আটোয়ারীতে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে দিলেন এক বিচারক!


আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে আটোয়ারীতে পুলিশের উপস্থিতিতে বিচারকের (জজ) বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও শ্রেনীকক্ষ ভেঙ্গে দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে এক বিচারকের বিরুদ্ধে।
বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালের জজ শরনিম আকতার পাপড়ি ও আটোয়ারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রাধানগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দখলে থাকা জমির উপর নির্মিত সীমানা প্রাচীর ও একটি শ্রেনীকক্ষের চার ফিট ওয়াল ভেঙ্গে দিয়ে দখল করে নেয়। অদৃশ্য কারণে এ সময় পুলিশও ছিল নির্বিকার।
তিনি তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে। এই নোটিশে উল্লেখ ছিল ১৫ দিনের মধ্যে স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। এই নোটিশে কোন দিন তারিখ উল্লেখ ও আইনগত ভিত্তি নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ ।
ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শনিবার সকালে মানববন্ধন করতে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এটা করতে দেয়নি।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সালে ওই জজের পিতা তসলিমউদ্দিন প্রধান ও মাহাবুব রহমানের দানকৃত জমিতে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। তসলিমউদ্দিন প্রধান বিদ্যালয়ের নামে জমি রেজিস্ট্রশন করে না দিলে, তার মেয়ে সুকৌশলে ২০১৪ সালে তার ও ভাইদের নামে দানপত্র রেজিষ্ট্রি করে নেন।
গত ২৫ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ২৮ শতক জমির মধ্যে ২০.৫ শতক বদল করে বাকী ৪.৫ শতক জমি বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেষে দিতে সমঝোতা হয়। বাকী তিন শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করার কথা স্বীকার করেন শরনিম আকতার।
পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জমি দিতে না চাইলে শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালের জজ শরনিম আকতার পাপড়ি প্রধান শিক্ষককে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে বসিয়ে রাখেন। এদিকে আটোয়ারী থানা পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরসহ নবম শ্রেনীর কক্ষটির কয়েক ফিট ভেঙ্গে ফেলেন।
তবে পুলিশের চোখের সামনে অন্যায় হলেও কোন কিছু বলেননি তারা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টির পাশে প্রধানপাড়ায় তার গ্রামের বাড়ি।
বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শহরের হাজীপাড়া এলাকায় বসবাসকারী তসলিম উদ্দিনের মেয়ে বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের জজ ও আটোয়ারী পুলিশের উপর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ।
তবে অবৈধভাবে প্রাচীরসহ শ্রেনীকক্ষ ভেঙ্গে জমি দখলের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোথাও কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে শনিবার এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করার প্রস্তুতি থাকলেও দুইদিন সময় চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলামকে ওই জজের পিতা তসলিমউদ্দিন মুঠোফোনে বিষয়টি বড় না করার জন্য বলেন। এজন্যই অপক্ষো করছি বলে জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, একটা সমঝোতা হয়েছে ঠিক। কিন্তু উনি নিজের জমি দাবী করে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও একটি শেণিকক্ষের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেন পুলিশের উপস্থিতিতে। উনার বাবা এই জমিটি বিদ্যালয়কে দান করেছিলেন কিন্তু রেজিস্ট্রি করা হয়নি। উনার নামে নাকি এই জমিটা দানপত্র করা হয়েছে। এটার সুযোগ নিয়ে তিনি এটা করেছেন। তবে দুই দিনের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার কথা থাকায় মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
পুলিশের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষসহ প্রাচীর ভাঙ্গার বিষয়ে আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মেহেদী হাসান মুঠোফোনে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ‘আমাদের কাছে চিঠি আছে ওই জেলা জজকে নিরাপত্তা দেয়ার। এ জন্যই পুলিশ সেখানে ছিল। দেয়াল ভেঙ্গে বিদ্যালয়ের জমি দখলের জন্য পুলিশ জড়িত নয়। তবে ক্যামেরায় কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি’।
বিদ্যালয়ের প্রাচীরসহ শ্রেনীকক্ষ ভেঙ্গে জমি দখলের বিষয়ে বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালের জজ শরনিম আকতার এক কর্মচারীর মুঠোফোনের মাধ্যমে ওটা নিজের জমি দাবি করে জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করার পর প্রাচীরসহ শ্রেনীকক্ষের চারফিট ভাঙ্গা হয়েছে। নতুন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য আমি ২৫ হাজার টাকাও দিতে চেয়েছি। পরে তিনি রবিবার সকালে মুঠোফোনে একই কথা বলেন।
তিনি বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা চুক্তি ও নোটিশ দিয়ে এটা করা হয়েছে। তারা অনেক কিছু হাইড করেছেন। তসলিমউদ্দিন প্রধানের স্ত্রী আক্তারা বানুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখন তাঁর (তসলিম উদ্দিন) স্মৃতিভ্রম হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারেন না। এই মুঠোফোনে তার মেয়ে শরনিম আকতার আবার একই কথা বলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুল ইসলাম জানায়, বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, আইনের মানুষ হয়ে কিভাবে তিনি বিদ্যালয়ের প্রাচীরসহ শ্রেনীকক্ষ ভেঙ্গে ৪ ফিট জমি নেয়? উনি যে প্রক্রিয়ায় গেছেন। এটি আসলে ঠিক হয়নি। আশা করছি দুই দিনের মধ্যে বিষয়টির সমাধান করা হবে। এজন্যই অপেক্ষা করছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি মোঃ লিহাজ উদ্দীন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.