আ. লীগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না : রিজভী

ঢাকা প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতুর উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যারা মানুষের স্বাধীনতা হরণ করতে গিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে, তারা তো ফ্যাসিস্ট। আজকে ফ্যাসিবাদ আবারও দেখছি। যেমনটি ছিল ১৯৭৫ সালে। তবে, এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। ইতালিতে যে ফ্যাসিজম ও জার্মানির নাৎসিবাদের আরেক রূপ বাংলাদেশে আওয়ামী বাকশাল বা ফ্যাসিবাদ। তারা ১৪ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা মানুষের ভোট ডাকাতি করে নিশিরাতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বাকশাল করেছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় চারটি বাদে অন্যসব গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগ আবারও ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামের কালো আইন করেছে। এ আইনে মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আজকে গণমাধ্যমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিএনপি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার পক্ষে। বিএনপির শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
‘অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। এখন অনেক গণমাধ্যম দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু সরকার সেগুলোকে ভয়ভীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। যার উদাহরণ—এখন পদ্মা সেতু নিয়ে সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এটাই তো ফ্যাসিবাদ। কই, খালেদা জিয়ার শাসনামলে তো অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে, সে সময় তো এমন ঢাকঢোল পেটানো হয়নি’, যোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘সরকার নাকি নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বরং চীনের কাছ থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে, যার ঋণের বোঝা আমাদের সবাইকে শোধ করতে হবে। আসলে যে টাকা খরচ হওয়ার কথা, তা হয়নি। বরং বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। মূলত এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা করেছেন, তা কেন? সবই তো আপনার নিয়ন্ত্রণে। আপনার এত বাহিনী, এত গোয়েন্দা সংস্থা, তাহলে তারা কী করে? এটাকেই বলে যে, ঠাকুর ঘরে কে রে? আপনার হাতে সবকিছু আর আপনিই দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন! আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বিএনপির মৃত নেতার নামেও মিথ্যা মামলা দেয়। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আপনার লোকেরা কী এমন অঘটন ঘটিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে!’
রিজভী বলেন, ‘আপনার হিংসাশ্রয়ী আচরণ তো এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। আপনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলে দেবেন? নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিকে চুবাবেন। এখন তো পদ্মা সেতুর নাম শুনলেই এখন ভয় হয়। কারণ, শেখ হাসিনা এসব কথা বলে এবং পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছেন। তারা নাকি একেবারে স্বর্গে চলে যাবে।
রিজভী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুর শুরু থেকেই সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। গোটা জাতিকে ঋণে জর্জরিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এখন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে। আর কত হবে, তা বলা যায় না। একটি শিশুও জন্মের পর থেকেই ঋণে জর্জরিত। আমরা ভয়ংকর একদলীয় শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত।’
এ ছাড়া রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ফ্যাসিজমের নতুন রুপে আবির্ভূত হয়েছে। নব্যবাকশাল ’৭৫ সালের চেয়ে আরও ভয়াবহ। আজকে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন না । দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আসলে যে গণমাধ্যম মানুষের পক্ষে স্বাধীনতার পক্ষে সেগুলো সরকার বন্ধ করেছে। তার ওপর নতুন নতুন কালাকানুন করেছে। এ ধরনের কঠোর আইন ব্রিটিশ সরকারও করেনি। কিন্তু, শেখ হাসিনা করেছেন। এটা নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ রূপ।’
সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও শাহাদাত হোসেন বিপ্লবের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন বুলু, কৃষকদলের শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকি, ইয়ূথ ফোরামের অ্যাডভোকেট আজিজুল হাই সোহাগ, কৃষক দলের কাদের সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের রফিকুল ইসলাম (ভিপি মাসুম) ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আমির হোসেন বাদশা প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.