আজ আদমদীঘি থানা হানাদার মুক্ত দিবস

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: আজ ১২ ডিসেম্বর বগুড়ার আদমদীঘি থানা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু গেরিলা আক্রমনে পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ায় ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আদমদীঘি থানা সদরকে পাক-হানাদার মুক্ত ঘোষনা করেন। আদমদীঘি উপজেলার তৎসময়ে সান্তাহার বৃহৎ রেলওয়ে জংশন ছিল পাক-হানাদার বাহিনীর শক্তঘাটি। এই ঘাটি থেকে পাক হানাদাররা গোটা উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো।
আদমদীঘি থানা এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী এবং এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের পাশাপাশি বিহারীদের অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরু থেকেই বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মানুষ হত্যাসহ ধর্ষনের ঘটনাও ঘটিয়েছিল বিহারী ও পাক হানাদাররা।
সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে ৯ মাস কোন বাঙ্গালীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাঙ্গালী দেখা মাত্রই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। প্রত্যেক বিহারীই ছিল অস্ত্রধারী।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার এল,কে আবুল হোসেন, ফজলুল হক, আজিজার রহমান নান্টু, মেজর হাকিম, মুনছুর রহমান, নাজির হোসেন, আব্বাস আলীসহ অন্যান্য যুদ্ধকালিন কমান্ডারদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারদের সাথে আদমদীঘির কুসুম্বী, রেল ষ্টেশান, নশরতপুর, মথুরাপুরের গাদোঘাট রেলওয়ে ব্রীজ, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহর রানীনগনসহ গুরুত্বপূর্ন স্থানে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এতে বেশ কিছু পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। শুরু থেকে রক্তদহ বিল, বোদলা, পালসা, বিহিগ্রাম, বিষœপুর, গণিপুর, কদমা, বেজার, থলবড়বরিয়া গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ মুক্ত এলাকা।
মুক্তিযোদ্ধাদের চারিদিকের আক্রমনে পাক হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে পালিয়ে একত্রিত হয়। অবশেষে ওইদিন দুপুরে আদমদীঘি থানা সদরে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে থানা সদরকে হানাদার মুক্ত ঘোষনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
এর দুইদিন পর ১৪ ডিসেম্বর সান্তাহারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন তীব্রতার কারনে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহর থেকে পাক-হানাদাররা নওগাঁ অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ায় সান্তাহার জংশন শহর মুক্তের মধ্যদিয়ে সমগ্র আদমদীঘি থানা হানাদারমুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস মহান মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলায় ২৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এর মধ্যে শহীদ পুলক বিশ্বাসসহ অনেক শহীদ পরিবার তাদের সম্মানী ভাতাদি থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
শহীদ পুলক বিশ্বাসের ভাই উত্তম বিশ্বাস জানান, আদমদীঘি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উপজেলা নির্বাহী অফিসে তার ভাইয়ে নাম শহীদ তালিকায় টাঙ্গানো ও শহীদ পুলকের নামে সড়কে নামকরণ থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ নানা জটিলতা দেখিয়ে শহীদ পুলকের ভাতার সুরাহা এখনও করেননি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.