আয়কর দিলে কি মুসলিমদের যাকাত দিতে হয়?

বিটিসি নিউজ ডট কম ডট বিডি

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেন। তখন সে রাষ্ট্রে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে যাকাত সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া আছে।

মদিনায় যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তারপর থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পার হয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। এখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিকরা সরকারকে আয়কর দিচ্ছেন। এ আয়কর হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি।

নাগরিকরা যেখানে সরকারকে আয়কর দিচ্ছেন, সেখানে যাকাত দেয়া কতটা বাধ্যতামূলক? এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক ড: মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলছেন আয়কর দিলেও যাকাত দিতে হবে।

অধ্যাপক ইব্রাহিম বলেন, “আয়কর হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেক্যুলার ট্যাক্স। কিন্তু যাকাত হচ্ছে রিলিজিয়াস (ধর্মীয়) ট্যাক্স। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারটা প্রধান্য দিতে হলে তাকে যাকাত দিতেই হবে।”

তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকলে আয়কর দিতে

হতো না। যাকাত আয়করের বিকল্প হতো। অধ্যাপক ইব্রাহিম বর্ণনা করেন, সম্পদের ‘শুদ্ধতার’ জন্য যাকাত দেয়া অপরিহার্য। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“যাকাত ব্যবস্থা ইসলামী রাষ্ট্রের আর্থিক এবং রাজস্ব সংক্রান্ত বিধান। ইসলামী রাষ্ট্রে আয়করের ব্যবস্থা নাই। ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত ব্যবস্থা,” বলছিলেন অধ্যাপক ইব্রাহিম।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, আয়কর এবং যাকাত- দুটোই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা। তবে পার্থক্য হচ্ছে, যাকাতের ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্র হতে হবে এবং আয়করের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়ার বাধ্যবাধকতার কোন বিষয় নেই।

আয়কর দিতে হয় মোট আয়ের উপর এবং যাকাত দিতে হয় মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে উদবৃত্ত সম্পদের উপর।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ড: শমসের আলী বলছেন, আয়কর দিলেও যাকাত দিতে হবে।

তিনি বলছেন, একটি রাষ্ট্র যদি আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্র হয় তাহলে আয়কর এবং যাকাত – এ দুটো একসাথে দেবার প্রয়োজন হতো না। তখন শুধু যাকাত দিলেই হতো।

“রাষ্ট্র যদি ইসলামিক হয় তাহলে অতিরিক্ত ইনকাম ট্যাক্স (আয়কর) দেয়া লাগতো না। সেটা আগেও দিতো না। তফাৎটা হচ্ছে ওখানে,” বলছিলেন ড: আলী।

ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, ইসলাম ধর্মের দর্শন অনুযায়ী রাষ্ট্রের তরফ থেকে যাকাত আদায় এবং সেটির ব্যবস্থাপনা করার কথা। কিন্তু কোন রাষ্ট্র যদি ইসলামিক রাষ্ট্র না হয়, তাহলে সেখানকার নাগরিকরা নিজ উদ্যোগে তার উদবৃত্ত সম্পদ হিসেব করে যাকাত দেবে।

অধ্যাপক ইব্রাহিম বলছেন, প্রতি বছর ব্যয় নির্বাহের পর কোন মুসলিমের কাছে যদি উদবৃত্ত সম্পদ থাকে তাহলে সেখান থেকে আড়াই শতাংশ হারে যাকাত দিতে হবে। কোন খাতে কী পরিমাণ যাকাত দিতে হবে এবং কারা যে যাকাত পাবার যোগ্য সে বিষয়গুলো ইসলাম ধর্মে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।

ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, গত দেড় হাজার বছরে পৃথিবীতে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাতের মূল দর্শন পরিবর্তন হয়নি।

সেক্ষেত্রে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়কর এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত – এ দুটো ভিন্ন বিষয় হিসেবেই থাকছে।

সূত্র বিবিসি বাংলা।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.