অবশেষে দলিল লেখক রিয়াজ হত্যায় স্ত্রীকে দ্বায়মুক্ত করে চার্জশিট

বরিশাল ব্যুরো: তিন দফা পরিবর্তনের পর অবশেষে বরিশালের আলোচিত দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেছেন মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা।
পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে হত্যা করেছে মর্মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া মামলার প্রধান আসামী নিহতের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজাকে দ্বায়মুক্ত করেই দাখিল হলো আলোচিত এই হত্যা মামলার প্রতিবেদন।
গতকাল সোমবার (৩০ নভেম্বর) বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগির হোসেন এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিচারক মো. মারুফ আহমেদ দাখিলকৃত চার্জশিট সম্পর্কে আদেশের জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে তুমুল আপত্তি এবং একাধিক অভিযোগ উপেক্ষা করেই এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেন।
এদিকে, আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই কিশোরকে অভিযুক্ত করা নিয়েও জোড় আপত্তি বাদী নিহতের ভাই মো. মনিরুল ইসলাম রিপনের।
অভিযুক্ত কিশোররা হলেন: চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর এলাকার বাসিন্দা মোশারফ চৌকিদারের ছেলে মো. নাঈম হোসেন বাবু ও একই এলাকার পিন্টু চৌকিদারের ছেলে মো. রায়হান। তাদের দুজনেরই বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ১৮ দিন উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, নিহতের স্ত্রী লিজা এবং নিহতের সহযোগী মাসুমের পরকীয়ার বলি নয়, বরং চার্জশিটভুক্ত মাদকাসক্ত দুই কিশোর চোর চুরি করতে গিয়েই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তবে দাখিলকৃত চার্জশিটের কোন স্থানেই উল্লেখ করা হয়নি হত্যা মামলায় শুরু থেকেই আলোচিত নিহত রিয়াজের সহযোগী মাসুমের নাম। ফলে চার্জশিটকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী। তিনি এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার বাদী মো. মনিরুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মো. সগির হোসেন মামলাটি নিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস কালক্ষেপণ করেছেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রধান আসামী আমিনা আক্তার লিজাকে মামলা থেকে রক্ষা করা। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে গত ২৩ অক্টোবর অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতি আপত্তি দেন। একই সঙ্গে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তের দাবি জানান।
বাদীর ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক গত ১১ নভেম্বর মামলার সকল সিডি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সগির হোসেনকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে করোনার অজুহাত দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হননি। কিন্তু তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) সোমবার আসামী এবং বাদী পক্ষের আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে প্রধান আসামি লিজা, পরকীয়া প্রেমিক মাসুম এবং তাদের সহযোগী ইদ্রিস হাওলাদারকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বাদী আরও জানান, চার্জশিট দাখিলের সময় একমাত্র তিনিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দাখিলকৃত চার্জশিটের বিষয়ে বিচারক তার মতামত জানতে চাইলে তিনি তাতে আপত্তি জানালে বিচারক নারাজি দিতে বলেছেন। চার্জশিটের কপি পেলেই নারাজির পাশাপাশি পুন:তদন্তের আবেদন জানাবেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগির হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মামলা তদন্তকালে রিয়াজ হত্যার সঙ্গে তার স্ত্রী লিজার জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া অভিযুক্তরা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্তে যেভাবে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে সেভাবেই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিট বাদীর বিপক্ষে গেলে তিনি অভিযোগ তুলতেই পারেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর এলাকায় নিজ বাড়িতে গলা কেটে হত্যা করা হয় দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে। ওই ঘটনায় ১৯ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হওয়া নিহতের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি সম্পত্তির জন্য পরকীয়া প্রেমিক মাসুম এবং তার সহযোগী ইদ্রিসকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্বামী রিয়াজকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান আল মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.