আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে আবারও জেলা বাজেট প্রণয়নের দাবি : বাদশা

বরিশাল ব্যুরো: দেশে বিরাজমান আঞ্চলিক ও শ্রেণি বৈষম্য দূর করতে বন্ধ হয়ে যাওয়া জেলা বাজেট কাঠামো সংষ্কারের মাধ্যমে আবারও চালু করার দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে দলের বিভাগীয় এক সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই দাবি তুলেন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দেশের সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে বিশেষ শ্রেণির কাছে।

বিরাজমান বৈষম্য কমাতে হলে আঞ্চলিক খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে অংশগ্রহণমূলক জেলা বাজেট প্রণয়ন জরুরি।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে জেলাভিত্তিক বাজেট ঘোষণার প্রধান অন্তরায়। এগুলো নিরসন করে জেলাভিত্তিক বাজেট ঘোষণা করতে হবে। এটি কার্যকর করার লক্ষ্যে কাঠামো সংস্কারের বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শ্রেণি বৈষ্যমের চিত্র চরম হতাশাজনক মন্তব্য করে রাকসুর এই সাবেক ভিপি আরও বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে বহু বছর আগে। সুদীর্ঘকাল পরও এ দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। বস্তুত দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হলেও শ্রেণি বৈষম্যের চিত্রটি চরম হতাশাজনক।

অথচ স্বাধীনতার পরপরই প্রণীত দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির একটি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে ধরা হয়েছিল। সংবিধানে সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা থাকলেও দেশে এমন এক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান যেখানে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য না কমে বরং তা বেড়েই চলেছে। শ্রমিক শ্রেণি তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না, ধনিক শ্রেণি শ্রমিকের শ্রম শোষণ করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। কৃষককে বীজ, সার ও ঋণ দিয়ে সহায়তা করা হলেও তাদের ফসলের নায্য মূল্য নিশ্চিত হচ্ছে না।

রাজশাহী সদর আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলবে। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা জানাতে চাই- দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। কালো টাকার যারা মালিক তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে।

দেশের টাকার প্রকৃত মালিক আমাদের জনগণ। যেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের আরও অগ্রগতি সম্ভব ছিলো সেই টাকা পাচার ও দুর্নীতির কারণে দেশের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু এই টাকা পাচার ও দুর্নীতি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। তাই জননেত্রী শেখ হাসিাকে বলতে চাই, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়ে থেমে গেলো এটি হতাশাজনক! শুধুমাত্র আপনার নির্দেশেই এই দুর্নীতিবাজদের সামনে আনা সম্ভব।

তাই সেটি আবারও চালু করে শুধু ঢাকায় নয় দেশের প্রতিটি জেলায় পরিচালনা করার আহ্বান জানাই। ওয়ার্কার্স পার্টিতে স্বাধীনতা বিরোধী কোন শক্তি নেই দাবি করে বাদশা বলেন, আমরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি। আমরা রাজাকার নই, আমাদের দলেও কোন রাজাকার নেই। অন্যান্য দলকে দেখি, তারা দল ভারি করতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন।

যোগদান কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতকে দলে ভেড়ান। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টিতে সেই সুযোগ নেই। কারণ আমাদের দলে আসতে হলে তিনটি স্তর পেরিয়ে সভ্য পদ গ্রহণ করতে হয়। সুতরাং আমরা রাজাকারদের লালন-পালন করি না। যেই স্বাধীনতা বিরোধীদের উৎক্ষাত করতে আমরা ঐক্য করেছি, লড়াই করেছি তাদের সাথে অন্যরা আপোষ করলেও ওয়ার্কার্স পার্টি কখনো আপোষ করবে না। নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুতও হবে না।

এ সময় তিনি বরিশাল বিভাগের সকল দলীয় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে পাশে থাকার নির্দেশ দেন। এর আগে দলের নেতাকর্মীরা বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে লাল পতাকার মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে আসতে থাকেন। পরে দুপুর ৩টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান আল মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.