আইপিএলে কেন বাংলাদেশের মাত্র দুজন উত্তর খুঁজছেন সাকিব আল হাসান

বিটিসি নিউজ ডেস্ক :সাকিব আল হাসানের মাথায় একটা ঐকিক নিয়মের অঙ্ক ঘুরছে। কিন্তু অঙ্কটা কিছুতেই মিলছে না—আইপিএলের নিলামে আফগানিস্তানের চার ক্রিকেটার বিক্রি হলে বাংলাদেশের কয়জন ক্রিকেটার বিক্রি হওয়া উচিত? সংখ্যাটা সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে  ২। এখানেই তাঁর খটকা। বাংলাদেশ থেকে তো আরও বেশি খেলোয়াড়ের আইপিএল খেলা উচিত।

নিলামে থাকা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আগ্রহ থাকতে হবে, তাঁদের কিনে নিতে হবে।খেলতে চাইলেই খেলা সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশ তো নিলামেও আফগানদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। আইপিএলে এবার আফগানিস্তানের ১০ জন ক্রিকেটার নিলামে উঠেছেন। অথচ বাংলাদেশের  মাত্র ছয়জন! সেখান থেকে যে দুজনকে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আর মুম্বাই ইন্ডিয়ানস কিনে নিয়েছে, তাঁরাও আগে থেকেই আইপিএলে আছেন।

একটা পথ সাকিব তবু দেখছেন; যে পথে গেলে আইপিএলের বাজারে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কদর বাড়বে। ভারতে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়-কোচদের সঙ্গে মিশে বুঝেছেন, তাঁদের দৃষ্টি বিশ্বের সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকেই ছড়িয়ে থাকে। কে পিএসএলে ভালো খেলল, সিপিএলে কার পারফরম্যান্স নজরকাড়া, কিংবা কে বিগ ব্যাশ মাতালেন—এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে সব সময়। সাকিব যেন বোঝাতে চাইলেন, সবচেয়ে বড় বাজারের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলের ‘বীজতলা’ অন্যান্য দেশের লিগগুলোই। কাল হায়দরাবাদ থেকে মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা যত বেশি জায়গায় যত বেশি ক্রিকেট খেলবে, ততই তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। ওই সব লিগে নজর কাড়তে পারলে আমি নিশ্চিত, আইপিএলে আমাদের ক্রিকেটাররা আরও বেশি খেলতে পারবে।’

উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের কথাই ধরুন। তাদের চারজন খেলোয়াড় কীভাবে আইপিএলে সুযোগ পায়? কারণ, অন্যান্য লিগে খেলে টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হিসেবে তাদের নাম হয়ে গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোচরা তাদের খেলা দেখে, খোঁজ খবর রাখে। সে জন্যই ! একজন চোটে পড়ার পরও এখন আফগানিস্তানের তিনজন খেলোয়াড় আছে আইপিএলে।’

 পাকিস্তানের পিএসএল বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল ভারতের যেমন আইপিএল তেমনি বাংলাদেশেরও আছে একটি ‘এল’—নাম তার বিপিএল। তো বিপিএলের ওপর কি চোখ নেই সেসব কোচ-খেলোয়াড়ের? বাংলাদেশের ক্রিকেটের হাওয়া বদলে দেওয়া টুর্নামেন্টটির কথা কি কেউ বলে না আইপিএলে! সাকিবের কণ্ঠে তেমন জোর খুঁজে পাওয়া গেল না প্রসঙ্গটিতে, ‘সত্যি বলতে কি, বিপিএল নিয়ে ততটা আলোচনা এখানে হয় না। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়ই বেশি আইপিএলে। ওরা তো তেমন একটা বিপিএলে যায় না, সে জন্য তাদের আগ্রহ কম। দু-একজন যাও টুকটাক খোঁজখবর নেয়, সেটা হয়তো এমনিতেই। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কানদের বিপিএল নিয়ে ভালো আগ্রহ আছে।’

বাংলাদেশের সাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাত মৌসুম খেলে  এবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। এটিকে অবশ্য স্বভাবসুলভ নৈর্ব্যক্তিকভাবেই দেখছেন, ‘আইপিএলের দলগুলোর মধ্যে আসলে খুব একটা পার্থক্য নেই। দুইটা দুই দল, এটাই পার্থক্য।’ কিন্তু কলকাতা বাঙালিদের আর সাকিব বাংলাদেশের। এই সম্পর্কটাও কি বিচ্ছেদের সুর বাজায় না তাঁর মনে? সাকিব বললেন, বাজায় না। নতুন দলে বিভিন্ন লিগের পুরোনো অনেক সতীর্থকে পেয়ে যাওয়াতেই মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হয়েছে তাঁর জন্য, ‘এখন যাদের সঙ্গে খেলছি, তাদের বেশির ভাগকেই চিনি। তাদের সঙ্গে আগেও খেলেছি।’

কোচ টম মুডির তো পুরোনো ছাত্রই সাকিব। মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে বিগ ব্যাশ খেলেছেন তাঁর অধীনে। সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার সাকিবের পছন্দের কোচদেরই একজন, ‘টম মুডিকে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। ভালো কোচ, বিগ ব্যাশে তাঁর সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে।’

এটা নিশ্চিত সফর সূচি এখনো ঘোষণা না হলেও , জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার আগে ভারতে আফগানদের বিপক্ষে তিন বা চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। তার মানে আইপিএল থেকে ফিরে আফগানিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুত হতে হবে সাকিবকে। অবশ্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ যেহেতু, সাকিবের প্রস্তুতি আইপিএলেই নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, ‘এখন পর্যন্ত এখানে যা খেলেছি, ঠিকঠাকই হয়েছে বলবো। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব চান, আফগানিস্তান সিরিজের জন্য দেশে তাঁর দলের প্রস্তুতিটাও হোক ভালো, ‘বিসিএল হওয়ায় অনেকে খেলার মধ্যে ছিল, এটা ভালো দিক। তবে অনুশীলন ক্যাম্পটা ঠিকভাবে হওয়া দরকার। আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামতে হবে। যদিও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চেয়ে আফগানরাই এগিয়ে!#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.