আজাদের দুর্লভ সংগ্রহশালা এখন মিনি জাদুঘর ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে শখের বশে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রীতম-প্রিয়ন্তী সংগ্রহশালাটি জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সংগ্রহশালার নিদর্শনগুলো দেখার জন্য প্রতিদিন উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই বেশি।

এটি এখন মিনি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবং পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে সংগ্রহশালাটি এগিয়ে নিতে পারছেন না প্রতিষ্ঠাতা মো. আবুল কালাম আজাদ তালুকদার।

গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লায় আজাদ তালুকদার নিজ উদ্যোগে এবং প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় ১৯৯৪ সালে সংগ্রহশালাটি গড়ে তোলেন। প্রথমে গুরুদাসপুর তথা চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের নিমিত্তে নিজ বাড়িতে একটি কক্ষে এর যাত্রা শুরু হয়। নিদর্শনাবলীর সংগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি আয়তন।

৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের এই সংগ্রহশালার কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আয়তন বাড়ানোর জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন তিনি।

স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কারণে সংগ্রহশালার কিছু নিদর্শন চুরি হওয়ায় আজাদ ওই প্রতিষ্ঠানটি কিছুদিন বন্ধ রেখেছিলেন। অনেকের উৎসাহে আবার তার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

আজাদের বাবা আয়নাল হক তালুকদার বিটিসি নিউজকে বলেন, আজাদের এসব প্রচীন নিদর্শন সংগ্রহ করা দেখে খেয়ালিপনা মনে হতো। অনেক টাকাও ব্যয় করেছে। এসব পাগলামির জন্য তাকে গালমন্দ শুনতে হয়েছে। তবু সে থামেনি। এখন তার সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে ভালোই লাগে।

সংগৃহীত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে প্রাচীনকালের তৈরি ৬টি পিতলের পাত্র। এতে রক্ষিত ধন-দৌলত পাহারা দিচ্ছে দুটি বিষধর সাপ। দেশ-বিদেশের মুদ্রা কয়েন দিয়ে সাজানো ধন ভান্ডারে বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের সাপ। নামকরণ করা হয়েছে রতœভান্ডার। পাশে রয়েছে দেড়শ বছরের পুরনো হাতির দাঁত ও সোয়াকেজি ওজনের সামগ্রিক ঝিনুক, ৫শ গ্রাম ওজনের কড়িসহ নানা প্রাচীন নিদর্শন।

এছাড়া ১৬৭ দেশের নোট ও কয়েন, ছোট্ট কুরআন শরীফ, বিভিন্ন সময়ের স্বর্ণ, রৌপ্য, তা¤্র ও ধাতব মুদ্রা এবং বিভিন্ন প্রস্তর ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য রয়েছে এখানে। সোনার চামচ, রুপার গ্লাস, চাঁদির প্লেট ও মুকুট, পিতলের বিভিন্ন রকম প্রাচীন বাটি, সিঁদুরদানি সহ রয়েছে নানা প্রাচীন ঐতিহ্য।

নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের মধ্যে মাটির তৈজসপত্র, পিতলের কলস, মূর্তি, শামুক, পাটের জুতা পুরনো কাঠের খড়ম, কলের গান, অধুনালিপ্ত ঢেঁকি, লাঙ্গল ও লাঙ্গলের ইস, মাথাল, কাঁড়াল, মুগুর, খারুপঞ্চমী, হুক্কা প্রভৃতি রয়েছে। তাছাড়া দেশি ফল গাছের পাতা ও বিভিন্ন জাতের মাছ দিয়ে ৫০ আইটেমে লেখা আমাদের প্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধাবস্থার ম্যুরালও রয়েছে। কাঠে অংকন করা লালনসহ অনেক মনীষীর ছবিও আছে সংগ্রহশালায়।

২৩ বছর ধরে দেশ-বিদেশ থেকে নানা নিদর্শন সংগ্রহ করে চলেছেন আজাদ তালুকদার। পেশায় তিনি ধান-চাল ব্যবসায়ী। পর্যাপ্ত অর্থ ও সময়ের অভাবে ইচ্ছেমতো সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে পারেননি তিনি। মাঝপথে থেমে গিয়েছিলেন। ছেলেমেয়ে প্রিতম-প্রিয়ন্তীর আবদার ও কাছের কিছু সুজন স্বজনের উৎসাহে আবারো শুরু করেন সংগ্রহশালার কার্যক্রম।

গতকাল শুক্রবার ব্যতীত সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য আজাদের মিনি জাদুঘর নামে পরিচিত সংগ্রহশালাটি উন্মুক্ত রাখা হয়। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সংগ্রহশালাটি আরো সমৃদ্ধ করার ইচ্ছা আছে তার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, আজাদ একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ। সংগ্রহশালাটি পরিদর্শন করেছি। ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারিভাবে কিছু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.