৩য় দিনে গড়ালো খুলনা-যশোরের পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন শতাধিক অসুস্থ  

খুলনা ব্যুরো: ৩য়  দিনে গড়ালো খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে আমরণ অনশন কর্মসূচি। শ্রমিকদের টানা কর্মসূচিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। টানা অনশনে প্রচন্ড শীতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক শ্রমিক। হাসপাতালে নেয়া ৩০ জনেরও বেশী শ্রমিককে।
অপরদিকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করেছে।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের তৃতীয়  দিনে অসুস্থ হয়েছে শতাধিক। গুরুতর অসুস্থ ২৭ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রম পরিষদের ডাকে ৬ দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে গত মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচি পালন করে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী। গতকাল বুধবার সকাল থেকে শীতে এবং অনাহারে থাকায় অসুস্থ হতে থাকে শ্রমিকরা। ক্রিসেন্ট জুটমিলের তাঁত বিভাগের শ্রমিক সুলতান প্রথমে অসুস্থ হয়। তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয় । পরে সকাল ৯টায় স্টার জুটমিলের পিপিয়ারিং বিভাগের শ্রমিক বাবুল অসুস্থ হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল ১১টার পর থেকে বেশি অসুস্থ হতে থাকে।

হাসপাতালে ভর্তি এ পর্যন্ত অসুস্থ যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন প্লাটিনাম জুটমিলের সুতা বিভাগের শ্রমিক ফুলমিয়া, লুৎফর রহামান, আব্দুর রহমান, হিরন, পাট বিভাগের আল আমিন, ব্যাচিং বিভাগের জাহিদুল, মতিয়ার, ওয়েন্ডিং বিভাগের নূর আলম, আহসান ও জাহাঙ্গীর। স্টার জ্টু মিলের রিপিয়ারিং বিভাগের ছালাম, ফারুখ, ইসহাক, শাহাজাহান, সমাপন বিভাগের আব্দল কুদ্দুস, পাট বিভাগের ইসমাইল,আব্দুর রহমান, কবির। এছাড়া আলীম জুট মিলে ৮ জন, ইস্টার্ন জুট মিলে ৪ জন এবং জেজেআই সভাপতি হারুন আর রশিদসহ ২ জন অসুস্থ হয়েছে। ক্রিসেন্ট প্লাটিনাম ও স্টার জুটমিলের ৩০ জনকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে সিবিএ নেত্রী শাহান শারমিন জানিয়েছেন। ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন জানান, তার মিলে ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি এবং ১০ জনকে স্যালাইন চলছে। জেজেআই সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান তিনি অসুস্থ রয়েছেন এবং তার সিবিএর সাধারণ সম্পাদকও অসুস্থ। একদিকে শ্রমিকদের আর্তনাদে খুলনা, আটরা ও নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

খুলনা জোনের সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিঞা বিটিসি নিউজকে জানান, গতকাল এ অঞ্চলের শ্রমিকদের বিষয়ে দুপুরে এবং বিকেলে সর্বশেষ পরিস্থিতি বিজেএমসিতে জানিয়েছেন।

বিজেএমসি জিএম (ইআর) মুজিবর রহমান মল্লিক বিটিসি নিউজকে জানান, বিজেএমসির তরফ থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক শ্রমিকদের বিষয় অবহিত করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে জেজেআই এর দুই শ্রমিককে টার্মিনেটেন প্রত্যাহারের বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতি মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের কাছে গেলে তিনি কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার প্রস্তাব দেন বলে বিটিসি নিউজকে জানান, প্লাটিনাম জুটমিলের সভাপতি শাহান শারমিন।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, মজুরি কমিশন কার্যকর ও প্রতি সপ্তাহের মজুরি প্রতি সপ্তাহে প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ।

এ কর্মসূচির শেষ দিনে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় খালিশপুর শিল্প এলাকার ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইস্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই এর শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে। পরে খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার পৃথক পৃথক আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেয়।

খালিশপুর বিআইডিসি রোড, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যাশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা এ অনশন কর্মসূচি শুরু করে।

কর্মসূচি চলাকালে খালিশপুরস্থ ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার স্টারসহ খুলনা-যশোর অঞ্চলের পৃথক সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, শাহানা শারমিন. হুমায়ুন কাবির, মোঃ সোহরাব হোসেন, শ্রমিক নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার, মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, স্টটার জুট মিলের আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন।

সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ৯ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর আহবান জানান। ১১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন আটরা শিল্পাঞ্চলের আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিলের শ্রমিকরা। অনশন চলাকালে অসুস্থ হয়ে ফুলতলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ইব্রাহীম মোল্যা, পনু, মোঃ কওসার, আব্দুল হামিদ, তাহের আলী, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন হারেজ আলী। ইস্টার্ন জুট মিলের চিকিৎসক মোঃ আবুল কালাম ও সহকারী আব্দুর রউফ জানান গতকাল ভোর রাত থেকে এ পর্যন্ত অনশন ক্যাম্পে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে ১২ জনের ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২ মিলের প্রায় শতাধিক শ্রমিকের।

এছাড়া আলিম জুট মিলস সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ সরদার দুপুর ১২টায় উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিল শ্রমিক কর্মচারীদের অনশন চলাকালে ইস্টার্ন জুট মিল সিবিএ সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলিম জুট মিলের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোঃ আমিরুল ইসলাম ও ইস্টার্ন জুট মিলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আলিম সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আঃ হামিদ সরদার, মোঃ ইউসুফ আলী, আলমগীর হোসেন, আঃ হক মহলদার, হাফেজ আঃ সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইজদান আলী, মোজাম্মেল হক, হাসান শরীফ, আঃ রব মোল্লা আঃ রশিদ, আকসার আলী, আঃ মজিদ মোল্ল্যা, শেখ জাকারিয়া, সর্দার আনোয়ার হোসেন, মেহেদি হাসান বিল্লাল, মনিরুল ইসলাম আকুঞ্জি শেখ শামিমুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস আলী, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান, বদর উদ্দিন বিশ্বাস, নাজমুল হক, কমরেড মফিদুল ইসলাম, গৌতম কুমার দাস, মোজাম্মেল হক, আব্দুস সত্তার মোল্যা, মোঃ বাবুল রেজা, মকবুল হোসেন, আবুল হাসান।

অনশন চলাকালে শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সহ সভাপতি ও ফুলতলা উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এসএ রহমান বাবুল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আব্দুস সালাম, শেখ হাসিবুল হাসান, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।

এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে বিআইডিসি সড়কের দোকানপাটও। পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলে।
গত ১৭ নভেম্বর ১১ দফা দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.