ইসরায়েলে ২০০ রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জ্যেষ্ঠ এক কমান্ডারকে হত্যার প্রতিশোধে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবস্থানে দুই শতাধিক রকেট ছুড়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
এর আগে, বুধবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় টাইরে শহরের কাছের একটি এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ নাসের নিহত হন। তার আগে গত জুন মাসে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ কমান্ডার তালেব আব্দুল্লাহ নিহত হন। বুধবারের হামলায় নিহত কমান্ডার নাসের গোষ্ঠীটির কাছে তালেব আব্দুল্লাহর মতো একই পদমর্যাদা ও গুরুত্বের অধিকারী ছিলেন। তালেব আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে ওই সময় ইসরায়েলে গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছিল হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার দক্ষিণ লেবাননের টাইরে এলাকায় শত্রু পক্ষের চালানো হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েল-অধিকৃত সীমান্তের ওপারে গোলান মালভূমিতে পাঁচটি ইসরায়েলি ঘাঁটিতে ‌‌‘‘বিভিন্ন ধরনের ২০০টিরও বেশি রকেট’’ নিক্ষেপ করেছে।
এছাড়াও ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ৮টি অবস্থানে ‘‘বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন’’ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। বিবৃতিতে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী বলেছে, তাদের যোদ্ধারা গোলান মালভূমিসহ সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনের বহর নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার লেবানন সীমান্ত লাগোয়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডজুড়ে এবং গোলান মালভূমিতে রকেট ও বিমান হামলার সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের আন্তঃসীমান্ত সংঘাত বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার মাঝে পশ্চিমে নাহারিয়া থেকে পূর্বে গোলান মালভূমি পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ৯০ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১৭টি সতর্কবার্তা জারি করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন ইসরায়েলি সামরিক চৌকি ও ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্ররা। ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ৯ মাস ধরে চলা সহিংসতায় লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ৮৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলি ১৮ সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাসের শত শত যোদ্ধা। একই সঙ্গে আরও ২০০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সদস্যরা। পরে ওই দিনই গাজায় পুরোমাত্রার যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৯ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ। ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.