আইনবহির্ভূত কাজ করে কেউই ছাড় পাবে না’ অধিনায়ক (সিও) পর্যায়ের কনফারেন্সে বললেন র‍্যাব ডিজি

বিশেষ প্রতিনিধি: র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) দেশ ও জাতির কল্যানে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এলিট ফোর্সের প্রতিফলন দেখাতে চান বাহিনীর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ। এজন্য বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত বা অপেশাদার কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আইনবহির্ভূত কাজ করে কেউই ছাড় পাবে না।
আজ রবিবার ২৩ জুন দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলছিলেন র‍্যাব ডিজি। সংবাদ সম্মেলনে উগ্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূল, অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার এবং কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে নবাগত র‌্যাব মহাপরিচালক, র‌্যাব ফোর্সেস মহোদয়ের ৫ দফা দিক নির্দেশনা ও কর্মপন্থা তুলে ধরা হয়।
ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, র‍্যাবের প্রতি মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস সেটা আমরা আরও বৃদ্ধি করতে চাই। সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের প্রতিটি সদস্যকে সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা বজায় রাখা, চেইন অব কমান্ড অনুসরণ এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো র‌্যাব সদস্য যদি আইনবহির্ভূত কাজ করেন বা অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র‌্যাব ডিজি বলেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব জঙ্গি ও মাদকবিরোধী কার্যক্রম, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধী ও সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। র‌্যাব মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। প্রতিষ্ঠা হতে র‌্যাব অদ্যাবধি প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজারের অধিক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার, প্রায় ৬ হাজার ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও এই বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে অসংখ্য তালিকা ভুক্ত অপরাধী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী যারা দীর্ঘকাল আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে ছিল তারা ধরা পড়েছে। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত হয়েছে, জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের সাফল্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। চরমপন্থি ও জলদস্যু আত্মসমর্পণে এ বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিগত দিনগুলোতে উন্নত পেশাদারত্বের মাধ্যমে র‌্যাব ফোর্সেস তার সব কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে। ৫ দফা কাজকে গুরুত্ব দিয়ে র‌্যাবের সব অধিনায়ককে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
র‍্যাব ডিজি বলেন, আজকে সিও (অধিনায়ক) পর্যায়ে কনফারেন্স ছিল। আমি তাদের পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। এলিট ফোর্স হিসেবে র‍্যাবকে উদ্ভাবনী হতে হবে। মানুষকে সেবা দেওয়া, অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জঙ্গি সন্ত্রাস দমন, মাদক উদ্ধারসহ আভিযানিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার নির্দেশনা দিয়েছি। এজন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে র‍্যাবকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে কর্মপরিধি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, র‌্যাব মহাপরিচালক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। র‌্যাবের পবিত্র পোশাকের সম্মানহানি হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে নবাগত র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে চাই। র‌্যাবের কোনো সদস্য অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজে জড়াবে না। কোনো সদস্য যদি কারো মানবাধিকার হরণ করতে চায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা ও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসৃত মৌলিক মানবাধিকার সমূহ সমুন্নত রাখার বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এসময় তিনি পুরোপুরি সচেতন থেকে মানবাধিকার, জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয়কে সমুন্নত রেখে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা এবং অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণসহ সব আভিযানিক কার্যক্রমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর র‌্যাব ডিজি গুরুত্বারোপ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের মতো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, অনলাইন প্রতারণা, সাইবার ক্রাইমের মতো বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
র‌্যাব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই অপরাধ সমূহের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আইনানুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে অভিযান জোরদার করতে সুস্পষ্ট দিক-দির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বেআইনি বা আইন বহির্ভূত কোনো কাজে না জড়ান বা অপেশাদার কাজ না করেন সেব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসন ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে র‌্যাবের দৃঢ় অবস্থান পুনঃব্যক্ত করেন তিনি।
সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি বলেন, তিনটা কাজকে গুরুত্ব দেব। মাদক, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূল।
তিনি আরও বলেন, মাদক নির্মূলে দরকার সামাজিক আন্দোলন। গণমাধ্যমের কাছে আশা করব পাশে থাকবে। আমি গণমাধ্যমের অংশিদারত্ব চাই। গণমাধ্যমের ভূমিকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমই আগে জেনে যায়।
কিশোর গ্যাং কালচারের নেপথ্যে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূল। সাসটেইনেবল সমাজ প্রতিষ্ঠায় গ্যাং কালচারে জড়ানো কিশোরদের সংশোধন করে মূলধারায় কীভাবে আনা যায় সে চেষ্টা করবে র‌্যাব। আর অপরাধ করে ও সহায়তা করে তারা দুপক্ষই সমান অপরাধী। অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন র‍্যাব প্রধান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.