ইউক্রেনে মাইন অপসারণ করবে রোবট

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কইউক্রেনে মাইন অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রোবট। একটি অমুনাফাভোগী মাইন সরানো প্রতিষ্ঠানকে দুটি রোবটিক কুকুর দিতে সম্মত হয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর চার মাস পেরিয়ে গেছে। এতে দেশটিতে অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব উদ্ধারে কাজ করবে রোবট।
ইউক্রেনে মাইন অপসারণে কাজ করছে হালো ট্রাস্ট। সংস্থাটি গত আট বছরে প্রায় দুই হাজার বিস্ফোরকজনিত ক্ষতির ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে। এতে নারী, পুরুষ ও শিশু সবাই আক্রান্ত হয়েছে।
হালো ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস হুইটলি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দুটি রোবটিক কুকুর দিচ্ছে। বস্টন ডিনামিক্সের তৈরি রোবটটি ‘স্পট’ নামে পরিচিত।
২০১৪ সাল থেকেই ইউক্রেনকে বিস্ফোরক ও ল্যান্ডমাইন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর তা আরও বেড়েছে।
এ যুদ্ধ এখন সীমান্ত এলাকা ছাড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। বিস্তৃত কৃষিক্ষেত্র এবং বনাঞ্চলগুলো এখন বিস্ফোরক দিয়ে ভরা। যে কোনো সময় এসব বিস্ফোরিত হতে পারে।
রোবটিক কুকুর স্পট হালো ট্রাস্টকে দেওয়া হবে কিনা, সে সম্পর্কে বস্টন ডিনামিক্স অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করেনি। প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ডিরেক্টর নিকোলাস নোয়েল বলেছেন, ‘স্পট একটি কার্যকর রোবট। এটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে বিপজ্জনক জায়গায় অনুসন্ধানী তৎপরতা চালাতে পারে।’
মার্কিন সেনাবাহিনীর ফিউচার কমান্ড রোবট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এই রোবট দিয়ে মানুষের সাহায্য ছাড়াই একই ধরনের কাজ বারবার করানোর জন্য প্রোগ্রামিং করা সম্ভব। তবে এই রোবট দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কারণ পূর্বানুমান এবং পূর্বাভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এগুলো প্রোগ্রামিং করা হয়। নতুন পরিবেশে নতুন ধরনের পদার্থের সংস্পর্শে এগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য, সে ব্যাপারে একটা অনিশ্চয়তা আছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের এক গ্রামবাসী বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর আগে আমরা ভালোই ছিলাম। পশু চরাতাম, চাষবাস করতাম। কিন্তু এখন নিজের জমিতেই গরুগুলো নিয়ে যেতে ভয় হয়।’
আরেক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, তাদের পশুর জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে না পারায় সেগুলো জবাই করে ফেলতে হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে হালো ট্রাস্ট স্থানীয় চার শতাধিক নারী-পুরুষকে নিয়োজিত করেছে মাইন অপসারণ কাজের জন্য। যারা এসেছে তুলনামূলক দরিদ্র পল্লী এলাকা থেকে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে তারা এ পর্যন্ত শত শত বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। তারা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ, বিশেষ করে ক্ষতিকর বস্তু সরানোর কাজে ব্যস্ত। এ ছাড়া মাইন ও বিস্ফোরককবলিত এলাকায় সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করছে তারা।
ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর সংস্থাটির কাজের চাপ বেড়ে গেছে। হুইটলি আশা করছেন, স্পট দিয়ে রাশিয়ার ছোড়া গুচ্ছবোমার আবর্জনা পরিষ্কার করা সহজ হবে। সারা দেশেই এগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সাধারণত ক্লাস্টার বোমা যেখানে ফেলা হয়, সেখানে এর অনেক বোমা অবিস্ফোরিত থেকে যায়, যা পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে থেকে যায়। একেকটি ব্যাচে ৫০ থেকে ১০০টি শেল থাকে।
বর্তমানে বুচা ও ব্রোভারি শহরে ট্রাস্টের ১০টি টিম কাজ করছে। যুদ্ধ শুরুর পর ট্রাস্টের ইউক্রেনীয় কর্মীরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। অনেকে মারিউপোল ও দোনবাসের মতো রুশনিয়ন্ত্রিত এলাকায় আটকা পড়েছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, কর্মীসংকটের কারণে ট্রাস্টের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
হুইটলি বলেন, ‘মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে মাইন ও বিস্ফোরক পরিষ্কারের কাজটি করা গেলে আমাদের কাজে গতিশীলতা আসবে। যেখানে মানুষের পক্ষে ঢোকা অসম্ভব, সেই জায়গাগুলোয়ও আমাদের টিম কাজ করতে পারবে।’
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে প্রথম স্পট ব্যবহার করা হয়। দূরবর্তী এলাকা সন্দেহভাজন টার্গেটে অনুসন্ধান কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। (সূত্র: ফরেন পলিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.