অজানা শংকায় ভোটাররা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নির্বাচন, জনমতে এগিয়ে মোবাইল, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা প্রার্থীদের


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ৩০ নভেম্বর। তফসীল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী পরিবেশ অনেকটাই অস্থিতিশীল থাকায় জনমনে এক অজানা সংশয় ও ভয় কাজ করছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। নির্বাচনের প্রচারনার শুরু থেকেই হামলা, ভাংচুর, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে।
প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের প্রতি ঘৃনিত বার্তা দিয়ে জনমত নিজের দিতে ফেরানোর চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বদ্বীতাকারী বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন এর বিজয়ের কথা।
এদিকে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে নানা সংশয়ের কথাও বলছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও ভোটাররা। নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীরা নানাভাবে চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনী এলাকায়। শেষ মুহুর্তে সরকারী দলের প্রার্থীর সমর্থক ছাড়া কেউই যেন নিরাপদ নয়, বলেও আশংকা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের।
অন্যদিকে, কোন প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই কর্মী-সমর্থকদের আটক করার অভিযোগও করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা। তারপরও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ ও দাবী, ভোটার ও প্রতিদ্বদ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের। তবে, প্রশাসনের দাবী, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সকল ব্যবস্থা নেয়ার।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ হাজার ৪৩২ জন, মহিলা ভোটার ৭৪ হাজার ৬৫ জন। কেন্দ্র সংখ্যা ১৫টি ওয়ার্ডে মোট ৭২টি। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম এ।
এদিকে, নির্বাচন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী সামিউল হক লিটন বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। মেয়র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের প্রতীক মোবাইল ফোনের নির্বাচনী কর্মীরা আতঙ্কে থাকলেও ভোটারদের দাবি, সুষ্ঠভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে মোবাইলের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
অন্যদিকে, নির্বাচনী কৌশলে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ায় আওয়ামীলীগ দলীয় কর্মী-সমর্থকরাও নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিপরিতমূখী অবস্থান নিয়েছেন বলেও সুত্রে জানা গেছে। আর বিএনপির মধ্যে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত থাকায় এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা একমত না হওয়ায় নারিকেল প্রতীক কতটুকু সাফল্য ঘরে আনতে পারবেন, সেটি আগামী ৩০ নভেম্বর দেখার বিষয়।
অন্যদিকে, জগ প্রতিকের মেয়র প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান (মুকুল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নানা হয়রানী ও একটি দলের সমর্থন নিজেদের ঘরে আনতে না পারায়, জগ প্রতিকের ঘরেও নির্বাচনের ফল শেষ মেষ আসবে কি না? সে বিষয়েও নানা গুঞ্জন ও মতামত শোনা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন মোট ৪জন প্রার্থী।
এরা হচ্ছেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. মোখলেসুর রহমান, মোবাইল প্রতীক নিয়ে (আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র সামিউল হক লিটন, নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে (বিএনপি সমর্থিত) স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম এবং জগ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান (মুকুল)। এই নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ২৩ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন ৮৭ জন প্রার্থী।
সরজমিন জানা গেছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, সমর্থকদের উপর হামলা, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, অভিযোগের পর কোন ব্যবস্থা না হওয়া, মাইক ভাংচুর, দলীয় কৌশলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণায় হুমকী ও হয়রানী, নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত নির্বাচনী মাঠ।
এনিয়ে ভয় ও শংকায় দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। হয়রাণীর আশংকায় মাঠে নামতে পারছেন না স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন নির্বাচনী পরিবেশ কেমন থাকবে, মানুষ স্বাভাবিক ও শান্তিতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না? এমন আতংক ভোটারদের মুখে মুখে।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সামিউল হক লিটন ‘চাঁপাই দর্পণ’ কে বলেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আমার কর্মী আমানতকে আলিনগরের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এর আগেও আমার ৫ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়াও আমার ভাতিজাকে প্রধান আসামিকে করে ১২ কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এ কারণে কর্মীদের মধ্যে গ্রেফতারভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আমার কর্মী আজাইপুরের গোলাপ, হালুয়াবান্ধার হান্নান ও নাদিম, আলীনগর-ভুতপুকুরের বাহার আলী ও ওমর আলী এবং আলিনগরের আমানত কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, তাকে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে সব ধরনের অপচেষ্টা করছে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। শহরে বহু অচেনা মুখ বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাফেরাও করছে। এদিকে পুলিশ আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজছে। এ কারণে তারা মাঠে নামতে পারছেন না। অনেকেই আত্মগোপনে আছেন। এমন অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া অসম্ভব বলে দাবি করেন সামিউল হক লিটন।
নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভয়-ভীতিহীনভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের সকল নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি আশাবাদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। তারপরও আমি আশাবাদি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায়।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, জেলা শাখার সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরবাসি চায় একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কেউ চায় না, নির্বাচন কেন্দ্রে কোনো সংঘাত হোক, কোনো রক্তপাত হোক এবং কোনো রকমের প্রাণহানি হোক, ভোট কারচুপি হোক।
তিনি বলেন, নির্বাচনে হানাহানি, ভয়ভীতি কারও জন্যই সুখকর নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও প্রশাসন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন ভোটারদের একটা আশঙ্কা আছে, নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন কি-না? ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা, এমনটাও আশা সুজন সম্পাদকের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কাউকে হয়রানী করতে আটক করা হয়নি। নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পৌরবাসীকে একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে পুলিশ।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে মাঠে ১৫জন ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি কাজ করছে। সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক দাবি করে তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হবে ৩০ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে। সাধারণ ভোটাররা কোন প্রকার ভয় বা শংকা ছাড়ায় ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদানের আহবান জানান এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.