ইসলামপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ


ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি: আজ স্বাধীনতার ৫১ বছর। ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির গৌরবের মাস। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ইসলামপুরের মাটি পাকহানাদার মুক্ত হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এদিন হাজার মুক্তিকামী ছাত্র জনতা আনন্দ উল্লাশের মধ্যে দিয়ে থানা চত্বরে জালাল কোম্পানীর কমান্ডার প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্বাধীনতার প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনটি ইসলামপুর বাসীর জন্য অত্যান্ত গৌরবের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন স্বাধীনসহ স্থানীয় মক্তিযোদ্ধারা জানান, যখন এই মাসের আগমন ঘটে তখনই মনটা ফিরে যায় অতীতের সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে। বিশাল জনসমুদ্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কণ্ঠে ঘোষিত হয় বাঙালি জাতির বঞ্চনার ২৩ বছরের ইতিহাস। ‘এবাবের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
ওই সময় উপজেলার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়ার সন্তান জালাল কোম্পানী কমান্ডার বীর সন্তান শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে জয় বাংলা মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুজাহিদ সদস্য ও অন্যান্য লোকজনদের নিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে মহেন্দ্রগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে স্থাপিত প্রাথমিক রিক্রুট মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করেন।
১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন পেশার লোকজনদের নিয়ে জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কোম্পানী গঠন করা হয়। সেক্টর কমান্ডার এর নির্দেশে কোম্পানীর যোদ্ধাদের নিয়ে ইসলামপুর সিরাজাবাদ এলাকার বহ্ম্রপুত্র নদীর পাড়ে মাদারি ছন আখ ক্ষেত নামক স্থানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
সেখানে থ্রিউরিক্যাল ও প্যাক্টিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদানসহ গেরিলা যুদ্ধ চালানো হয়। জালালের নাম অনুসারে জালাল বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিদিন জালাল বাহিনী নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের স্থাপনা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে জালাল বাহিনী ইসলামপুরের পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্প দখলে প্রস্তুতির উদ্দেশে ৬ ডিসেম্বর দুপুর পলবান্ধা ইউনিয়নের পশ্চিম বাহাদুরপুর পাইমারী স্কুল মাঠ সংলগ্ন ইসলামপুর সিরাজাবাদ সড়কে অবস্থান নেয়।
মুক্তিযোদ্ধারা চার ভাগ হয়ে এক প্লাটুন থানা পরিষদের উত্তর পশ্চিম কোণে ঋষিপাড়া রেল ক্রসিং এলাকা, ২ নম্বর প্লাটুনকে সর্দার পাড়া অস্টমিটেক খেয়া ঘাট সংলগ্ন বহ্ম্রপুত্র নদের দক্ষিণ পাড় ইসলামপুর-সিরাজাবাদ সড়ক এলাকায়, ৩ নম্বর প্লাটুনকে থানার পূর্ব পাশে পাকা মুড়ি মোড় বর্তমানে ইসলামপুর হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এবং ৪ নম্বর রিজার্ভ প্লাটুনকে পশ্চিম বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর পাশে অবস্থান নেয়।
ওইদিন দুপুর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলিতে টিকতে না পেরে অস্ত্র গোলাবারুদ এবং অন্যান্য জিনিস পত্র ফেলে আকর্ষিক রণে ভঙ্গ দিয়ে বিশেষ ট্রেনে জামালপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় ঝিনাই ব্রিজসহ তিনটি রেল ব্রিজ ধ্বংস করে জামালপুর পর্যন্ত আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
অতঃপর ৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে থানা প্রসাশন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মজির উদ্দিন আহমেদ, গণি সরদার, টুআইসি আলাউ উদ্দিন জোরদার, প্লাটুন কমান্ডার শাহাদত হোসেন স্বাধীন ও হাজার মুক্তিকামী ছাত্র জনতা আনন্দ উল্লাশের মধ্যে দিয়ে থানা চত্বরে জালাল কোম্পানীর কমান্ডার প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্বাধীনতার প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই সাথে ইসলামপুরের মাটি শত্রুমুক্ত হয়।
উল্লেখ্য যে, স্পেশাল জালাল কোম্পানী কমান্ডার শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি লিয়াকত হোসাইন লায়ন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.