বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি:জুলাই মাসের মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আর মাত্র যে ১০ দিন বাকি আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, ‘যেটা আমাদের বাধ্যবাধকতা বলে মনে করি, সেখানে পৌঁছাতে হলে আজকেসহ আগামী ১০ দিন মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দুয়েকটি বিষয়ে এখনো আলোচনা বাকি আছে। সেজন্য এক-দুইদিন বরাদ্দ করা যাবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতিরেকে অগ্রসর হওয়া যাবে না।’
সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ষোড়শ দিনের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন আলী রীয়াজ।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার সুযোগ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে দলগুলোর সঙ্গে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদেরকে বলতে হবে যে, এই জায়গায় একমত হচ্ছি অথবা হচ্ছি না। আমরা যেহেতু প্রথম থেকেই নোট অব ডিসেন্টের ব্যবস্থা রেখেছি। কেউ কেউ যদি দ্বিমত পোষণ করেন, সেটা পারবেন। সেটা জাতীয় সনদে উল্লেখিত হবে যে এ বিষয়ে আপনাদের দ্বিমত আছে, সে কারণ ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা করেছেন, যদি প্রয়োজন হয় সংক্ষেপে আপনাদের অবস্থান বলুন, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার যাওয়া যাবে না।’
সংলাপে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক দিন আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। যে কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে আমাদেরকে এগুলো এক ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট (সংসদ) হবে কি, হবে না সেটা আপনাদের মতামতের প্রেক্ষিতে কমিশন বিবেচনা করছে এবং আমরা আশা করছি কাল-পরশুর মধ্যে আমরা এক জায়গায় আসতে চাই।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংশোধিক সমন্বিত প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘কিছু কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে হয়ত আপনাদের কিছু পরামর্শ থাকতে পারে। আমরা সেজন্য অনুরোধ করেছি আজকের মধ্যে আপনারা পরামর্শগুলো সংগঠিত করে আমাদের দিলে আগামীকাল সেটা উত্থাপন করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা হবে কিংবা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
যে বিষয়গুলো এখনো আলোচনার বাইরে থেকে গেছে, এই দশ দিনে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক বিষয়ে আপনাদের একমত, দ্বিমত আছে। রাষ্ট্র কাঠামোর ক্ষেত্রে এবং শাসন ব্যবস্থার অর্থে, গভর্নেন্সের অর্থে, যেগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছি, সেগুলো পুনর্বার আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে আটটি বিষয়ে একমত হয়েছি, তার মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টের বিষয় থেকেছে।’
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি একটি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সেই সংগ্রাম অব্যাহত আছে। তারই এক পর্যায়ে আমরা একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে নিপতিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে সমস্ত রকম ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলে মিলে, সব রকম মতপার্থক্য ভুলে একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই জায়গায় এসছি।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গতবছরের রক্তপাত এবং প্রাণনাশ আপনারা মনে রাখুন। সেটাকে বিবেচনা রেখে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। সেখান থেকে পিছাবার কোনো উপায় নেই, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
সেই বিবেচনায় আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা একমত হতে পারলে একমত হব, ভিন্নমত থাকলে থাকবে, যদি অধিকাংশ দল মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে (কোনো প্রস্তাব) বিবেচনায় রাখতে পারব না, সেটা বাদ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান নেই।’
কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আমরা উপস্থাপন করেছি, কিন্তু আমরা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইনি, চাইব না। কিন্তু আমাদের একটা অবস্থান তো অবশ্যই থাকে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেছি অন্যথা এগুলো উপস্থাপন করার প্রয়োজন হত না।
সেগুলো বিবেচনা করে ১০ দিনের মধ্যে এক জায়গায় উপনীত হব, জাতীয় সনদ তৈরি করব। আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারলে এক জায়গায় উপনীত হতে পারব।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ডবদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.