অশ্লীল ওয়েবসিরিজ প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ, সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর : তথ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ওয়েবসিরিজ, সিনেমা বা যে কোনো কিছু নির্মাণ ও প্রচার করার ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয়। আমাদের একটি কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি আছে, আমাদের সমাজের একটি মূল্যবোধ আছে। এটি অনেক সময় অনেকে মাথায় রাখেন না।

আজ সোমবার (২২ জুন) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে এই দোহাই দিয়ে আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে কোনো কিছু করা কখনোই সমীচীন নয়, আইনানুযায়ীও সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

বাংলাদেশে ২০১২ সালে প্রণীত এ সংক্রান্ত আইনানুযায়ী এ ধরণের অশ্লীলতা প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড, উল্লেখ করেন ড. হাছান মাহমুদ।

যে সমস্ত সার্ভিস প্রোভাইডার এ ধরণের ওয়েজসিরিজ প্রচার করার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের এ কাজের জন্য আদৌ কোনো লাইসেন্স আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি, জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যদি লাইসেন্স না থাকে তাহলে এই অবৈধ কাজের জন্য অবশ্যই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর লাইসেন্স থাকলেও তাদের ডোমেইন ব্যবহার করে এ ধরণের অশ্লীল জিনিস প্রচার করাও দণ্ডনীয় অপরাধ। সে বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

টিআরপি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন,  ‘অনুমোদনহীন টিআরপি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, এক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা অবশ্যই আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন কে কাকে টিআরপি দেয়, সেটি আমাদের জানা নেই। টিআরপি যারা করছে তারা কোথা থেকে অনুমতি নিয়েছে, কে তাদেরকে লাইসেন্স দিয়েছে -সেটি অনেকের প্রশ্ন। কারণ, বাংলাদেশে টিআরপি নির্ধারণের জন্য সরকার অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।’

আগে যেমন ক্যাবল নেটওয়ার্কে টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল সামনের দিকে রাখার জন্য, এমনকি টিভি চ্যানেল যাতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, সেজন্যও নানা ধরণের অশুভ প্রতিযোগিতা ছিল, অনৈতিকতার আশ্রয় নেয়া হতো, সেটি বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘তেমনি আমরা জানতে পেরেছি, যে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলো টিআরপি নির্ধারণ করে, সেখানেও অশুভ, অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

ভারত, শ্রীলংকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে টিআরপি কিভাবে নির্ধারণ হয় সরকার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় টেলিভিশন শিল্পের দেশ ভারতে সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সংস্থা আছে সেই সংস্থা টিআরপি ঠিক করে দেয়।

তথ্যমন্ত্রী আরো জানান, এবিষয়ে এটকো (এসোসিয়েশন অভ্ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স), ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার এবং অন্যান্য অংশীজন যারা আছে, তাদের সাথে আলোচনা করে আমরা এখানে অবশ্যই খুব সহসা একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসা হবে। কোনো অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান কোন টেলিভিশন কে কত বেশি দেখে, সেটি বলার বৈধ কোনো এখতিয়ার রাখে না।

অনুমোদনহীন টিআরপি নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসবো এবং যারা অনুমোদন ছাড়া যারা এ কাজটি করে আসছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

এর আগে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয়ে নিজ দপ্তর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত কোভিড-১৯ বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন করেন।

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুর সবুরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপ-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর। খুলনা সিটি কর্পোরেশন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ, বিশেষজ্ঞবৃন্দ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং সকল বিভাগের প্রশিক্ষণার্থীরা এতে অংশ নেন।

এসময় আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কথা স্মরণ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা একটি দল। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সর্বদা আমাদের দল মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুঞ্জয়ী নেত্রী। তিনি সবসময় মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জনগণের সেবা করে গেছেন, সেবা করে যাচ্ছেন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আজ বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।’

ড. হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলীয় নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপনারা দেখেছেন আমাদের দলের বহুনেতা আজকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ সদস্যের মধ্যে বরেণ্য নেতা মোহাম্মদ নাসিম, শেখ আবদুল্লাহ ও বদর উদ্দিন আহমদ কামরান -তিনজন ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

তারা প্রত্যেকেই জনগণের পাশে থেকে কাজ করছিলেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হাজী মকবুল হোসেনও জনগণের সাথে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুঃখজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু আমাদের দল মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে। আজকে সেজন্যই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে এবং তারা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.