ইসলামপুর (জামালপুর)প্রতিনিধি: জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, মাটি ও বালুর গাড়ী চলাচলে ধুলোবালিতে ফল ফসল নস্ট সহ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জন জীবন। অন্যদিকে ভাটাগুলোর ইট তৈরিতে ফসলি জমির উপরিভাগ মাটি কেঁটে নেওয়ার ফলে ফসলি এই জমিগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে।
জানাগেছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে উপজেলার ঢেংগারগড় বটতলা সংলগ্ন মেসার্স এমআরবি ব্রিকস,নবাব ব্রিকস, গঙ্গাপাড়া গ্রামে জনবসতিতে মিলি ব্রিকস, পাথর্শী ইউনিয়নের মোজাআটা,পশ্চিম মোজাআটা, মুকশিমলা, রৌহারকান্দা গ্রামের ফসলী ধানী জমিতে,পৌরসভা ভবন সংলগ্ন সওদাগর ব্রিকস ,দক্ষিন দরিয়াবাদ গ্রাম সংলগ্ন হাতিজা গ্রাম,পাঁচবাড়িয়া গঙ্গাপাড়া এলাকা ও চর গোয়ালীনি ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম সংলগ্ন ব্রিকস এলাকায় ১১টি ইটভাটায় দীর্ঘদিন ধরে পাকা চিমনি নির্মান করে ইট উৎপাদন করছে।
ঢেংগারগড় বটতলা সংলগ্ন মেসার্স এমআরবি ব্রিকস ও নবাব ব্রিকস সড়ক দখলে নিয়ে ইট উৎপাদনসহ তাদের মাটি ও বালুর গাড়ী চলাচলে সাধারণ মানুষের চলাচল ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ইট উৎপাদনে ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ কেঁটে নেওয়া অব্যহত থাকলে জমিগুলো বন্ধা জমিতে পরিনত হওয়া সহ বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহিত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় পরিনত হবে। এই জমিগুলো চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষ না করায় তা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। গাছ ও কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি সাধনসহ কালো ধোঁয়া আর ধুলো বালুর বীরূপ প্রভাবে জমির আবাদ নষ্ট হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরব রয়েছে।
প্রজাতন্ত আইন ১৯৫০ এর অধীনে ১৯৯০সনের ইস্যুকৃত সার্কুলারে বলা আছে,কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষেধ রয়েছে। সেই সাথে জন বসতির তিন কিলোমিটার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
এ ছাড়াও আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা; সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য,বাগান বা জলাভূমি,কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক হইতে কমপক্ষে ১/২ (অর্ধ) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেকোন ব্যক্তি কোন ইটভাটা স্থাপন করিতে পারিবেন না। কিন্তু উপজেলার ইটভাটা গুলোর অধিকাংশ মালিক এই আইন অমান্য করে ভাটা স্থাপন করেছে।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর নীতিমালা লঙ্ঘন করে ইট ভাটাগুলো নির্মান করায় একদিকে যেমন আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে, তেমনি কাঠ পোড়ানো ও চিমনি ব্যবহারের ফলে এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশীদের উপর বীরূপ প্রভাব পড়ছে।
ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দুষনসহ আশপাশের বনজ ও ফলজ গাছ উজার হচ্ছে। দিনদিন ফসলি জমির মাটিঁ কাঁটার এই প্রবনতা বেড়েই চলার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তিও আশঙ্কা জনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরিস্তর কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, সালফার ক্যালসিয়াম সহ অর্গানিক বা জৈব উৎপাদনের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালোধোয়া ও ভাটার গাড়ী প্রতিনিয়ত মাটি ও বালু নিয়ে বেপরোয়া চলাচলে সড়কগুলোতে পথচারীদের আতঙ্কে বেড়েই চলেছে। খোলামেলা ভাবে মাটি ও বালির গাড়ীগুলো যাতায়াতে ধুলো বালুর বীরূপ প্রভাবে মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধী সহ অনেকের চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমির মাঠে ইটভাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তারা প্রশাসন নিকট দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলাা কৃষি কর্মকর্তা রেজুয়ানূল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ফসলি জমির মাঠে ইটভাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ইটভাটার বীরুপ প্রভাবে ধানক্ষতে নষ্ট হওয়ার বিষয় গুলো একাধিক বার জেনেছি। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এম আবু তাহের বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনার মহামারীতে খোলামেলা ভাবে মাটি ও বালুর গাড়ি চলাচলে ধুলোবালিতে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া,এলার্জি সহ দিনদিন নানান রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাজহারুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অবৈধ ভাবে ইটভাটা নির্মানে পরিবেশ ও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়। দ্রুতই অবৈধ ইটভাটা বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.