আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী মুক্ত দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের দিন, অহংকারের দিন। কিন্তু রাজশাহীতে স্বাধীনতার সেই সূর্যকিরণের ছোঁয়া লাগে আরও দুদিন পরে।

আগামীকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজশাহী শহর শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা কোনঠাসা হয়ে পড়লেও রাজশাহীতে স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা উড়ে আরও দুইদিন পর। দীর্ঘ নয় মাস বিভীষিকাময় সময়ের অবসান ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী অঞ্চল ছিল ৭ নম্বর সেক্টরে। বিদেশী প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। একাত্তরের ১৭ জুন ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শুরু করে তাদের অ্যাকশন অপারেশন। পাকিস্তানি সৈন্য ও দোসরদের নির্যাতন হত্যাযজ্ঞ বাড়তে থাকে। রাজশাহীর নারীররাও অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।

মহদিপুর সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে শহিদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদাপাগড়ি ও আতœসমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীরদর্পে প্রবেশ করে।

সেদিন যা ঘটেছিল:

রাজশাহী মুক্ত দিবসের ঘোষণা দেয়ার জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জননেতা আতাউর রহমানের (পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের গভর্নর) সিপাইপাড়াস্থ বাসভবনে। সভা থেকে মাদরাসা মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে মুক্তদিবসের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সাথে ওই বাড়িতে কনট্রোলরুম খোলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

জননেতা আতাউর রহমানের বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা মিছিল নিয়ে ধাবিত হয় রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের দিকে। জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় চারদিক। সেদিন মাদরাসা মাঠে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছিলেন আতাউর রহমানের শিশু সন্তান রাজশাহী প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি সাইদুর রহমান।

এরপর মাদরাসা ময়দানে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলেন লাল গোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। ঘোষণা দেন আজ থেকে রাজশাহী ও রাজশাহীর মানুষ মুক্ত।

দিবসের কর্মসূচি: 

২০০৬ সাল থেকে দিনটিকে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ রাজশাহী মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেল ৩টায় সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট প্রেসক্লাব চত্বর এলাকায় স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত কুমার সাহা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি সাইদুর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.