ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে মুসলিম বিশ্বের সীমান্ত চায় ইরান

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশ মিলে একটি জোট গঠন করে। এই জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন নামে পরিচিত। ২৭ দেশের এই জোটের রয়েছে অভিন্ন মুদ্রা, জোটের সমন্বিত পার্লামেন্ট এবং দাপ্তরিক ভাষা। এ ছাড়া ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য রয়েছে ভিসামুক্ত যাতায়াত, ব্যবসা, চাকরি ও বসবাসের সুবিধা।
এবার সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে মুসলিম দেশগুলো নিয়েও একটি জোট গড়ে তুলতে চাইছে ইরান। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে যেমন নিজস্ব সীমানা থাকলেও জোটের অন্য সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকরা বাড়তি কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন সেই ভাবনাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন ইরানের সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সরকারি সফরে প্রতিবেশী দেশ ইরাক গিয়ে নিজের এমন স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন পেজেশকিয়ান। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানো এবং পশ্চিমাদের ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নিতে চাইছেন তিনি। তবে পেজেশকিয়ান যে সীমান্তগুলো খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেগুলো চোরাচালান ও চরমপন্থিদের অনুপ্রবেশের হটবেড হিসেবে পরিচিত। সমালোচকরা পেজেশকিয়ানের এমন ভিশনকে অবাস্তব বলছেন।
ইরানের এমন পরিকল্পনার পেছনে দুরভিসন্ধি দেখছেন সমালোচকরা। তাদের ভাষায়, মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ধকল ঠেকাতে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন পেজেশকিয়ান। আবার দীর্ঘদিন ধরে ইরান নিজেই মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে নিজ দেশের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের অর্থনীতিতেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর সীমান্তহীন এই জোট গঠিত হলে মাদক ও অবৈধ পণ্যের চোরাচালান বাড়বে বলে বিশ্বাস অনেকের।
পেজেশকিয়ানের এমন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সাধারণত নিজেদের সীমান্ত নিয়ে বেশ রক্ষণশীল। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় এবং অ-রাষ্ট্রীয় অ্যাক্টরদের দিক থেকে সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে তারা সবসময় তটস্থ থাকে। আবার ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনে বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে মতে অমিলও পেজেশকিয়ানের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে বাধা।
এর বাইরেও প্রতিবেশীদের মধ্যে ইরানকে আস্থা করার অভাব রয়েছে। নিজের ইরাক সফরে গিয়ে সেটা ভালোভাবেই টের পেয়েছেন পেজেশকিয়ান। ইরানের ঋণ মেটাতে ইরাককে যৌথ মুদ্রা চালুর অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইনের সঙ্গে ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। পেজেশকিয়ানের প্রস্তাব জোরালোভাবেই নাকচ করে দিয়েছেন ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.