ইউপি চেয়ারম্যান থেকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার

 

নওগাঁ প্রতিনিধি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ডাক পেয়েছিলেন নওগাঁর কৃতি সন্তান সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের ৪৬ তম আসন নওগাঁ-১ নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার উপজেলার সংসদ সদস্য। এ খবরে উচ্ছসিত তার নির্বাচনী এলাকাসহ জেলাবাসী। জেলার বিভিন্নস্থানে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সরিয়ে প্রথমবারের মতো সদ্য নির্বাচিত খাদ্যমন্ত্রী হয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে তিনি সর্বোচ্চ পদমর্যাদা মন্ত্রীত্ব অর্জন করেছেন। সোমবার বিকেল ৩টা ৪৬ মিনিটে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান।

সাধন মজুমদার ১৯৫০ সালে ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ (স্নাতক) পাশ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ী জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। তবে নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিস পাড়ায় সপরিবারে বসবাস করেন। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। তিনি চার মেয়ে সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সোমা মজুমদার ও তৃতীয় মেয়ে কাদেরী মজুমদার ব্যাংকার, দ্বিতীয় মেয়ে কৃষ্ণা মজুমদার ডাক্তার এবং ছোট মেয়ে তৃণা মজমুদার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে সুখ্যাতি ছিলেন সর্বত্রই। আপামর সাধারণ মানুষের মাঝেও তিনি ছিলেন পরম শ্রদ্ধার পাত্র।

জানাগেছে, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা ছিলেন ধানের ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৮৪ সালে নিজ জন্মভূমি হাজীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ডা: ছালেক চৌধুরীর সাথে নির্বাচিনে পরাজিত হন আওয়ামীলীগের সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা: ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আ’লীগের সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঐক্যফ্রন্টের মোস্তাফিজুর রহমানকে পরাজিত করে তৃতীয়বারে মতো বিজয়ী হন তিনি। এ নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯২ ভোট এবং বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৪ ভোট। অর্থ্যাৎ ৫৬ হাজার ২২৮ ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

জেলার ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি এলাকা হিসেবে পরিচিত নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এ তিন উপজেলা ২০ টি ইউনিয়ন পরিষদ। বছরে একটি মাত্র ফসল বৃষ্টি নির্ভর আমন। তবে খাদ্যের সংকটের চেয়ে পানির সংকট ছিল প্রকট। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এই দুই উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পূর্ণভবা নদী। এ ছাড়াও সাপাহারে রয়েছে ঐহিত্যবাহী প্রায় এক হাজার আয়তনের জবই বিল। পূর্ণভবা নদী ও জবই বিল থেকে প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় দীর্ঘ ১০ বছর সাংসদ থাকায় তার নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এ তিন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সু-ব্যবস্থা, বনায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থায় দৃষ্টান্ত মূলক অবদান রেখেছেন তিনি। সাপাহার উপজেলা ৮৫ শতাংশ এবং পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। সব মিলিয়ে তিন উপজেলায় তিনি নিজের ও নিজ দল আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। দলমত বির্নিশেষে তিনি ছিলেন সকলের ভালবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র।

গ্রামের বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর হলেও পরিবারসহ নওগাঁ শহরের থাকায় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ওই তিন উপজেলার জনসাধারনকে কষ্ট করে শহরের বাড়িতে আসতে হয়। এতে করে দূর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলাবাসীদের। তবে তিনি নওগাঁয় থাকলেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অর্থাৎ বেশির ভাগ সময় উপজেলাগুলোতে সময় দেন। আর তার কাছ থেকে কেউ কিছু খালি হাতে ফিরতে হয় না বলে জানিয়েছে এলাকাবাসীরা।

এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এমপি হয়ে বিগত দিনে তিনি যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন মন্ত্রী হিসেবে আরো উন্নয়ন করবেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.