ইউরোপে খরায় জেগে উঠছে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপে মারাত্মক খরার কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানকার নদী ও হ্রদের পানির স্তর কমছে। পানি শুকিয়ে উন্মোচিত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নও। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইউরোপ।
গ্রীষ্মের রেকর্ড দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের অনেক নদনদী-জলাধার। ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী লয়ারের কিছু জায়গায় এখন পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। এই নদীটি এর আগে কখনো এতটা শুষ্ক হয়নি। ইতালির পো নদীর পানি প্রবাহ তলায় ঠেকেছে। যার প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে।
কয়েক শ বছর ধরে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রাইন নদী। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জাহাজ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে তীব্র খরা বিরাজ করায় ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী দানিউবের পানি শুকিয়ে গেছে।
ফলে সার্বিয়ার নদী বন্দর শহর প্রাহোভোর কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ভেসে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত বাহিনীর আক্রমণে যখন নাৎসি সেনারা পিছু হটে তখন জার্মান নৌবহরের এ জাহাজগুলো দানিউবের তীরে ডুবে গিয়েছিল। এসব জাহাজ বিস্ফোরক-বোঝাই ছিল। দানিউব নদীতে এখন খনন শুরু হয়েছে। এর ফলে ইউরোপের জ্বালানি-শস্যসহ অন্যান্য বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিল্প, পণ্য পরিবহন, বিদ্যুৎ ও খাদ্য উৎপাদনে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইউরোপে এ বছরের খরা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পূর্ব সার্বিয়ার প্রাহোভোর কাছে দানিউব নদীতে ২০টিরও বেশি হাল্ক উন্মোচিত হয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলোতে এখনো অনেক গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া এগুলো জাহাজ চলাচলের জন্য বাধা তৈরি করে আসছিল। জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য অংশেও মাসের পর মাস খরা এবং রেকর্ড-উচ্চ তাপমাত্রা নদীর স্রোতকে আটকে দিয়েছে।
তবে সার্বিয়ায় কর্তৃপক্ষ দানিউবে নেভিগেশন লেন খোলা রাখার জন্য ড্রেজিং করেছে। এদিকে গত মার্চ মাসে সার্বিয়ান সরকার এসব যুদ্ধজাহাজ উদ্ধার এবং গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক অপসারণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করেছিল। যার খরচ ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ডলার।
স্পেনে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরা দেখা দিয়েছে। খরার কারণে পানি শুকিয়ে ‘স্প্যানিশ স্টোনহেঞ্জ’ নামে পরিচিত একটি প্রাগৈতিহাসিক পাথরের বৃত্ত উন্মোচিত হয়েছে। এ কারণে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক আনন্দিত হয়েছেন। কারণ, সাধারণত এ প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শনটি পানির নিচেই থাকে।
প্রাচীন এ পাথরের বৃত্তটি সরকারিভাবে ‘গুয়াডালপেরালের ডলমেন’ নামে পরিচিত। ‘স্প্যানিশ স্টোনহেঞ্জ’ নামে পরিচিত এ পাথরের বৃত্তটি স্পেনের কেন্দ্রীয় প্রদেশ ক্যাসেরেসের ভালদেকানাস জলাধারের এক কোণে সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত হয়েছে। এখানকার স্হানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে যে পানির স্তর ২৮ শতাংশ নিচে নেমে গেছে। এ পাথরবৃত্ত ১৯২৬ সালে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক হুগো ওবারমায়ার।
কিন্তু ১৯৬৩ সালে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর একনায়কত্বের সময় এক গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে এলাকাটি বন্যায় প্লাবিত হয়। এরপর থেকে মাত্র চারবার সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হয়েছে এই পাথরবৃত্ত। রাইন নদীর তীরে তথাকথিত ‘হাঙ্গার স্টোনের’ পুনঃআবির্ভাবও জার্মানিতে অতীতের খরার স্মৃতি আবার জাগিয়ে তুলেছে।
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে জার্মানির বৃহত্তম নদীর তীরে এমন আরো অনেক পাথর দৃশ্যমান হয়ে উঠতে দেখা গেছে। ভেসে ওঠা এসব পাথরে তারিখ ও মানুষের নামের আদ্যক্ষর লেখা রয়েছে। এসব পাথরখণ্ডের পুনরুত্থানকে কেউ কেউ পূর্বের খরার সময় সাধারণ লোকেদের সম্মুখীন হওয়া কষ্টের সতর্কতা এবং অনুস্মারক হিসেবে দেখেন। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.