ইউক্রেনের দখলে রাশিয়ার ১০০ বসতি, বন্দি ৬০০ রুশ সেনা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যার অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের কাছে একটি ‘বিজয় পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
মঙ্গলবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করা এবং এমনভাবে যুদ্ধটি শেষ করতে হবে, যা ইউক্রেনের জন্য ন্যায়সঙ্গত।’
বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদসংস্থা রয়টার্স।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের তিন সপ্তাহের আক্রমণ এ পরিকল্পনার অংশ। তবে এতে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও আরও কিছু পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জেলেনস্কি তার পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে উল্লেখ করেছেন, তিনি ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ইউক্রনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সফরে তিনি বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের এ অধিবেশনকে পরবর্তী ‘ইউক্রেন শান্তি’ সম্মেলন সফল করতে কাজে লাগাবেন জেলেনস্কি। শান্তি সম্মেলনটি কবে হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে এতে রাশিয়ার অংশগ্রহণ চায় ইউক্রেন।
কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া দেশের সংখ্যা কমেছে বলেও জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উপহাস করে বলেছেন, পুতিন রুশ ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষা না করে ইউক্রেনের ভূমি দখলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন কুরস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার ১০০টি বসতি দখল করেছে বলেও দাবি করেছেন জেলেনস্কি।
চলতি মাসের শুরুতে ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারি অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশের পর এবার বসতি দখলে নেওয়ার দাবি করল তারা। এছাড়া রাশিয়ার প্রায় ৬০০ সেনা সদস্যকে বন্দি করার কথাও জানিয়েছে ইউক্রেন।
এর আগে রুশ ভূখণ্ডের এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল দেশটি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ।
বুধবার পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, গত ৬ আগস্ট সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করার পর থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ায় ১০০টি বসতি দখল করেছে।
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, রাশিয়া অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার সেনা পুনরায় কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন করেছে এবং এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীর চার পাশে ‘প্রতিরক্ষামূলক বলয়’ গঠনের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন সিরস্কি।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের আখমত বিশেষ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলের সুদজা জেলায় অভিযান চালিয়েছে। অভিযানের পর সেখানে তারা একটি কৌশলগত এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। কয়েকদিন আগে এটি ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। এ এলাকাটি ইউক্রেনীয় ফরোয়ার্ড পজিশন থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত। রুশ সেনারা এখন ইউক্রেনের সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম তাস।
সিরস্কি বলেছেন, ইউক্রেন সংলগ্ন সুমি অঞ্চলে গোলাবর্ষণ প্রতিরোধ করার জন্য বাফার জোন তৈরির লক্ষ্যে কুরস্কে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেন। তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনারা সামনে অগ্রসর হচ্ছে এবং ৫৯৪ রাশিয়ান সেনাকে বন্দি করেছে।
সিরস্কির মতে, রাশিয়া অন্যান্য ফ্রন্ট থেকে সেনা সরিয়ে এনে ইউক্রেনের এ হামলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোকরভস্ক ফ্রন্ট থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করেনি রাশিয়া।
সিরস্কি বলেছেন, দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোকরভস্ক ফ্রন্টে পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন’ রয়ে গেছে। এসবের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিজয় পরিকল্পনা উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলেনস্কি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.