“আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও…”

বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি: অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মঞে থাকার সময় থেকই বৃষ্টি শুরু তারই মধ্যে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পৌঁছালেন তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
মমতা শুরুতেই বলেন, “আমি তৃণমূল কংগ্রেসর কর্মীদের কয়েকটি কথা বলতে চাই। যারা বৃষ্টিতে ভিজেছেন, তাঁরা আমার কথা না শুনে চলে যাবেন না তো? দেখলেন তো, ২১ সে জুলাই বৃষ্টি হয়। ঈশ্বরের কী আশীর্বাদ। বিজেপি কি হাসছিল, ভাবছিল তৃণমূল কংগ্রেসের মিটিংটা বোধহয় নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু তা হয়নি। বিজেপি সব জায়গায় সরকার ভাঙছে। এটাই ওদের কাজ। বাংলায় আমাদের হারানো এর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওরা পারে নি। ২১ কখনও ভুলতে দেয় না। তাই তো বলি আবার ২১ ফিরিয়ে আনো বারবার। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সাস্থ্য সাথী, কৃষক বন্ধু, পেনশন, ভাতা, পাবেন।”
দেউচা নিয়ে মমতা বলেন, “বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমে গিয়েছে। একদিকে কৃষি,একদিকে শিল্প এটা আমার চ্যালেঞ্জ। জোর করে জমি নেব না। দেউচা পাচামির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। দেউচাতে সবচেয়ে ভাল কয়লা পাওয়া গিয়েছে। আগামী ১০০ বছরে বিদ্যুতের অভাব হবে না এই দেউচা হয়ে গেলে।ব রঞ্চ আমরা বিদ্যুতের দাম কমাতে পারব। ১ লক্ষ যুবক-যুবতীর চাকরি হবে দেউচাতে। সেই বিষয়টি জানেন।”
রাজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি কীভাবে বিজেপি গোটা দেশকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন-বিজেপি সব জায়গায় সরকার ভাঙছে। এটাই ওদের কাজ। বাংলায় আমাদের হারানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওরা পারেনি। ২১ কখনও ভুলতে দেয় না। তাই তো বলি আবার ২১ ফিরিয়ে আনো বারবার। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে লক্ষ্মীর ভান্ডার,কন্যাশ্রী, সাস্থ্যসাথী, কৃষক বন্ধু,পেনশন ভাতা পাবেন।
গ্রামে মিউনিসিপালিটিতে যারা আছেন, তাদের বলবো মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে। আজ বিনা পয়সায় চিকিৎসা,সাস্থ্য সাথী,লক্ষ্মীর ভান্ডার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে কী বলছে? পশ্চিমবঙ্গ কৃষকদের রোজগারে প্রথম। আমি গর্বিত। বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমে গেছে। একদিকে কৃষি, একদিকে শিল্প এটা আমার চ্যালেঞ্জ। জোর করে জমি নেব না। দেউচা পাচামির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রামে গ্রামে সংগঠন আরও জোরদার করতে হবে, সে দিকে নজর রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। সে দিকে তাকিয়েই সংগঠনের একেবারে তলার দিকের গঠনকে আরও জোরদার করতে নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় নেতাকর্মীদের কোনও কর্মপদ্ধতিতে যাতে গ্রামে-গ্রামে, ব্লকে-ব্লকে বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রাখতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
মমতা একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বলেন, আমার আজ কর্মীদের প্রতি কয়েকটি বার্তা আছে, আপনারা কেই না শুনে চলে যাবেন না। শুনবেন। তারপরেই একেবারে গ্রাম স্তরে সংগঠনের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেন মমতা। আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, যে খানে ডাকবেন, সংগঠনের কাজে, মানুষের কাছে থাকতে আমি পৌঁছে যাব। মমতা বলেন, আমি চাই আমার দলের কর্মীরা যেন সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরে।
মমতা নির্দেশ দিয়ে বলেন, গ্রামে গ্রামে সাধারণ কর্মীদের সাইকেল নিয়ে ঘুরতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে। আমি চাই বিধায়করা পায়ে হেঁটে এলাকায় এলাকায় ঘুরবেন। আমি চাই আমাদের সাংসদরা রিক্সা করে এলাকায় এলাকায় ঘুরবেন। এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে বসতে হবে। চায়ের দোকানে বসে কথা বলতে হবে, সাধারণ মানুষকে দরকার হলে চা খাওয়াবেন, কিন্তু সেখানে মানুষের পাশে থাকবেন।
পাশাপাশি মমতা বলেন, মনে রাখবেন ব্যক্তি নয়, দল অনেক বড়। দলের কথা সবার আগে ভাবতে হবে। আমি একুশে জুলাইয়ের চাঁদা নিয়ে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। এমন অভিযোগ পেলে চলবে না। কেউ দলের নাম করে কোনও টাকা তুলবেন না। এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। মমতার কড়া নির্দেশ মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখেই বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রাম স্তরে কোনও ভাবে যাতে এই নিয়ে ক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেই কারণেই মমতার এই মন্তব্য বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে আজ জনসভায়; যে এমনটা হবে আশা করেননি কেউই৷ দলনেত্রী স্বয়ং চেয়ে বসলেন মুড়ি৷ “এই কেউ মুড়ি এনেছ? একটু দাও তো৷ গ্রাম-বাংলার এত মানুষ এসেছেন, মুড়ি তো আনবেনই৷” সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে তখন৷ মুড়ি পাওয়া গেল৷ পৌঁছে গেল দলনেত্রীর কাছে৷ না! খাওয়ার জন্য তিনি মুড়ি চাননি বরং এই মুড়ি দিয়েই একুশের মঞ্চ থেকে আঙুল তুললেন নিদারুণ এক সত্যের দিকে৷ মুড়ি দিয়েই প্রতিবাদ জানালেন মুড়ির উপর বসানো জিএসটির৷ এমন ইঙ্গিতবাহী প্রতিবাদ আগে কেউ দেখেন নি৷
মধ্যবিত্তদের কপালে ভাঁজ পড়েছে আবারও। বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে জিএসটি চালু হয়েছে। চাল, ডাল, মুড়িতে আগে কোনও জিএসটি ছিল না। কিন্তু জিএসটি কাউন্সিলের নয়া নির্দেশিকায় মুড়িতে পর্যন্ত বসছে জিএসটি। তারই প্রতিবাদ জানালেন দলনেত্রী৷ “মুড়িতে জিএসটি, মিষ্টিতে জিএসটি, দইতে জিএসটি, লস্যিতে জিএসটি, নকুলদানাতে জিএসটি, বাতাসাতে জিএসটি, বিজেপি মুড়ি খায় না? লোকে কী খাবে? খাব কী আমরা? মানুষ খাবে কী? আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও…” দলনেত্রীর ভাষণে কেঁপে উঠল তিলোত্তমা!
মানুষ সাক্ষি রইল এক অনন্য একুশের৷
ভারী বৃষ্টির সতর্কতা ঘোষণা করেছিল হাওয়া অফিস৷ কিন্তু দলনেত্রীর ভাষণ শোনার সুযোগ ছাড়েননি কেউ৷ তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর, এই প্রথম ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ৷ কার্যত স্তব্ধ বেশ কিছু রাস্তাঘাট। শিয়ালদহ হোক বা হাওড়া৷ শিয়ালদহ স্টেশনে মা-মাটি-মানুষের পতাকা-ফেস্টুন হাতে, স্লোগান মুখে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছেন তাঁরা। সকলেরই মনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখার অদম্য ইচ্ছা৷ একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে প্রবল আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার যেন আরও প্রখর, আরও জোরালো৷
একুশের মঞ্চ মমতাে বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন শ্লোগান “আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও…”
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.