আর্তনাদ,পার্ট-১

লেখক- এম রায়হান, শিক্ষার্থী, (রা বি): ইমরোজ, খুব চটপটে এবং দায়িত্বশীল প্রকৃতির একটা ছেলে। সমাজে কোন সমস্যা হলে বা কারোর প্রয়োজনে এগিয়ে আসার মানসিকতা খুব ছোট থেকেই তার। এই কিছু দিন হলো সে জানতে পেরেছে করোনা নামের এক ভয়ানক ভাইরাস চীনের উহান থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে।
এই ভয়ানক ভাইরাস নাকি একজন থেকে অন্যজনেরর কাছে নিমেষেই ছড়িয়ে গিয়ে আক্রান্ত করতে পারে মানুষকে। যার আবার কোন প্রতিষেধকও নেই। যার ফলে বিভিন্ন দেশের জনগণ আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত হুড়হুড় করে। ইতোমধ্যে অনেক দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
আরও কিছুদিন পর সে জানতে পারে তার দেশেও হানা দিতে শুরু করেছে সেই ভয়ানক করোনার থাবা। আতংকিত সমস্তদেশ, আতংকিত আজ জাতি। সেই মহুর্তে আর চুপ করে বসে থকতে পারেনা ইমরোজ। ঝাপিয়ে পরে মানবতার টানে জনসচেতনতায়।
রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার,মসজিদ, পথে-প্রান্তরে সে জনসচেতনতায় অংশ নেয়। সচেতন করতে থাকে জনগণকে এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে। চারদিকে মাইকিং,টিভি, মোবাইল সকল স্থানে বলতে থাকে বেশি বেশি হাত ধুতে,প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যেতে,বাইরে গেলেও মাস্ক পরে যেতে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা!
আমরা তো সেই বাঙালি। যারা প্রতিরোধে নয়,প্রতিকারে বিশ্বাসি।
তাই সমসের চাচারে রোগের কথা বললে বলে: হইচে বা থাম, রোগ আচে সেই কতদূর! তুই আচিস মোক এতো নিয়ম শিখাবা। আল্লাহ মারলে ঘরে ভিতরও মারবি, আবার আল্লাহ্‌ বাচালে এমনিই বাঁচাবি। মুই এতো কিছু করা পারমুনা।
চাচার যুক্তিতে ইমরোজ স্তব্ধ হয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
সারা জীবন নিজের যুক্তিতে জিতে আসা ছেলেটা আজ যুক্তিহীন। কিন্তু এবার তর্ক করলো সে।
আর কিছুদিন পর অবস্থা যখন আরো খারাপের দিকে। তখন ইমরোজ তার মতো কিছু সচেতন যুবক নিয়ে আবার মাঠে নামলো ভিন্ন কায়দায়।
নিজেরা কিছু অর্থ দিয়ে মাস্ক কিনে বিতরনের মাধ্যমে শুরু করলো গনসচেতনতা। বিভিন্ন স্থানে রাখলো সাবান-পানি। জীবাণুনাশক স্প্রে করতে থাকলো পথেঘাটে।
কিন্ত সেই মাস্কটাও ব্যবহার করেনা অনেকে গরম লাগে তাই। সাবান দিয়ে হাত ধোতে হবে তাই অন্য বাস্তা দিয়ে যায় লোকে।
ভয়াবহতা বৃদ্ধির দরুন সরকার বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করছে। বাস্তা-ঘাটে পুলিশ, সেনাবাহিনী জনগনকে জটলা বাধতে নিষেধ করছে।
কিন্তু আমরা সেই বাঙালি! তাই সেনাবাহিনী কিভাবে জনগনকে ঘরে ঢুকাচ্ছে।সেটাই জটলা বেধে দেখতে যাচ্ছি। প্রসাশন জনসমাগম কমানোর জন্য বাজার-ঘাট সিমিত সময়ে করে দিচ্ছে।
তখন সেই বীর বাঙালি বুক ফুলে বাজার করে বাড়ি ফিরতেছে। কারন তারা ধরেই নিয়েছে ঐ সময়ে করোনাভাইরাস ঘুমায়।সুতরাং তাদের কাছে আসার কোন সুযোগ নাই।
হায় রে!! বাঙালি।
এদিকে দেশের এই পরিস্থিতিতে ইন্তেকাল করেছে অনেকেই কিন্তু যানাযায় জনগনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু হঠাৎ মারা গেল এক বিখ্যাত ব্যক্তি সুবহানআল্লাহ! জানাজায় জনগনে রাস্তা ভর্তি।
চ্যানেলে চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ হলো – বিখ্যাত ব্যক্তির জানাজায় লক্ষলোকের পদতলে পিষ্ট হয়ে করোনাভাইরাসেরর মৃত্যু।
মনে একটা সস্তি পেলাম। যাক, এবার বুঝি রক্ষা হলো। কিন্তু কি কান্ড! পরের দিনই করোনাই আক্রান্তের সংখ্যা বেরে দ্বারালো দ্বিগুণে।
আজ সেই ইমরোজের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মারনঘাতী করোনার কাছে হচ্ছে পরাজিত হাজারো আলোকিত প্রাণ।
কিন্তু সেই নির্জন হাসপাতালের বিছানা থেকেও তারা বার বার আমাদের সচেতন করে যাচ্ছে তাদের অবস্থার কথা বলে। তোমরা ঘরে থাকো, সুস্থ্য থাকো।
এক ইমরোজ বলছে: মানুষ যদি বুঝতো করোনায় আক্রান্তের কষ্টের কথা, তবে তারা ঘরের জানালাও খুলতো না।
তাই হাজারো ইমরোজ, সেনাবাহিনী, পুলিশ  আজ নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে জনগনকে যখন বাধ্য হয়ে পিটিয়ে ভিতরে ঢুকানোর চেষ্টা করছে, বাধ্য করছে নিয়ম মানতে।
তখন কতিপয় পন্ডিত মহল আঙুল দেখিয়ে দেখিয়ে বুঝানোর চেষ্টা ইহা খুবই নেক্কার কাজ। আজ তাই ইমরোজের মনে পড়েছে সেই হাইওয়ে এসপির কথা।
তিনি এক কনফারেন্সে বলেছিলেন : আমরা একটা সময় দেখলাম রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাইক দুর্ঘটনা। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সকলের হেলম্যাট নিশ্চিত করার। যাতে তাদের মাথাটা অন্তত বাঁচে।
তাই পরদিন রাস্তায় নামলাম। সকলকে সতর্ক করলাম কাজ হলোনা। কিছুদিন পর জরিমানা করতে শুরু করলাম। দাড় করালাম একজনকে। সে আমাদের দেখে দুর থেকে পরে আসলো। বললাম কি সমস্যা নিয়মিত পরেন না কেন? স্যার, গরম লাগে।বিরক্ত লাগল শুনে খুব। তারপর ভাবলাম পরছে যখন জরিমানা করি না। ছেড়ে দিলাম।
কিছু দুর যে বাইক থেমে আবার খুলে চলে গেল। খুব রাগ হলো। ইতোমধ্যেই দেখি এক যুবক হেলম্যাট ছাড়া খুব হনহন করে আসতেছে। আটকালাম তারে, মেজাজ খারাপ!
করলাম জরিমানা ৫০০ টাকা। উল্টা আমার উপর পিকআপ নিয়ে ফোন দিল নেতার কাছে। জানতে পারলাম নেতার ডান হাত। নেতা বলে দিল ; আমার পোলাপান হেলম্যাট পরছে কি না তাতে তোর কি!! ছাড় তাড়াতাড়ি। মনে খুব কষ্ট পেলাম।
কিছক্ষন পর সব বাদ দিয়ে ব্যথিত হৃদয়ে চলে আসতেছি। দেখি সেই নেতার ডান হাত জোড়ে মোড় ঘোরতে যেয়ে  অ্যাকসিডেন্ট করেছে। গাছের সাথে মাথায় আঘাতে স্পট ড্যাথ। সেদিন খুব আপশোস হয়েছিল- হায় রে! দুর্ভাগা জাতি।  ভালোটা যদি বুঝতি।
তাই আজও যারা ইমরোজ, সেনা,পুলিশ সদস্যরা আপার মাথাটা রক্ষার জন্য জীবনের ঝুকি নিয়ে আপনাকে সতর্ক করছে। তাদের জীবনের কথা নয়।
আপনার, আপনার পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রয়োজন ছাড়া দয়া করে ঘরেই থাকুন।
নিজে সুস্থ্য থাকুন।
দেশকে সুস্থ্য রাখুন।
ইনশাল্লাহ, আমরা বিজয়ী হবো।
লেখক- এম রায়হান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।  #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.