অস্তিত্বের সংকটে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাসের লোকসান চলমান থাকতেই সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর পানি তিন দফায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিলো জেলার অন্তত আট শতাধিক তাঁত শিল্পের কারখানা।

আর এতে বেকার হয়ে পরেছে এই শিল্পের সাথে জরিত কয়েক লক্ষ শ্রমিক। করোনা আর বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে তাঁত মালিকরা।

তাঁতীদের তাঁত কাঁদা মাটি আর মাকড়সার জালে আটকে আছে তাঁত কুঞ্জ সিরাজগঞ্জের অর্ধ লাখ তাঁত।

সরকারি সহায়তার জন্য অপেক্ষা করলেও এখনো মেলেনি কোন আশ্বাস। করোনা আর বন্যায় এই তাঁত শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুসিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগীতার হাত বারাবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তাঁত শ্রমিক ও মালিকরা।

করোনা ভাইরাসের প্রকট আর বন্যার পানি কমে তাঁত কারখানা থেকে নেমে গেলেও কাঁদা মাটি ও মাকড়সার জালে আটকে তাঁত কুঞ্জ সিরাজগঞ্জের এই তাঁত গুলো।

বন্যার পানি ওঠায় মাসাধিকাল বন্ধ থাকায় তাঁত সহ তাতেঁর কাঁচামাল নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই নতুন করে আবার শুরু করার পুজির অভাবে অনেক কারখানাই এখন বন্ধ।

আকস্মিকভাবে বন্যার পানিতে সিরাজগঞ্জের সদর, বেলকুচি, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার তাঁত পল্লী গুলোতে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে ছিলো ছোট বড় প্রায় আট শতাধিক তাঁত শিল্পের কারখানার প্রায় অর্ধ লাখ তাঁত।

যমুনা নদীতে পানি কমায় তাঁত কারখান থেকে পানি সরে গেছে ঠিকই কিন্তু তাঁত ঘরের বেহাল দশায় দিশেহারা তাঁত মালিকেরা। বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁতের তৈরী কাপরের বাজারে চরম ধস নেমেছে অনেক।

বর্তমানে যমুনা নদীর পানি কমলেও তাঁত শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুসিয়ে উঠতে সময় লাগবে অন্তত দু’বছর। তাই স্বল্প সুদে ঋণের দাবী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা ও বন্যার প্রভাবে গত ৫ মাসে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার তাঁতই বন্ধ রয়েছে। এতে ১ লাখেরও বেশি তাঁতি ও শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বেলকুচি, চৌহালী উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরের তাঁতপল্লী­তে তৈরি উন্নতমানের বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি, থ্রি-পিস এবং গামছা দেশে তাঁতবস্ত্রের চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ করে। ভারত সহ বহির্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেও কয়েক হাজার কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র রপ্তানি হয়।

সম্প্রতি করোনার কারণে বেলকুচি, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে ক্রেতার আগমন নেই বললেই চলে। উৎপাদিত তাঁতবস্ত্রের মজুত অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে।

নতুন করে কাঁচামাল ক্রয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত ও কারখানা মেরামত, তাঁতি ও শ্রমিক পরিবারে জীবিকা নির্বাহ, ঋণের কিস্তি ও সুদের ঘানি টানতে গিয়ে অথৈ ঋণের জালে তাঁতিরা আটকা পড়ছেন।

বেলকুচি পৌর এলাকার শেরনগর গ্রামের তাঁতী মোঃ আবদুল্লাহ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বন্যা ও করোনায় তাঁতীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। সরকার যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণদেয় তাহলে কিছুটা হলেও পুসিয়ে নেয়া যাবে।

শাহজাদপুর পৌর এলাকার তাঁতপল্লি রূপপুর নতুন পাড়ার রহমত আলী (৭০) বলেন, দুটি তাঁত বন্ধ থাকায় চার সদস্যের পরিবারের জীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ মাসে তার ১ লাখ টাকা লোকসান হওয়ায় ঋণগ্রস্থাবস্থায় অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাঁটাচ্ছেন। একইভাবে গত ৫ মাসে এ মহলস্নার মৃত আমান মুন্সীর ছেলে শফিকুল ইসলামের ১৬টি তাঁত বন্ধ থাকায় ১০ লাখ, রুহুল আমিনের ১২টি তাঁত বন্ধ থাকায় ৫ লাখ, আলম কাজীর ১০টি হ্যান্ডলুম ও ৮টি পাওয়ারলুম বন্ধ থাকায় ৬ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

বেলকুচি উপজেলা তাঁতী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তাঁতী নেতা রফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এ দুরবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষথেকে তাঁতীদের স্বল্প সুধে ঋণ দেয়া অতি জরুরী হয়ে পরেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিলুপ্তির হাত থেকে তাঁতশিল্পকে রক্ষায় সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে।

বেলকুচি তাঁত বোর্ডের লিয়াজো অফিসার তন্নি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ তাঁতের তালিকা চলমান রয়েছে। তাঁত বোর্ডকে জানানো হয়েছে তারা অনুদান দিলেই তা ক্ষতিগ্রস্থ্য তাঁতীদের মাঝে বিতরন করা হবে। আর তাঁতীদের লোনের জন্য তালিকা করা হচ্ছে যা স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিতরন করা হবে ।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তাঁত শিল্পকে বাচিয়ে রাখার জন্য ক্ষতি গ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে তাঁত বোর্ড ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যেমে ক্ষতি পুরনের ব্যাবস্থা করা হবে। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ্য তাত মালিক ও শ্রমিক যেন বরাদ্দ পায় সেদিকে নজর রাখা হবে। ইতিমধ্যে চারশত শ্রমিককে আড়াই হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। বাকীদেরও দেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি মো: সুলতান হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.