আজ যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতায় এসেছেন দু’বছর হয়ে গেল। তা হোয়াইট হাউসে কেমন কাটল ডোনাল্ড ট্রাম্পের? জনগণই বা কতটা সন্তুষ্ট তার শাসনকার্যে? উত্তর মিলবে আজই। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন। যার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।

মার্কিন শাসনব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ওই পদের মেয়াদ চারবছর। প্রতি চারবছর অন্তর সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। তাতে যিনি জয়ী হন, দু’বছরের মাথায় আর একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। সেটিকেই মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে মানুষের কী ধারণা, তার কাজকর্ম পছন্দ হচ্ছে কিনা, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কতটা, এই নির্বাচনেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। তাতে বিপুল ভোটে জয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একটা অংশের কাছে যা অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ রিপাবলিকানদের তরফে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত— একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু ৯ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর সব হিসাব পাল্টে যায়। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়ী হন ট্রাম্প।

তারপরেও বিতর্ক থামেনি। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেয়ার পরই অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি করেন। স্বাস্থ্য বিল হোক বা কর্মক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা নারীদের সুযোগ-সুবিধা, একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন। পর্ন তারকার সঙ্গে তার পুরনো কেচ্ছাও সামনে চলে আসে। তবে হাজার বিতর্কের মধ্যেও মার্কিন রাজনীতিতে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেন ট্রাম্প। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, এককালে তাকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত রিপাবলিকানরা এখন তারই গুণগান করে বেড়াচ্ছেন। একসময় মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার বিরোধিতা করেছিলেন যারা, এখন তারমধ্যেই রাজনৈতিক ফায়দা দেখছেন তারা। তাই ডেমোক্র্যাটরা সবরকম চেষ্টা চালালেও, তারকাদের নিয়ে ‘ট্রাম্প হটাও’ আন্দোলনে নামলেও, জনগণের রায় তাদের পক্ষে যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস রিপাবলিকানদের।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভদের ৪৩৫ এবং সিনেটের ১০০টির মধ্যে ৩৫টি আসনে মঙ্গলবার নির্বাচন হবে। এ ছাড়াও নির্বাচন হবে ৩৬টি গভর্নর পদ এবং ছয় হাজার প্রাদেশিক আইনসভা আসনেও। প্রতি জোড় সংখ্যার বছরে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভদের সবক’টি আসনেই নির্বাচন হয়। আর সিনেটের নির্বাচন হয় ছ’বছর অন্তর। দু’বছর অন্তর মার্কিন সিনেটের এক তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়।

রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটস দু’পক্ষই কয়েক মাস আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে প্রচারে নামিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন প্রচুর তারকা এবং বিখ্যাত ব্যক্তিরাও। তবে রিপাবলিকানদের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্পই সর্বেসর্বা। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগেও প্রচারে গিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা যদি কমপক্ষে একটি হাউসেরও দখল নিতে পারেন, তাহলেই রাস্তা অনেকটাই প্রশস্ত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ে এই মুহূর্তে আশাবাদী তারা। কারণ ইতোমধ্যেই সেখানকার ১৯৫টি আসন তাদের দখলে। সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপালিকানদের দখলে রয়েছে ২৪০টি আসন। তাই আর ২৩টি আসনে জয়ী হতে পারলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে ডেমোক্র্যাটরা। তবে তা খুব একটা সহজ হবে না বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাদের দাবি, সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৫০টিই রিপাবলিকানদের হাতে চলে গেছে। এ বারে মাত্র ৩৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, যার মধ্যে ৯টি এতদিন রিপাবলিকান প্রার্থীদের দখলেই ছিল। ২৪টি ছিল ডেমোক্র্যাটদের।আর দু’টিতে নির্দল প্রার্থী ছিলেন। নির্দলীয় প্রার্থীরা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে গেলেও, সেখানে রিপাবলিকানদের জয় একরকম নিশ্চিতই।

কিন্তু যদি একটি হাউস রিপাবলিকানদের দখলে যায়? আর অপরটি ডেমোক্র্যাটদের? তাহলে যে কোনও বিল পাস করাতেই বেগ পেতে হবে ট্রাম্প সরকারকে। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আরও বলীয়ান হবেন ডেমোক্র্যাটরা। নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপসহ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্ত শুরু করাবেন তারা। তাকে অপসারণের দাবিও তোলা হতে পারে। আর সিনেট যদি ডেমোক্র্যাটদের দখলে যায়, তাহলে বিচার বিভাগসহ অন্য জায়গায় নিজের পছন্দের প্রার্থী বসাতে হিমশিম খেতে হবে ট্রাম্পকে।

গত একমাস যাবৎ আমেরিকায় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভিবাসী বিতর্ক। তার মধ্যে আবার জন্মসূত্রে পাওয়া নাগরিকত্বের ওপরও কোপ বসাতে চলেছে ট্রাম্প সরকার। এর বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্প সরকারের উদাসীনতায়ও ক্ষুব্ধ মানুষ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.