অলিম্পিয়াকোসের ইতিহাস গড়া শিরোপায় গ্রিসে আনন্দের জোয়ার

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: একটি গোল, একটি ট্রফি এবং দারুণ এক ইতিহাস! অতিরিক্তি সময়ের গোলে ফিওরেন্তিনাকে হারিয়ে ইউরোপা কনফারেন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হলো অলিম্পিয়াকোস। প্রথম গ্রিক ক্লাব হিসেবে বড় কোনো ইউরোপিয়ান ট্রফি জয়ের ইতিহাসও গড়ল তারা। ক্লাবের এই সাফল্যে গ্রিসজুড়ে বয়ে যাচ্ছে উৎসব আর আনন্দের জোয়ার।
এথেন্সে বুধবার ফাইনালে গোলশূন্য ম্যাচ এগিয়ে যাচ্ছিল টাইব্রেকারের দিকে। কিন্তু ১১৬তম মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেন আইয়ুব এল কাবি। বক্সের ভেদরে মার্কারকে ছিটকে খুব কাছ থেকে হেড করে বল জালে জড়ান এই ফরোয়ার্ড। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম।
এরপরই অবশ্য নীরবতা নেমে আসে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ভিএআর পরীক্ষা করেন রেফারি। পরে গোল বহাল রাখার সঙ্কেত দিলে আরেক দফায় গর্জন ওঠে গ্যালারিতে।
ফাইনালের গোলটি ছিল এবারের কনফারেন্স লিগে এল কাবির ১১তম গোল। সবকটি গোলই তিনি করলেন নকআউট পর্বে। অ্যাস্টন ভিলাকে বিদায় করে দেওয়া সেমি-ফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে ৫টি গোল করেন মরক্কোর এই স্ট্রাইকার।
সবশেষ কোনো গ্রিক ক্লাব ইউরোপিয়ান ট্রফি জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিল সেই ১৯৭১ সালে। সেবার ইউরোপিয়ান কাপের (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) ফাইনালে আয়াক্স আমস্টারডামের কাছে হেরে যায় প্যানাথিনাইকোস। ৫৩ বছর পর গ্রিসের ফুটবলপ্রেমিরা উদযাপনের উপলক্ষ পেল ইউরোপের তৃতীয় সেরা আসর জিতে।
গ্যালারিভরা দর্শক তো বটেই, স্টেডিয়ামের বাইরেও অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার দর্শক। ম্যাচ শেষ হতেই আতশবাজি ফুটিয়ে, রঙ ছিটিয়ে, পতাকা উড়িয়ে, নাচ গান স্লোগানে মেতে ওঠেন তারা। এথেন্স পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। একই চিত্র ছিল বন্দরনগরী পেরিয়েসে, যে শহরের ক্লাব অলিম্পিয়াকোস। উৎসব চলতে থাকে রাতভর।
জিয়ানিস ক্রিস্তোদোলু নামের এক সমর্থক কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমাদের প্রজন্মের যে দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল, অবশেষে তা আজ পূরণ হলো। আশা করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আমাদের মতো সৌভাগ্যবান হবে।” আরেক সমর্থক দিয়ামান্তিস দিয়ামান্তোপোলুসের কণ্ঠেও ছিল উচ্ছ্বাস, “জীবনে একবারই আসে এমন কিছু… আমার আনন্দ বাধ মানছে না, অসাধারণ লাগছে…।”
সমর্থকদের সেসব অনুভূতিকেই ধারণ করলেন যেন অলিম্পিয়াকোসের উইঙ্গার গিওর্গস মাসুরাস।
“কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না… এখনও হজম হচ্ছে না যেন। আমরা সবাই মিলে এই সাফল্য অর্জন করেছি। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আমরা জিতব। বিশ্বাস রেখেছি এবং শেষ পর্যন্ত পেরেছি।”
“আমরা এখন ইউরোপের অভিজাতদের অংশ এবং দায়িত্ব এখন আরও বেশি। এই পর্যায়টা ধরে রাখতে হবে আমাদের।”
অলিম্পিয়াকোসের কোচ হোসে লুইস মেন্দিলিবারের জন্যও এটি দারুণ এক অর্জন। মাত্র তিন মাস আগে তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছেন। গত মৌসুমে তার কোচিংয়ে ইউরোপা লিগ জিতেছে সেভিয়া। স্প্যানিশ কোচ এবার গ্রিক ক্লাবটিকে এনে দিলেন স্মরণীয় সাফল্য।
“আমি খুবই খুশি, তৃপ্ত এবং ক্লাবের সমর্থকদের এতটা আনন্দ দিতে পারা আমার জন্য সম্মানের। খুবই ভালো লাগছে যে, এমন কিছু আমরা করেছি, যা আগে কোনো ক্লাব করতে পারেনি। আমরা উদযাপন করব, গলা ফাটাব এবং এরপর একসঙ্গে আবার কাজে ফিরব সামনের পথচলার জন্য।”
অলিম্পিয়াকোসের এই সাফল্য যে ক্লাবের সীমানা ছাড়িয়ে আরও বড়, সেটিই তুলে ধরলেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিয়াকোস মিতসোতাকিস।
“সত্যিকারের কিংবদন্তি! অলিম্পিয়াকোস কনফারেন্স লিগ জিতেছে এবং ইতিহাস গড়েছে। এই ক্লাবের জন্য তো বটেই, সামগ্রিকভাবে গ্রিক ফুটবলের জন্যও অসাধারণ একটি রাত। অভিনন্দন।”
উল্টো চিত্র ছিল ফিওরেন্তিনার। গত মৌসুমেও তারা হেরেছিল কনফারেন্স লিগের ফাইনালে। হেরেছিল ইতালিয়ান কাপের ফাইনালেও। এবার আরও একটি ফাইনালে হার। দুই বছরের মধ্যে তিনটি ফাইনালে হারতে হলো তাদের। ২০০১ সালের পর কোনো ট্রফির দেখা পায়নি তারা।
গোটা টুর্নামেন্টে এবার অপরাজিত ছিল ফিওরেন্তিনা। কিন্তু হেরে গেল আসল ম্যাচটিতেই। কোচ ভিনসেন্সো ইতালিয়ানো ম্যাচ শেষে হতাশা লুকালেন না একটুও।
“আমাদের এবার বিশ্বাস ছিল যে পারব। খুবই কষ্ট লাগছে। টানা দুবার ফাইনালে হারা হতাশাজনক। আরও বেশি হতাশ লাগছে যে, আজকে আমরা গোল করার অনেক সুযোগ পেয়েছি।”
“ছেলেরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে। ওদেরকে কাঁদতে দেখা কষ্টদায়ক। এই মুহূর্তে খুবই তিক্ত অনুভূতি আমার। হতাশ লাগছে, মুষড়ে পড়েছি। কারণ, সত্যিই ভেবেছিলাম এবার ভিন্ন কিছু হবে।” #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.