ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৬টি দোকানসহ একটি মার্কেট ভবন ভাঙার অভিযোগ

 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মডেল মসজিদের জন্য ‍নির্ধারিত জমির স্থাপনা সরাতে গিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি দোকানসহ একটি মার্কেট ভবন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দোকানের মালামাল লুট করাসহ প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকের হোসাইন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২ জুন) ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।
এদিকে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান, পুলিশ সুপার তারেক বিন রশিদ ও কমলনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জণ দাস। তারা অধিগ্রহণের বাইরে অতিরিক্ত জমির দোকান ভাঙচুরের সত্যতা পান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কমলনগরের হাজিরহাট বাজার এলাকায় উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয় দোকান মালিকের থেকে চার দাগে .০৫৫৩ একর জমি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণ জমির সীমানা নির্ধারণ করে (একতা মার্কেটের অর্ধেকাংশ) লাল দাগ দিয়ে লক্ষ্মীপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভাগকে বুঝিয়ে দেয় প্রশাসন। সে প্রেক্ষিতে অধিগ্রহণকৃত জমির স্থাপনা সরাতে ঠিকাদার নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
গত ১৮ এপ্রিল প্রকল্পের স্থাপনার মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেয়া হলে, তারা সরিয়ে নেন। কিন্তু পরদিন সকালে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের লোকজন নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধিগ্রহণ জমির বাইরে থাকা ১৬টি দোকানসহ ‘একতা মার্কেট’ ভবন ভাঙা শুরু করে। এ সময় দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকের হোসাইনকে জানান। খবর পেয়ে উপ-পরিচালক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তার নেতৃত্বেই ঠিকাদারের লোকজন দোকানসহ মার্কেট ভবন গুঁড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে তার আদেশে দোকানে থাকা ব্যবসায়ীদের মালামাল ঠিকাদারের লোকজন নিয়ে যায়। এতে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকপক্ষের লোকজন বলেন, আমরা মডেল মসজিদ নির্মাণের বিপক্ষে নই। তবে লাল দাগ দিয়ে অধিগ্রহণ জমির সীমানা দেয়ার পরও অন্যায়ভাবে আমাদের দোকান ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ সময় আমাদের প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও জেলা প্রশাসক সত্যতা পেয়েছেন। তবে এখনও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকের হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেই স্থাপনা সরানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়। দোকান মালিকদের অভিযোগ সত্য নয়। ব্যবসায়ীরা ঠিকাদারের মালামাল লুট করায় তাদের বিরুদ্ধেই ঠিকাদার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কমলনগর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জটিলতা দীর্ঘদিনের। মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে অধিগ্রহণ জমির সীমানাও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে সরজমিনে পরিদর্শন করে অধিগ্রহণের বাইরে অতিরিক্ত জায়গার দোকান ভাঙার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে।
এদিকে বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসতে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি মো. আসলাম সরকার আসলাম। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.