাদের কলোনিতে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে।

গত রাতে ঘটনার সময় ঈশ্বরদী থানার ডিউটি অফিসার এসআই শাহ আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সুইপারদের কলোনিতে আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই মতিউর রহমান থানাকে অবগত না করে গিয়েছিলেন। সেখানে কী ঘটেছে তা আমার জানা নেই। আমি দোতলায় ডিউটিতে আছি। নিচে কারা যেন হৈচৈ করছে, তা আমার জানা নেই।’
তবে আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আলমগীর দাবি করেন, ‘সুইপার কলোনিতে গিয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি করার অভিযোগটি ভিত্তিহীন। নিজেরা পান করা ছাড়া অতিরিক্ত বাংলা মদ বিক্রি করতে পারবে না বলে ৯ জন সুইপার মুচলেকা দিয়েছে।’

তিনি আরো জানান, আজ ফাঁড়ির এটিএসআই মতিউর তাঁকে কিংবা থানার ওসি সাহেবকে অবগত না করে বিশেষ তথ্যে সুইপার কলোনিতে যান। কিন্তু কলোনিতে তাঁকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
কিন্তু কেন সুইপাররা থানায় এলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা মুচলেকা দেওয়ার পরও কেন কলোনিতে পুলিশ গেছে, সেই বিষয়টি জানাতেই সুইপাররা ওসি সাহেবের নিকট এসেছিলেন।’ ওসি সাহেব তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর পাবনা প্রতিনিধি মো: ময়নুল ইসলাম লাহিড়ী মিন্টু।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.