অজানা ভাইরাস হলো পানিবাহিত চর্ম রোগ

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে অজানা ভাইরাস জনিত রোগ হলো পানিবাহিত চর্ম রোগ। এই রোগেই চাপিলা ইউনিয়নের পাবনা পাড়া একই গ্রামে আক্রান্ত হয় ৬০ জন। এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে টনক লড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের।
গতকাল ১০-১০-২০২২ অক্টোবর ৭ সদস্যর একটি টিম চাপিলা ইউনিয়নের বাকিদেবপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে গিয়ে আক্তান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে সূত্র জানাজায়, চাপিলা ইউনিয়নের পাবনা পাড়া অজানা ভাইরাস রোগ নির্ণয় ও সেবা প্রদানের লক্ষে চিকিৎসক মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে আব্দুর রহিম, মাধব কুমার, আব্দুল আওয়াল বাকিদেবপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে ও প্রয়োজনী ওষুধ দিচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রুগিদের।
জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে পাবনা পাড়া মহল্লার সুলতানের স্ত্রী লিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মত বের হয়। পরে ব্যপক চুলকানোর কারণে লাল হয়ে যায়। তার তিন দিন পরে তার মেয়ের শরীরেও ওই লক্ষণ দেখা দেয়।প্রথমে স্থানীয় পল­ী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা নেয়। কিন্তু চুলকানি আরো বেশি হতে থাকে। এক পর্যায় নাটোর শহরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। লিমার পরে তার মেয়ে তার পরে প্রতিবেশীদের শরীরেও দেখা দেয় ওই রোগের লক্ষণ। ধীরে ধীরে ভাইরাস জনিত এই রোগটি ছড়িয়ে পরে গ্রামব্যাপী। বর্তমানে ওই মহল্লায় নারী-পুরুষ শিশুসহ প্রায় ৬০ জন এই চর্মরোগে আক্রান্ত।
আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মত লাল ও গুটি গুটি হয়ে পরেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষুধ সেবন করেছেন কিন্তু কেউ প্রতিকার পায়নি। এমনকি রোগের সঠিক নির্ণয়ও করতে সক্ষম হয়নি কেউ।
সড়েজমিনে আজ চাপিলার বাকিদেবপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে কমিনিউটি ক্লিনিকে ভিড় করেেেছ। চিকিৎসকরা লাইন করে একজন করে রুগি দেখছে আর চিকিৎসা দিচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা আদরি বেগম বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি তিন মাস ধরে চুলকানি রোগে ভুগছি অনেক চিকিৎসা কবিরাজ দেখাইছি ভালো হয় নাই। চুলকানি জায়গায় ঘাঁ হয়ে গেছে। আজ ডাক্তার সব দেখে বলেছে আপনার রোগ ভালো হয়ে জাবে। নিয়মিত ওষুধ খাবেন পরিস্কার পরিচ্ছনতা থাকবেন। আমাদের এলাকায় ডাক্তার এসে সেবা দিবে এটা ভাবতেও পাড়ি না।
আরেক জন মনিরা মনি বলেন, আমি ৬ মাস ধরে এই চুলকানী রোগের সাথে বসবাস করছি। যখন যে কথা বলেছে সেই চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু কিছুতেই রোগ ভালো হচ্ছে না। যখন চুলকানী শুরু হয় মনে হয় চুলকাতে চুলকাতে মরে জাবো। আজ যখন শুনলাম সরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার আসবে শুনেই চিকিৎসার জন্য এসেছি। ডাক্তার দেখেছে বলেছে ভালো হয়ে জাবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে চিকিৎসক ও টিম লিডার মাহামুদুল হাসান বলেন,এটা একটা ছোয়াচে রোগ এক জনের মাধ্যমে আরেক জনের শরীরে ছড়ায়। সঠিক ভাবে চিকিৎসা না নেওয়ার  কারনে রোগটি নিরাময় হয়নাই। এই এলাকার মানুষ অসচেতন তারা পুকুরে গোসল করে তা থেকে জীবানু মানব দেহে ছড়িয়েছে । তাই রুগীদের পরিস্কার পরিচ্ছনতা থাকতে বলা হয়েছে। যে অসুস্থ তার কাছ থেকে অন্যদের দুরে থাকতে বলা হয়েছে। আমরা হাসপাতাল থেকে যে ওষুধ পেয়েছি তা রুগীদের দেওয়া হয়েছে। বাকি ওষুধ বাহির থেকে কিনে খেতে বলা হয়েছে। আজ আমরা ৫০থেকে ৬০ জন রোগিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত এখন থেকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, এটা একটি পানি বাহিত চর্ম রোগ। চাপিলা ইউনিয়নে জলবদ্ধতার সমস্যা আছে। যার কারনে সেখানে পানিতে পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভাব রয়েছে। যার কারনে পানি বাহিত চর্মরোগের ব্যাপক আকার ধারন করেছে। যত দ্রুত সম্ভব জলবদ্ধতা দুর করা দরকার। জলাবদ্ধতা দুর করা না গেলে পানি বাহিত চর্ম রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে না । রোগীরা কখনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনা।
তাদেরকে হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগী ও আক্রান্তের স্থান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.