আর্সেনালের কৌশল ‘চতুর কিংবা নোংরা’

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: কখনও সেট পিসে শট নিতে দেরি, কারও পায়ে ক্র্যাম্প, কেউ আবার চোট পেয়ে শুয়ে পড়ে কাতর। এভাবেই চলছিল খেলা থমকে দেওয়ার পালা। ম্যানচেস্টার সিটির জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যখন মহামূল্য, আর্সেনাল তখন বারবার নানা কৌশলে কাটিয়ে দিচ্ছিল সময়।
প্রতিপক্ষের এমন কৌশলে বেজায় চটেছেন জন স্টোনস, বের্নার্দো সিলভারা। এমনকি ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলাও বললেন, আর্সেনালের এমন কৌশলের জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন।
আর্সেনালের সেই কৌশল অবশ্য তাদের জন্য কাল হয়ে উঠেছে। ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা হয়েছিল সাত মিনিট। তাদের সময়ক্ষেপনের পালায় রেফারি আরও বাড়তি সময় খেলিয়ে যান। তাতেই তাদের সর্বনাশ হয়ে যায়। যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে জটলা থেকে সিটির জন স্টোনস গোল করে আর্সেনালের হৃদয় ভেঙে দেন। তুমুল উত্তেজনার ম্যাচটি ড্র হয় ২-২ গোলে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে লেয়ান্দ্রো ত্রোসার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় গোটা দ্বিতীয়ার্ধ ১০ জন নিয়ে খেলে আর্সেনাল। পুরোপুরি রক্ষণাত্মক কৌশল নিয়ে খেলে তারা প্রায় সময় হয়েই যাচ্ছিল। একদম শেষ সময়ে গড়বড় হয়ে যায়।
সবাইকে নিচে নামিয়ে রক্ষণাত্মক ফুটবলের কৌশলে সমস্যার কিছু দেখেন না স্টোনস। কিন্তু সিটির পয়েন্ট পাওয়ার নায়ক ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসে প্রশ্ন তুললেন আর্সেনালের সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়ে।
“আর্সেনাল যেভাবে বারবার খেলা থমকে দেয়, যেভাবে তারা খেলার এই দিকটিকে কাজে লাগায়, খুব বেশি দল তা করে না। তারা খেলাটাকে মন্থর করে ফেলে। গোলকিপার মাটিতে শুয়ে পড়ে, যাতে বাইরে থেকে কিছু তথ্য তারা মাঠে পেতে পারে।”
“এই কঠিন সময়গুলোয় নিজেদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হতো আমাদের এবং আমার মনে হয়, আমরা তা পেরেছি। অনেক কঠিন ট্যাকল ছিল, কিছু ফালতু সিদ্ধান্ত ছিল, তার পরও আমরা ভালো করেছি।”
‘আর্সেনাল কি তাহলে সময় নষ্ট করার কূটকৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছে?’ এই প্রশ্নে স্টোনস সরাসরিই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন মিকেল আর্তেতার দলকে।
“আমি বলব না তারা এটা রপ্ত করে ফেলেছে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা এরকম করে আসছে। আমরা এখন ধরেই নেই যে ওরা এরকম করবে।”
“এটাকে চতুর বলতে পারেন বা নোংরা, যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তবে ওরা খেলা থমকে দেয়, স্বাভাবিক ছন্দ তাতে বিঘ্নিত হয়। তারা এটাকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগায়। তবে আজকে আমরা ভালো করেছি।”
শুধু সময়ক্ষেপণ নয়, ম্যাচের শুরু থেকেই আর্সেনাল নানারকম অপকৌশল বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ বের্নার্দো সিলভার।
“খেলার শুরু থেকেই আমরা দেখেছি যে, এসব হচ্ছে। আমাদের একজনকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়, কারণ ১০ মিনিটের মধ্যে দুই দফায় তাকে ফেলে দেওয়া হয়। প্রথম গোলটি আমরা যখন হজম করলাম, রেফারি তখন আমাদের অধিনায়ককে ডেকে কথা বলছিলেন, এরপর তাকে নিজের পজিশনে ফিরে যাওয়ার সময় দেওয়া হয়নি।”
“দ্বিতীয় গোলটি এমন অবস্থায় হয়েছে, যখন আমাদের গোলকিপারকে ব্লক করে রাখা হয়েছিল, রেফারি সেটা মঞ্জুর করেছেন। এরপর একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, সময় নষ্ট করা হয়েছে।”
শুধু আর্সেনাল বা রেফারি নয়, সিলভা আঙুল তুললেন ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের দিকেও।
“আমাকে যেটা সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, তা হলো, মৌসুমের শুরুতে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা বলেন যে, এই ধরনের পরিস্থিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং এসব হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু দিন শেষে কথাগুলো স্রেফ কথাই থেকে যায়, কোনো কাজ হয় না।”
সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা বললেন, আর্সেনাল এমন কিছু করবে ধরে নিয়েই দলকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন তিনি।
“ওরা এই ধরনের কৌশল বরাবরই বেছে নেয়, আমাদেরকে তা সামলাতেই হতো। আগেও ওরা এরকম করেছে। আমাদের প্রয়োজন ছিল নিজেদের সামলানো এবং আমরা তা করেছি। সত্যিই খুব ভালো করেছি আমরা। ওরা বারবার খেলা থমকে দিয়েছে। আমরা যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছি এবং শেষ পর্যন্ত সৌভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছি।”
টানা চার জয়ে লিগ শুরু করা ম্যানচেস্টার সিটি এখন পাঁচ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল। লিভারপুল ও অ্যাস্টন ভিলার পয়েন্ট ১২। আর্সেনাল চারে ১১ পয়েন্ট নিয়ে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.