অটোরিক্সার দিনকাল; লিখেছেন সফিকুল ইসলাম (সাজু)

প্রভাষক, সফিকুল ইসলাম (সাজু): প্রথম যখন বের হলো অটোরিক্সাকে আমি ভেবে নিয়েছি বেশ টেকসই চিন্তার ফসল। ধোঁয়া উড়ায় না, সাধ্যের মধ্যে দাম, স্বল্প শব্দ, যা স্বল্পদৈর্ঘের পরিবহন হিসেবে দারুণ মানানসই। পরিবেশবান্ধবও বটে। 
কিন্তু এটার সহজপ্রাপ্যতার ক্ষেত্রে সংখ্যাগত নিয়ন্ত্রণ জরুরী ছিল, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। আবার এ নিয়ে দারুণ ব্যবসাও হয়ে গেলে উপরের তলার কিছু মানুষের।
দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ধারকর্জ করে অটোরিক্সা কেনার রেওয়াজ এখন গ্রামে কিংবা শহরে অনেক। আমাদের এলাকার অন্তত দশজন অটোওয়ালাকে জানি, যারা এনজিও কিংবা গ্রামীণ মহাজন থেকে ছড়াসুদে ঋণ নিয়ে অটো কিনেছে। অটোর ব্যবসা কিন্তু বড়লোকদের পকেটে চলে গেছে।
একটা দেশের সার্বিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সার্বিক স্বার্থে তা আমাদের মেনে নেয়াও উচিত। তবে সেক্ষেত্রে সরকার যেসকল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন, তারা একটু মানবিক ও জনবান্ধব মানসিকতা পোষণ করলেই বিতর্ক দূর হয়, কিছু হতদরিদ্র মানুষের মঙ্গল হয়।
এই ব্যাপারটাও তাই। প্রথমত, অটোর আমদানি বন্ধকরণ; দ্বিতীয়ত, ফিটনেস বিহীন অটোর অপসারণ।  এই দুটো কাজ শতভাগ করতে পারলে এক বছর সময়ে অটোর সংখ্যা অর্ধেক কমে যেত। বিষয়টা বেশ যৌক্তিকতাও পেত।
এখন যা করা হচ্ছে, হঠাৎ করে অটোরিক্সা প্রতিহতকরণ হচ্ছে, ভাঙা হচ্ছে, এটা মোটামুটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু গরীব শ্রমিক এক সপ্তাহ বা একমাস আগে এক-দেড় লক্ষ টাকা ঋণ করে অটো কিনলো, তার কী হবে? সে তো এদেশের নাগরিক। তারও অধিকার আছে কিছু করে সংসার চালানোর। সে তো রাষ্ট্রের কাছে কিংবা সভ্য সমাজের কাছে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, এটা নিষিদ্ধের কথা ছয় মাস কিংবা এক বছর আগে কড়াকড়িভাবে ঘোষণা দেননি কেন? তাছাড়া এদের বিকল্প আয়ের উৎস কী হবে? এগুলো দায়িত্বশীল ভাবনা।
আবার এতদিন সর্বস্থলে যে জনসমষ্টি একটা নির্দিষ্ট যানবহণের উপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এখন প্রতিদিন কীভাবে চলাফেরা করবে? বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, চাকুরিজীবী এ পর্যায়ের মানুষেরা যারা প্রতিদিন বিশ-পঞ্চাশ টাকা খরচ করে আসা-যাওয়া করতো, তারা এখন কীসে চলাফেরা করবে? অর্থাৎ গণমানুষের নিত্যদিনের বিকল্প পরিবহনে কী থাকছে?
আরেকটি ব্যাপার। নতুন কোনো যানবাহন প্রবর্তন করে সেটাও বড়লোকদের ব্যবসায়ের সুযোগ করে দেবে না তো! আবারও গরীব রিক্সা চালকদের ঋণের টাকায় পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না তো!
সাধারণদের কাতার থেকে এগুলোই মৌলিক ভাবনা। দায়িত্বশীলগণ যতদিন এই টেকসই ভাবনাগুলো ভাববেন না, ততদিন নাগরিক অসন্তোষ থেকে যাবে। নিভৃতে সহে যাওয়া মানুষের মাঝে ক্ষোভ জমা হতে থাকবে। শ্রেণি বিদ্বেষ তৈরি হতে থাকবে। এরা বার্স্ট হলে সেদিন সব ধ্বংস হবে।
অভিশাপেরও একটা ব্যাপার আছে। ঈশ্বরের বিচার বলে একটা বিষয়ও আছে। এগুলো বুঝতে হলে অভাবে জর্জরিত একজন খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তার ভেতরের মানুষটাকে বুঝতে হবে, যে কিনা প্রতিদিন অভাব আর ক্ষুধার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে সকালটা শুরু করেন। যার স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের গাড়িভাড়াটুকু দেয়ার সামর্থ থাকে না, স্ত্রী-সন্তানদের ভালো কাপড় আর খাবার দেয়ার সামর্থ থাকে না। এদের নিত্যদিনের অনুভূতিটুকু যিনি পাঠ করতে পারেন, তিনিই কেবল বুঝবেন।
কাজেই এই ব্যাপারে আমাদের চিন্তাটুকু আরেকটু উদার হতে পারতো। সিদ্ধান্তটা আরেকটু গরীববান্ধব হতে পারতো। উদ্দেশ্যও হাসিল হত, মানুষও বাঁচতো।
প্রভাষক, সফিকুল ইসলাম (সাজু)।
৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার।
কবিরহাট সরকারি কলেজ, নোয়াখালী।
প্রাক্তন ছাত্র:- সৈকত সরকারি কলেজ, চরবাটা, সুবর্ণচর, নোয়াখালী।  
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নোয়াখালী প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল (শিমুল)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.