আদমদীঘিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহি চৈত্র সংক্রান্তি চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত


আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি : আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) বগুড়ার আদমদীঘিতে সনাতন ধর্মাম্বলি সম্প্রদায়ের চৈত্র সংক্রান্তি চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের পঞ্জিকামতে বাংলা বছরের সমাপনী মাসের শেষ দিন ৩০চৈত্র এই চড়ক ঘুড়ানো পুজা করা হয়। এই দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে।
বাংলা ৩০ চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে আদমদীঘির মাঝিপাড়ায় ঐতিহ্যবাহি চড়কতলা মন্দিরে যুগযুগ ধরে চড়কঘুরানো, পুজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) আদমদীঘি উপজেলা সদরের মাঝিপাড়ায় চড়কতলা মন্দিরের সামনে চড়কঘুরানো ও মেলা বসেছে।
মন্দির ও চড়কপুজা আয়োজক কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা জমিদার পরিবারের প্রবীন ব্যক্তিত্ব বাবু শিবেশ চন্দ্র নিয়োগী ভ্যানু বাবু ও শ্রী কাঞ্চন সরকার জানায়, তাদের মতে বাংলা সনের শেষ মাসের নামকরন করা হয়েছে-চিত্রা-নক্ষত্রের নামনুসারে আদিগ্রন্থ পুরাণে বর্ণিত রয়েছে-২৭টি নক্ষত্র আছে যা রাজা/প্রজাপতির দক্ষের সুন্দরী কন্যার নামানুসারে নামকরন করা হয়।
হিন্দু ধর্মে কথিত মতে মহা ধুমধামে চন্দ্রদেবের সংগে বিয়ে হলো দক্ষের ২৭কন্যার। দক্ষের এক কন্যা চিত্রার নামনুসারে চিত্রানক্ষত্র এবং চিত্রানক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরন করা হয়। আর হিন্দু সম্প্রদায়ের চৈত্র মাসের অন্যতম প্রধান উৎসব চড়কপুজা।
বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা সদরের মাঝিপাড়া মন্দিরে ৭শত বছরের অধিক কাল ধরে চৈত্র সংক্রান্তিতে ভক্তের পিঠের চামড়ায় লোহার বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হয়ে আসছে। এই চড়ক ঘুরানো দেখতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য ধর্মাম্বলির হাজার হাজার শিশু কিশোর, নারী ও পুরুষের সমাগম ঘটে।
চড়কপুজা উপলক্ষে গত ১৯চৈত্র চড়কতলা মন্দিরে ঘটস্থাপন পূজা করে পূজার কার্যক্রম শুরু করে ২৯চৈত্র পর্যন্ত ঘটস্থাপন পূজা করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ফুলভাংগান পূজা, নাগরাকাটা পূজা, কালী পূজা ও ভড়ন খেলা, শ্বশ্মান খেলা বৃক্ষস্বরী, শিতলা ও শিবপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ২৯ চৈত্র প্রতিটি মন্দিরে প্রদীপ প্রজ¦লন করা হয়। আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে চড়কপুজা করে লম্বা চড়ক গাছের খুঁিটতে বাঁশ বেধে তাতে দড়ি ঝুঁলিয়ে চড়ক গাছ তৈরী করে একজন ভক্তের পিঠের চামড়ায় লোহার বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হয়েছে। সন্ন্যাশি শ্রী মদন বিশ্বাস তান্ত্রিকমন্ত্র দিয়ে দুইটি লোহার বড়শি পিটের চামড়ায় ফুটিয়ে দেন শ্রী খোকন বিশ্বাসকে। এরপর প্রায় ৩০ফিট উচ্চতা সম্পন্ন স্থাপন করা ওই চড়ক গাছে উঠিয়ে খোকন বিশ্বাসকে ঘুরানো হয় প্রায় আধা ঘন্টা। ঘুরানোর সময় চলে ধ্বনি উলুধ্বনি। চড়কপুজা ও মেলাকে ঘিরে হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি পরিবারের মধ্যে মেয়ে জামাইসহ বিপুল আত্মীয় স্বজনদের সমাগম ঘটানো হয়েছে।
এই চড়ক মেলায় হাজার হাজার টাকার চুরি ফিতা, মিষ্টিসহ নানা সামগ্রি বেচাকেনা চলে। পরদিন রোববার বসবে বৌ মেলা।
চড়ক পুজা দেখতে আসা কিশোর আব্দুস সবুর, ফিরোজ হোসেন জানায়. তারা গত দুই বছর ধরে এই মেলায় আসছে। মেলায় আসার সুবাদে কেনাকাটা ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হচ্ছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.