অলিম্পিক যুদ্ধে জকোভিচের কাছে নাদালের বিদায়

 

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: প্যারিস অলিম্পিক গেমস থেকে বিদায় হয়ে গেল রাফায়েল নাদালের। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে নাদালকে বিদায় করে তৃতীয় তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছেন জকোভিচ। নাদাল এসেছিলেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের বর্তমান রাজাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে বীরদর্পে এগিয়ে যাবেন। নাদাল হয়তো জানতেন না আজকের সূর্যটা তার জন্য আলো ছড়ায়নি। পুরো আলোটা জকোভিচের জন্য। হয়েছেও সেটা।
নাদালের প্রতিদ্বন্দ্বী জকোভিচ যে এভাবে বিদায় করে দেবেন, সেটা হয়তো বুঝতে পারেননি নাদাল। বুঝতেও দেননি। তা না হলে তিন সেটও খেলতে হলো না কেন? জকোভিচ পরপর দুই সেটে উড়িয়ে দিয়েছেন নাদালকে, ৬-১, ৬-৪ সেটে। লড়াইটা শেষ করতে সময় নিয়েছেন ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। নাদাল দ্বিতীয় সেটে ম্যাচে ফেরার বিস্ফোরণ ঘটালেও মিনিটেই তা হারিয়ে যায়। ৩৮ বছর বয়সী নাদাল দ্বিতীয় সেটে লড়াই করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে গেলেও ৩৭ বছর বয়সী জকোভিচ দমিয়ে দিয়েছেন। টেলিভিশনের ছোট পর্দায় ফ্রেঞ্চ ওপেন দেখা আর ফ্রেঞ্চ ওপেনের ক্লে কোর্টে গিয়ে খেলা দেখার মধ্যে কতটা ফারাক রয়েছে, তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। তার পরও যদি হয় বিশ্ব টেনিসের দুই মহাতারকার লড়াই, তাহলে তো কথাই নেই।
পুরুষ এককে স্পেনের রাফায়েল নাদাল ও সার্বিয়ার নোভাক জকোভিচ। এই তারকার লড়াই দেখতে নতুন কোনো মানুষের জন্য রোলা গাঁরো খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। মেট্রোতেই রয়েছে টেনিস কোর্টে যাওয়ার স্বেচ্ছাসেবক। তার ওপর ফরাসি দর্শকের ভিড়, সঙ্গে স্পেন, সার্বিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং বিভিন্ন দেশ থেকে টেনিস- প্রেমীদের ছুটে চলা অনুসরণ করলে রোলা গাঁরোতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের আর কোনো দিকে এত স্বেচ্ছাসেবক কিংবা এত সতর্ক আয়োজন দেখা যায়নি। 
অলিম্পিক টেনিসের মাত্রই দ্বিতীয় রাউন্ড, তাতেই কিনা দর্শক উপচে পড়ল! মিছিলের মতো দর্শক ছুটল স্টেডিয়ামের দিকে। ভেতরে ঢুকলে মন পাগল হয়ে যাবে। মেইন গেট থেকে আরও ১৫ মিনিট হাঁটতে হবে মূল স্টেডিয়ামে পৌছাতে। যাওয়ার সময় চোখে পড়বে দর্শক, এসেছেন তার পরিবার নিয়ে। জায়গায় জায়গায় দর্শকের বসার জন্য দামি দামি চেয়ার, টেনিস খেলাটাই তো অভিজাত ব্যক্তিদের জন্য। টেনিসে সম্পৃক্ত মানুষগুলো প্রায় সবই বিত্তবান, অভিজাত সমাজের। রোলা গাঁরো যেন ছোটখাটো বিকেএসপি।
শুধু টেনিসের জন্য রয়েছে সব রকম সুবিধা। যারা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করছেন, তাদের অনেকেরই নাকি এই প্রথম বার টেনিস কোর্টে আসা। সবকিছু ভালো চেনা নেই, জানাও নেই। রোলা গাঁরোর মূল স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষে ছড়িয়ে আছে আরো টেনিস কোর্ট। সব জায়গায় খেলা হচ্ছে। সব কোর্টেই দর্শক। ক্যান্টিন আছে বাগানে। পুরো টেনিস স্টেডিয়ামটা যেন একটা সাজানো কমপ্লেক্স। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ড, নাদাল-জকোভিচ টেনিস যুদ্ধ। যুদ্ধ। দর্শক এসেছেন টেনিসের অলিখিত ফাইনাল দেখতে। শুক্রবার, শনিবার ছিল বৃষ্টি আর গত দুই দিনে আকাশ রোদে ছেয়ে আছে। খুব গমর পড়েছে। দুপুর দেড়টায় খেলা শুরু হবে। বেলা ১১টা থেকে আসন গ্রহণ, এক ঘণ্টার মধ্যেই হাউসফুল। কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে নাদাল-জকোভিচ টেনিস-যুদ্ধ দেখতে এসে তাদের মধ্যে কোনো বিড়ম্বনা নেই। যারা ছায়ার নিচে পড়েছেন, তারা বলছেন, ‘উই আর লাকি।’ 
নাদাল-জকোভিচ রোমাঞ্চকর শো হাতছাড়া করা যাবে না। হাজার ইউরো খরচ করে ভিআইপিতে বসেও রোদ থেকে রোহাই পায়নি পরিবার। ৪৮ ভিআইপি বক্সে বসা ৩০০ দর্শক। আর যারা রোদের তাপে পুড়েছেন, তারা সারাক্ষণ সাংবাদিকদের জন্য বিশাল ব্যবস্থা, মূল প্রেসবক্স ছাড়াও বাইরে ছিল অন্তত ৫০০ সংবাদমাধ্যম। রয়টার, সিএনএন, ইএসপিন থেকে শুরু করে দুনিয়ার সব বাঘা বাঘা সংবাদমাধ্যম চেয়ার পেয়েছে। রাফায়াল-জকোভিচের লড়াই এতটাই রোমাঞ্চ ছড়াল, যেন কাল দুপুরে প্যারিস অলিম্পিকের অন্য সব খেলা অন্ধকারে ঠেলে দিল।
টেনিসের এত আকর্ষণ কোর্টে বসে না দেখলে রোমাঞ্চ অনুভব করা যায় না। রাফায়েল নাদাল-জকোভিচের ৬০তম মুখোমুখি, হারলে অলিম্পিক থেকে বিদায়, শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই উপভোগ করেছে টেনিস দুনিয়া। রাফায়েলের ফোরহ্যান্ড, জকোভিচের ব্যাকহ্যান্ড, একেকটা মারের সঙ্গে সঙ্গে দর্শক পরতে পরতে রোমাঞ্চ উপভোগ করেছেন। ডাবলব্রেকিং কিংবা ব্রেকপয়েন্ট যে কোনো উত্তেজনাকর মহূর্তে দর্শকের উল্লাস ছিল আকাশছোঁয়া। নাদাল যখন বল রিটার্ন করতে পারেননি, তখন তার আফসোস দেখে দর্শক হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন, একই ছবি দেখা গেছে জকোভিচের বেলায়।
টেনিসের দর্শক আর অন্যান্য খেলার দর্শকের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। টেনিসে সার্ভ করার সময় কথা বলা যায় না। বল রির্টানের সময় পিনপতন নীরব থাকতে হয়। একজন সাধারণ দর্শকও এটা বোঝেন, সাংবাদিকেরা জরুরি কথা বলছেন কানে কানে। মোবাইল ফোন শব্দ করতে পারবে না। ফ্রেঞ্চ ওপেনের মঞ্চে অলিম্পিক টেনিস থেকে বাড়ি ফিরে গেলেন নাদাল, যাওয়ার সময় সবাই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান দিলেন। আর জয় নিয়ে ফেরার সময় শিশুদের অটোগ্রাফ দিতে ভুললেন না। স্বাক্ষর করা টেনিস বল ছুড়লেন গ্যালারিতে। বেরিয়ে আসার সময় চোখে লেগেছিল সারা জীবন স্মরণ করার মতো রোমাঞ্চকর টেনিস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.