অবৈধভাবে নিয়োগ ও চার্জশীটভুক্ত আসামী হয়েও বহাল তবিয়তে আরডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ কামরুজ্জামান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী। ২০০৪ সালে তিনি অবৈধভাবে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি লাভ করেন। চাকরির লিখিত পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হলে সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পরে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখিয়ে তাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ বছর পার করছেন তিনি। আর দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন বছর আগে চার্জশীট হলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, আরডিএর উর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তার সাথে পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বহুল আলোচিত সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আরডিএ’তে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট ১০টি পদের বিপরীতে ১১ জন জনবল নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে শেখ কামরুজ্জামান সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে আবেদন করেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। পরে ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে সেই লিখিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এরপর অবৈধভাবে মৌখিক পরীক্ষায় তাকে কৃতকার্য দেখিয়ে সহকরী প্রকৌশলী পদে চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যানযায়ী, লিখিত পরীক্ষায় পূর্ণমান ছিল ১০০। আর নূন্যতম পাস নম্বর ছিল ৩৩। এরমধ্যে শেখ কামরুজ্জামান লিখিত পরীক্ষায় ২৪ নম্বর পেলে তিনি অকৃতকার্য হন। পরে লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে অবৈধভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় কামরুজ্জামানকে। মৌখিক পরীক্ষায় কামরুজ্জামানকে সর্বোচ্চ ৬৬ নম্বর দিয়ে কৃতকার্য দেখানো হয়। এরপর সহকারী প্রকৌশলী পদে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। যা বিধিবহির্ভূত।
ওই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে আরডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব হিসেবে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র মতে, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শেখ কামরুজ্জামান ১৯৯৩ সালে মানবিক বিভাগ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। অথচ সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা সকলেই ছিলেন বিএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রিধারী যোগ্য প্রার্থী।
সূত্রটি আরো জানায়, এই নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীত হয়েছে উল্লেখ করে নিয়োগবঞ্চিরা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই দুদকের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক আব্দুল করিম শাহমখদুম থানায় মামলা করেন। এরপর দীর্ঘ আট বছর তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদুর রহমান আরডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রব জোয়ার্দার ও সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জানকে অভিযুক্ত করে রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
এর প্রেক্ষিতে তিন অভিযুক্ত সুপ্রীমকোর্টে একটি রীট পিটিশন দাখিল করেন। ওই পিটিশনে তারা চার সপ্তাহের স্টে অর্ডার প্রাপ্ত হন। তবে পরবর্তীতে সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান আর কোনো স্টে অর্ডার পাননি। ফলে তিনি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আপিল করেন যার শুনানি এখন পর্যন্ত হয়নি।
তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী চার্জশীটভুক্ত আসামীর বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের বিধান থাকলেও আরডিএ কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি। বিবাদীর আপিলকে পুঁজি করে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযুক্ত শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বিষয়টিকে রহস্যজনক বলেই মনে করছেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ অধিশাখার ২০১২ সালের এক পরিপত্র মোতাবেক যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। কিন্তু চার্জশীটের বিষয়টি ধীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা হয়েছে। এতো কিছু সত্বেও শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ বা তাকে সাময়িক সাসপেÐ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আরডিএ’র বর্তমান এস্টেট অফিসার ও আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত) মো: বদরুজ্জামান বলেন, আমি অতিরিক্ত আইন বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। তিনি বলেন, আগে যা জানতাম তাও সব ভুলে গিয়েছি। আমাকে এসব বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না- প্লিজ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী অভিযুক্ত শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ফালতু প্রশ্ন কেন করেন- একথা বলেই তিনি কল কেটে দেন। ফলে অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরডিএ’র চেয়ারম্যান মো: আনওয়ার হোসেন বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনার এ বিষয়ে জানা থাকলে আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চার্জশীট হলেই যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে এমন কোনো আইন আছে বলে আমার জানা নেই।
তিনি আরো বলেন, শেখ কামরুজ্জামানের অবৈধভাবে চাকরিতে নিয়োগ লাভ ও তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিলের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও পরিপত্র সম্পর্কেও তিনি অবহিত নন বলে জানান। আরডিএর এই চেয়ারম্যান বলেন, এসব বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু অবহিত করেননি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি জি, এম হাসান সালাম (বাবুল) রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.