আবহাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে রাজস্ব কমানোর চেষ্টা বনবিভাগের অনিয়মের বেড়াজালে দুবলার শুটকি পল্লী


বাগেরহাট প্রতিনিধি: সুন্দরবনের দুবলার চরে চার মাস পুর্বে শুরু হয়েছে শুটকি মৌসুম। চলতি বছর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সে ক্ষেত্রে রাজস্ব ঘাটতির আশংকা নেই, বলে আশা প্রকাশ করেছেন বনবিভাগ। মাছ ধরা, বাছাই, গ্রেডিং সহ প্রক্রিয়াজাত করণে বর্তমানে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা ।

তবে, চর গুলোতে উন্নত পরিবেশ নানা অব্যবস্থাপনার কারনে মান সম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে, ব্যবসায়ীদের মতে উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদন করা গেলে সরকারি রাজস্ব আরো বাড়বে ।

তবে, রাজস্ব ফাঁকি দিতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারি সাগরে মাছ নেই এমন অসত্য বিষয় বলে আসলেও চলতি বছরে তার চিত্র বিপরীত । এছাড়া বন বিভাগের রেকর্ড অনুসারে শুটকি পল্লীতে প্রায় ১৬ হাজার জেলের থাকার জন্য ৭১৭টি, মহাজনদের ৩৫টি বসতঘর ও মৎস আহরন কাজে ৮৫০ টি নৌকার অনুমোদন দিয়েছেন । তবে, প্রতিটি ঘর ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ অনুসারে তৈরীর নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তার ভিন্নতা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক জেলে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অসাধু বনকর্তারা জেলে ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধার সুযোগ নিয়ে ৭১৭টি জেলে ঘরের স্থানে প্রায় ৮২০টি, মহাজনদের ৩৫টি ডিপোর স্থানে রয়েছে প্রায় ৫০টি, ৮৫০টি নৌকার অন ুমোদন কাগজ কলমে দেখালেও রয়েছে ১ হাজারেরও বেশী এবং ২৮ফিট দৈর্ঘ্য ও ১২ফিট প্রস্থ ঘরের মাপ নিয়মে থাকলেও তার বাস্তবে কোন মিল নেই।

এমনকি, দুবলারচর শুটকি পল্লীর প্রায় ১৬ হাজার জেলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এতে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন। এছাড়া জেলেদের প্রতিটি নৌকার বিএলসি জন্য জমা দিতে হয় ২ হাজার টাকা কিন্তু পাশ( অনুমতি) সহ সরকারি রাজস্ব জমা হয় ১’শ৬০ টাকা থেকে ১’শ ৭০ টাকা এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে জেলেদের শুটকীর পরিমাপ করিয়া সঠিকভাবে রাজস্বের নামে টাকা আদায় করলেও পরবর্তীতে সরকারী খাতে উক্ত টাকার অর্ধেক জমা হয়।

জানাগেছে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর ও নারকেল বাড়িয়ার চর সহ অন্যান্য চরে গত চার দশক ধরে চলছে দুবলা শুঁটকি পল্লী। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস চালু থাকে শুঁটকি তৈরীর এ মৌসুম।

এতে উপকুলীয় এলাকার খুলনা, সাতক্ষীরা, শরণখোলা, বাগেরহাট, মোংলা, রামপাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্্রবাজার, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী সহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী দুবলায় শুঁটকি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । পরিচয় গোপনরাখার শর্তে, শুটকি পল্লীর কয়েক জন মহাজন ও জেলে বলেন, দুবলায় কর্মরত কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে নানা ভাবে অনিয়ম চালাচ্ছেন। কোন ধরনের বনজ সম্পদ ব্যাবহারের নিয়ম না থাকলেও অস্থায়ী বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে তা ভঙ্গ করেছেন জেলে ও তাদের মহাজনরা। এছাড়া পল্লীতে অবস্থানরত কয়েক হাজার জেলে তাদের দৈনন্দিন কাজে বনের নানা প্রজাতির গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন ।

এতে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সুন্দরবন । রাজস্ব ছাড়াও ব্যাবসার তহবিল অনুসারে ৩/৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয় ব্যাবসায়ীদের। এ সকল ক্ষেত্রে কোন রিসিপ দেন না বন বিভাগ। পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে চলতি মৌসুমে রাজস্ব কম দেখানোর চেষ্টা করছেন দুবলায় কর্মরত বন বিভাগের অসাধু কর্তারা।

সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অনিয়মের বিষয় গুলো আমার জানা নেই। অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

এ ব্যাপারে, দুবলা টহলফাড়ীর ইনচার্জ অশিত কুমার রায়ের কাছে জানতে চাইলে, নানা অনিয়মের কথা অস্বীকার করে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চলতি মৌসুমে এখানে নিয়মের বাহিরে কোন কিছুই করা হয়নি এবং জ্বালানী ব্যবহারের জন্য জেলেরা ডিএফসি পাবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে রাজস্ব ঘাটতি হবে না।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.