আদিবাসীদের বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং জমি দখলের প্রতিবাদে নগরীতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা টংপাড়া গ্রামে শতবর্ষপূর্ব থেকে আদিবাসী রাজোয়ার পারিবার বসবাস করে আসছে। এখনো সেখানে ৩৫টি পরিবার বসবাস করছেন। তারা স্বাধীনতার সময় দেশকে বাঁচানোর জন্য অন্যান্য সম্প্রদাােয়র সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।

সে সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হামলায় প্রানভয়ে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পার্শবর্তী দেশে আশ্রয় নেন। স্বাধীনতার পর তারা পূণরায় দেশে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর থেকে তারা হিন্দু, মুসলিম সবাই মিলে একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৪ সাল থেকে এলাকার প্রভাবশালী, জমি জালিয়াতি ও দখলবাজ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিদের দ্বারা তারা প্রতিনিয়তই জীবন নাশের হুমকিতে বসবাস করছে এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার মত নানান ঘটনা ঘটছে।

এনিয়ে আজ বুধবার রাজশাহীর সাহেব বাজারের একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে অত্র গ্রামের লোকজন জীবন, জমি ও সবত ভিটা রক্ষাতে এ কটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আদিবাসী মুক্তিমোর্চার চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ মাহাতো। লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন বসবাসরত জমি যার হাল দাগ ৭২৬ ও ৭২৭ আরএস রেকর্ড অনুযায়ী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার টিকাপাড়ার গোলাম খালেক চৌধুরী নাম উল্লেখ আছে।

সিএস এবং এসএ রেকর্ড অনুযায়ী এই সম্পত্তি ওয়াকফ ষ্টেটের। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের সম্পত্তি। ওয়াকফ ষ্টেটের মালিকগণ বা গোলাম খালেক চৌধুরীর ওয়ারিশগণ বা সরকার কোন দিনও এখানে এসে জমির মালিকানা দাবি করেননি।

এখানে আরো উল্লেখ করা হয় ২০১৪ সারেল ২১ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, সরদারপাড়া গ্রামের মৃত-তোফাজ্জল হোসেন ছেলে তরিকুল ইসলাম (টি ইসলাম) উক্ত জমি তার বলে দাবি করেন এবং আনুমানিক বেলা ২.৩০ টার দিকে ১টি বাস ও ১ টি ট্রাকে ভাড়া করা প্রায় ২০০ জন ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, রামদা, লাঠি সোটা নিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙ্গতে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে এই সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ এর চেষ্টা করা কালে আদিবাসীসহ স্থানীয় জনগন প্রাণপনে বাধা দিলে তরিকুল ইসলামসহ তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

পরেরদিন সকাল ৯.৩০ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় তরিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য মামলা করতে গেলে সেই সময়ের দায়িত্বে থাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের মামলা গ্রহন করেনি। পরপর কয়েকবার মামলা করতে গেলেও থানা একটিও মামলা গ্রহন করেনি। বরং তরিকুল ইসলাম ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীরা একের পর এক আমাদের উপর এবং যে সকল মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিলো তাঁদের উপর উপর্যপুরি জিআর-৫৭৫/১৪, ৫৪০/১৪, ৬২০/১৪, ১৮৬/১৫, সিআর ৪৪/১৫, ৬১৭/১৬ এবং ৬৩২/১৬ মামলা করেন।

শুধু এখানেই তারা থেমে নেই ২০১৬ সালে আগস্ট মাসের ১৪ তারিখ রাত আনুমাসিক ২টার দিকে পুনরায় গ্রামের এসে বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী বুঝতে পারে। এতে তারা বাড়িতে আগুন না দিয়ে তাদের মাছ চাষের পুকুরে বিষ দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে সেদিন প্রায় ৫,০০,০০০(পাঁচ লক্ষ) টাকা ক্ষতি হয় । সাংবাদিকরা আমাদের এই ঘটনার সাংবাদ নিতে আসলে দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন দিলু, দৈনিক খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রউফ, প্রথম আলোর বন্ধু সভার সহ-সভাপতি আলিউজ্জামানকে গুন্ডা তরিকুলের বাহিনীরা পিটিয়ে জখম করে। যা পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়।

এরপর থেকে প্রতিনিয়ত তরিকুল তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে তাদের নির্যাতন ও উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। ২০১৭ সাঔের তারা গ্রামবাসীর উপর আক্রমন করে এবং মহিলাদের শ্ল্রীলতা- হানির চেষ্টা করে। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে ১৫ জন নারী পুরুষ আহত হয় । এই ঘটনায় আমরা মামলা করতে গেলে থানা মামলা গ্রহন করেনি । বরং তারাই আবার মামলা করে মামলা নং জিআর ৩৩৬/১৭, ২৮০/১৭, ৩৮৫/১৭ ও ৩৮১/১৭ । সেই সময় প্রত্যেক দিন ৩/৪ টি মোটরসাইকেলে তাঁর ভাড়াটিয়া গুন্ডারা আদিবাসীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াত। তাদের ভয়ে আমরা বাহিরে কাজে যেতে পারতাম না । চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোটে মামলায় হাজিরা দিতে গেলে মারার হুমকি প্রদান করে।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, গত ৪ মাস ধরে নোবেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর জন্য বিশ্বের মানুষ যখন লক ডাউনে তখন ভূমিদূস্যু টি ইসলাম আবারো আমাদের ভুমি থেকে উচ্ছেদের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গত মে মাসের ৫ তারিখ তরিকুল ইসলামের গুন্ডা বাহিনী হাবু, নেজাম, রাসেল রাব্বানী, আব্দুল্লাহ, পিতাঃ রাব্বানী, রাহাদ, ফরহাদ, সাকিব, বাবু, সেতু, সোহেল ও পাপুলসহ আরো ২০ জনের সন্ত্রাসীরা অনুমানিক সকাল ৯টায় পাড়ায় হামলা চালিয়ে কাঞ্চন রাজোয়াড়কে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং নারীদের শ্লীলতাহানী ও পুরুষদের মারপিট করে। পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এ নিয়ে গতমাসের ৬ তারিখ ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদ, আমনুরায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সার্কেল এর সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উভায় পক্ষের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ পুকুরে মাছ ছাড়া ও মাছ মারা থেকে বিরত থাকবে। তবে আদিবাসীরা পারিবারিক কাজে পানি ব্যবহার করতে পারবে। তারপরও উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ এক্ি মাসের ২২ তারিখ তাদের সমাজের ব্যবহৃত একটি ঘর এবং আমাদের ব্যবহারের পায়খানা তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয় পাড়ায় প্রবেশ করে শ্রী নিমচাঁদ রাজোয়াড়কে বাড়ী ভাঙ্গতে বলে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সার্কেলকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। এ বিষয়েও থানা মামলা নেয়নি বলে জানান তারা।

জুন মাসের ২৫ তারিখ আদিবাসী নেতা ও সংগঠক বিশ্বনাথ মাহাতো ও বঙ্গপাল সরদারকে সময় আনুমানিক সকাল ৯.২০ টায় তরিকুল ইসলাম এর হুকুমে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হাবু, আয়নাল, , শরিফুল, , রাসেল , রাহাদ পিতা হাবু খালেক তাদের সবার বাড়ি আমনুরা টংপাড়ায়। তারা ধারালো হাসুয়া ও রড নিয়ে মোটর সাইকেলে তাদেরকে ধাওয়া করে। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আমনুরা টু নাচোল রাস্তার ফুলকুড়ি মোড়ে আজাদ আলীর কাঠের দোকানের সামনে দাঁড়ালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিশ্বনাথ মাহাতো ও বঙ্গপাল সরদারকে আঘাত করে। এ বিষয়ে জুনমাসের ৬তািরখ থানায় এজাহার দিলেও তার চলতি মাসের ২ তারিখ নাচোল থানা মামলা গ্রহণ করে। হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং হামলা করার জন্য আবারো তৎপর হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

গত ৭ বছর ধরে তরিকুল ইসলাম জমি জবরদখল করতে মিথ্যা, হয়রানি, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা আর আমাদের উপর হামলা করে চলেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় ১৫(পনের)টি মিথ্যা, হয়রানি, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছে যা নিরাপত্তাভাবে দেশে বসবাস করা আমাদের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা দিন মুজুর, কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। নিরাপত্তাহীনতা আর মামলার কারনে কাজে যেতে পারিনা। তাঁদের ভয়ে শিশু এবং মহিলারা নিরাপত্তাহীনতাই ভূগছে। সন্ত্রাসী ও দাঙ্গাবাজ কর্মকান্ড করলেও আমরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে থানায় বারবার মামলা করতে গেলে থানা আমাদের একটিও মামলা গ্রহন করেনি।

তরিকুল ইসলাম ও তাঁর গুন্ডাবাহিনী আমাদের বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে একের পর এক হামলা আর মামলা করে যাচ্ছে। আর থানা যাচাই বাছাই না করে মামলা গ্রহণ করছে। কয়েকজন পুলিশের এরুপ আচরন এর কারণে আমরা দারিদ্রসীমার চরম সীমায় পৌছে গেছি এবং জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। আর কিছুদিন চলতে থাকলে জীবনের ভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে হবে।

এ বিষয়ে ২৭-৫-২০২০ তারিখে পুলিশ সুপার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ২৪-৬-২০২০ তারিখে বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বিভাগ ও ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জকে লিখিত অভিযোগ দিলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ হতে এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন তারা । এর প্রতিবাদে চলতি মাসের ২০ তারিখ চাপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন করবেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ও কন্দ্রেীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিমু মুর্মু, উন্নয়নকর্মী বঙ্গপাল সরদার, গ্রামবাসী কুটিলা রাজোয়ার ও করুনা রাজোয়ারসহ অত্র গ্রামের অনান্য জনগণ এবং আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ ফজলুল করিম (বাবলুরাজশাহী। # 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.