আজ জহির রায়হানের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো:  বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

১৯৭২ সালের এই দিনে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি তার ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মৃতদেহ মিরপুরের বধ্যভূমিতে খুঁজতে গিয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি তার।

জহির রায়হান ১৯৩৫ সালে ফেনী জেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। জহির রায়হানের আসল নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তার ডাকনাম ছিল জাফর।।

তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুবার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন। দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয়।

চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ১৯৫৭ সালে, ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি ‘যে নদী মরুপথেতে’ও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে ‘এ দেশ তোমার আমার’-এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। জহির রায়হান এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন।

১৯৬০ সালে তিনি রূপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা ’মুক্তি দেন।

জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’তে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।

কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান এই গুণী শিল্পী।#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.