ঈদুল আযহা : আঁধার কেটে আসবে আলো

লেখক: শাহাদাত আনসারী: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এবং বন্যার মধ্যেই এবার আসলো কুরবানি ঈদ। ছোট-বড় সকলের কাছে ঈদ এক আনন্দের নাম।

এবার ঈদের জামায়াত উন্মুক্ত মাঠের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিকটস্থ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। দুই মাস আগে ঈদ-উল ফিতর আমরা আনন্দে কাটাতে পারিনি।

এবারো প্রায় নিশ্চিত আনন্দে কাটাতে পারবো না কুরবানির ঈদ। ঈদে সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য মুসলমানরা কুরবানি করবেন। কিন্তু এবারের ঈদ অনেকটা ব্যতিক্রমী।

ঈদ মানে আনন্দ, কোলাকোলি, ঘুরাফেরা, সালামি আর উৎসব। তবে এ ঈদে এগুলোর কোনটিই থাকছে না। কিছু থাকলেও খুবই সীমিত আকারে। সব কিছুর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯।

মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ গত বছরের শেষদিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে আজ বিশ্ব ভ্রমণ করছে। পৃথিবীর আনন্দ আর হাসিকে থামিয়ে দিয়েছে এই মহামারি। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে।

আমাদের দেশেও প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণকারীর পরিবারে এবার ঈদে তেমন আনন্দ নাই। যারা সুস্থ আছি তাদের ঈদও কেমন যেন আনন্দ ও উৎফুল্ল না। আর এর প্রকৃত কারণ মহামারি করেনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আজ ঈদ থাকলেও নাই আনন্দ। তাদের এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থকাটায় ঈদ আনন্দ ও সৌভাগ্যের ।

কোভিড-১৯ থেকে দেশের জনগনকে নিরাপদে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সাধারণ জনগনও বুঝতে পারছেন বর্তমানে কেমন থাকতে হবে। কুরানির ঈদ সকলের জন্য আনন্দ নিয়ে হাজির হয়। এবারো আনন্দ নিয়ে এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় আমরা আনন্দ করতে পারছি না।

এবারের ঈদে ঈদগাহে যাওয়া হবে না। কোলাকোলি ও কুশল বিনিময়ও হবে না। এটা সত্যি দুঃখ ও বেদনাদায়ক। ঈদের জামায়াত করতে হবে মসজিদে বা বাড়িতে। ঘরোয়াভাবে কুরবানির পশু যবেহ করে উচ্ছিষ্ট মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

এর আগে কুরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস যেন বিস্তার করতে না পারে তাই এ ব্যবস্থা। সরকারের এ পদক্ষেপ আমাদের কল্যাণ নিয়ে আসবে। কারণ বেঁচে থাকলে আমরা পরবর্তীতে বিভিন্ন উৎসবে আনন্দ করতে পারবো।

ঈদে ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখা গেলেও এবার তা হবে না। সারাদেশের যোগাযোগ সড়ক, রেল ও নৌ পথে সীমিত যোগাযোগ শুরু হলেও চাকুরিজীবীদের কর্মস্থলেই ঈদ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাঁড়ির টানে ঘরে ফেরা হবে না অনেকের। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ভার্চুয়াল জগতে আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ ও ভাবনার আদান-প্রদান হবে।

বৃদ্ধ মা-বাবার সাথে ঈদের দিন থাকতে পারবেন না বলে অনেকের কাছে খারাপ লাগবে। কিন্তু নাঁড়ির টানে ঘরে ফিরতে গিয়ে যদি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

সন্তানের কাছে পিতা-মাতার সুস্থতার খবর এখন ঈদের আনন্দ। আবার সন্তান ঈদে বাড়ি না ফিরলেও যেন সুস্থ থাকে এটা প্রত্যেক পিতা-মাতার প্রত্যাশা। তাই আপনজন সুস্থ ও নিরাপদে থাকুক এটাই সবার কাছে ঈদ উৎসব।

ঈদ আসলেই শুরু হয় নতুন পোশাক কেনার ধুম। অনেকের কাছে নতুন পাঞ্জাবি ও জামা কেনা আবার মার্কেটে ঘুরে আনন্দ করা ভীষণ শখের। কিন্তু এবার ঈদে এমনটা হবে না। শপিংমল এবং মার্কেটের বড় বড় দোকানে সীমিত পরিসরে বেচাকেনা হবে।

তাই অনেকেই নতুন কাপড় ছাড়াই কুরবানির ঈদ কাটাবেন। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সবাই বাজার করবেন। বাবা-মায়ের জন্য নতুন কাপড়, শিশুদের জন্য খেলনা কেনার পরিকল্পনা এবার ঈদে হয়তো অনেকের পরিকল্পনায় থাকবে না। আমরা এবার সব কিছু ছাড় দিচ্ছি ঈদে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার জন্য। কারণ সুুস্থ থাকলে ভবিষ্যতে অনেক কিছু করতে পারবো। মহামারি কোভিড-১৯ এ এখন বেঁচে থাকায় আমাদের জন্য মহা আনন্দ এবং সৌভাগ্যের।

শিশুরা এখন ঘরেই আছে পরিবারের সাথে। তাদের ইচ্ছা থাকে ঈদে দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যাবে। নিকটজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি তাদের আনন্দের বাধা হয়ে দাঁড়ালো। আম্মা বলেছেন বাড়ির বাহির হওয়া যাবে না।

এবার ঈদে বাজার থেকে তোমার জন্য তেমন কিছু আনা হবে না। তবুও শিশুদের জন্য এবার আনন্দ ইদুল ফিতর এর চেয়ে একটু বেশি হবে। তবে পরিবারের সাথে সারাদিন থাকা হবে বলে তাদের ঈদটা আড্ডায় কাটবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। বিকেলে হয়তো ঘুরা হবে না। তবে বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টান্ন খেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দও হবে।

কুরবানির ঈদে সবচেয়ে কষ্ট হবে দুস্থ-গরীব পরিবারের সদস্যদের। ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই কুরবানি দিতে পারবে না। যাদের কাজ বন্ধ, ছোট্ট ব্যবসা থাকলেও চলছে না তাদের পাশে সরকার দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকেও তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যাদের কুরবানি দেয়ার সামর্থ নাই তাদের বাড়িতে গোশত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। তারা হয়তো মুখ ফুটে সাহায্যের আবেদন করবে না।

তাই আমাদেরকেই সাধ্যমতো নিজ উদ্যোগে তাদের খবর নিতে হবে। বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয়তো সম্ভব হবে না। তাই তাদের বাড়িতেই ঈদের খাদ্য পৌঁছিয়ে দিতে হবে। আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই ঈদে কেমন থাকবে তার খবরও আমাদেরকেই নিতে হবে। সামান্য হলেও তাদের বাড়িতে মিষ্টান্ন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি ত্রাণ ও ঈদ সামগ্রী যেন প্রকৃত দাবিদারের কাছে পৌঁছে তার উদ্যোগ নিতে হবে সমাজের নেতৃস্থনীয় ব্যক্তিদের। সমাজের সবাই আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ থাকা হচ্ছে ঈদের প্রকৃত আনন্দ।

অতীতে আমাদের উপর দিয়ে চলে গেছে অনেক দুর্যোগ ও বিপদ। এ বিপদে ধৈর্য্য হারা হলে চলবে না। মনোবল শক্ত করে আমাদেরকে ভাবিষ্যতের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। একদিন সকল আঁধার কেটে ভোর আসবেই। আমরা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হচ্ছি। মহান সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে তাঁর দরবারে কুরবানি করছি।

মহামারি থেকে মুক্তি পেতে ঈদে আমরা বিশেষ প্রার্থনা করবো। দৃঢ় বিশ্বাস মহান প্রভু আমাদেরকে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ করবেন।

অগামীর ঈদ আমাদের কাছে আনন্দ ও সুখের বার্তা নিয়ে ফিরে আসবে। এবার ঈদে আমরা তেমন মহা আনন্দ চাই না। চাই নিজেদের সুস্থ ও নিরাপদ থাকা। আর এ সুস্থতা ও নিরাপদ থাকায় আমাদের এবারের ঈদ আনন্দ।

আঁধার কেটে যে ভোর আসবে সে প্রত্যাশিত দিনের দর্শক হবো আমরা সকলে। আনন্দে সেদিন ভরে উঠবে পৃথিবী।

লেখক: শাহাদাত আনসারী [ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক]। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.