ইসরায়েলে চরম দক্ষিণপন্থীদের উত্থান, আতঙ্কে ফিলিস্তিনিরা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টরপন্থী এবং গোঁড়া ধর্ম-ভিত্তিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ইসরায়েল- ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে বলে ইসরায়েলের ভেতর এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রবল শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা।
এই পটভূমিতে হেব্রনে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি নিউজের টম বেইটম্যান। কী দেখেছেন তিনি?
আমি গিয়েছিলাম হেব্রনে ইয়াসের আবু মারখিয়ার বসতবাড়ির ওপর চালানো হামলা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু সাক্ষাৎকারের মধ্যেই কুঁচকিতে লাথি খেয়ে বাগানে তাকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে হল।
তার বাড়িতে হামলা চালানো যখন শুরু হয়, তখন আমাদের ক্যামেরা ওই ঘটনা রেকর্ড করতে শুরু করেছে।
বসতিস্থাপনকারীরা হামলা শুরু করেছে! তারা পাথর ছুঁড়ছে! আমার প্রযোজক চিৎকার করছিলেন। ফিলিস্তিনি পরিবারটির সদস্যদের সঙ্গে আমরা ছুটে বাসার বাইরে গেলাম। দুজন তরুণ ইসরায়েলি, ইয়াসের আবু মারখিয়ার বাসার বাগানে জোর করে ঢুকে পড়েছে। তাদের পেছন পেছন ঢুকেছে কিছু সৈন্য।
দুই তরুণ বসতিস্থাপনকারীর একজন সোজা আমাদের দিকে তেড়ে এল- পরিবারটিকে উদ্দেশ করে চেঁচাতে লাগল, “এখান থেকে বেরিয়ে যাও। চলে যাও!”
তাদের হম্বিতম্বি থামানোর চেষ্টায় আবু মারখিয়া এগিয়ে গেলেন- তিনি তার ফোনে ঘটনাটার ছবি তুলছিলেন। একজন সৈন্য তাকে ছবি তুলতে বাধা দিল। কিন্তু এরই মধ্যে ইসরায়েলি তরুণটি এগিয়ে এসে ওই বাসার মালিক ফিলিস্তিনি আবু মারখিয়াকে জোরে লাথি মারল।
ঠিক এধরনেরই আচমকা হামলা নিয়ে এই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে আমরা হেব্রনে এসেছিলাম। হেব্রনের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা বলছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর তাদের ওপর হামলা ক্রমশ বাড়ছে। তারা সবসময় আচমকা হামলার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
এবারের ভোটে চরম ডানপন্থীদের প্রতি সমর্থন ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। যার ফলে হেব্রন এবং অন্যত্র ইহুদী বসতিস্থাপনকারীদের পক্ষে আন্দোলনকারী চরম জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠির একেবারে কট্টর মনোভাবাপন্ন মানুষরা নিজেদের ক্ষমতাশালী মনে করছেন।
এছাড়া এই ভোটের ফলাফল, অধিকৃত এলাকাগুলোয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে ইসরায়েলি সমাজের ভেতর একটা সংস্কৃতির লড়াইয়েও ইন্ধন জোগাচ্ছে।
আবু মারখিয়াকে লাথি মারা ঘটনার পর আমরা যখন ছবি তোলা চালিয়ে যাচ্ছি, তখন সেখানে একটা অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ওই পরিবারকে সাহায্য করছেন এমন একজন ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারী, বাদি দোওয়েক, চিৎকার করতে থাকেন, “এখানে সৈন্যরা ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য কিছুই করে না। একজন ফিলিস্তিনি যদি একাজ করতো, তাহলে তোমরা (সৈন্যরা) তাকে জেলে ধরে নিয়ে যেতে, নয়ত গুলি করতে!”
সেখানে এই পদ্ধতিমাফিক বৈষম্যের যে অভিযোগ অনবরতই শোনা যায় সেটাই ওই ব্যক্তি পুনর্ব্যক্ত করলেন। তাদের চিরাচরিত অভিযোগ হল, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি গাড়তে আসা ইসরায়েলি, যারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়, তাদের দায়বদ্ধ করার সংস্কৃতি খুবই বিরল।
আর তাদের এই অভিযোগ যে কতটা সত্যি সেটাই প্রমাণ করলেন ওই ব্যক্তি, যিনি ইয়াসের আবু মারখিয়াকে লাথি কষিয়েছিলেন। তিনি তার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন, একজন সৈন্য তার সাথে করমর্দন করল এবং তিনি চলে গেলেন।
আবু মারখিয়া অচৈতন্য আর আহত অবস্থায় পড়ে রইলেন। প্রতিবেশিরা এসে তার সেবা শুশ্রূষা করতে লাগল। এই ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আমরা প্রশ্ন করলে তারা বলে যে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হলে সেটা থামানোর দায়িত্ব সৈন্যদের এবং প্রয়োজন হলে পুলিশ না আসা পর্যন্ত সন্দেহভাজনদের আটক রাখার ক্ষমতাও তাদের রয়েছে।
পুলিশও নিয়মমাফিক বলে থাকে, ইহুদী বসতিস্থাপনকারীদের দিক থেকে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে তারা তা তদন্ত করে। কিন্তু অধিকার গোষ্ঠিগুলো বলে, এগুলো সাধারণত কেবল মুখের কথা, আদতে কখনই এসব ঘটে না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.