রহমান উজ্জ্বল: যে জাতি প্রতিবাদ করতে জানে না -সেই জাতিকে বহু পুরনো একটা বৃহৎ কবরস্থানের সাথে তুলনা করা যায়। হাজার হাজার বছর ধরে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে স্বাভাবিকভাবেই এই ভূখণ্ডের মানুষের চরিত্র একইসাথে প্রতিবাদী ও কিছুটা জটিল ধরনের। শাসকের শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের মানুষ বহুবার প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। বহুবার এই অঞ্চলের স্বাধীনচেতা মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিহাসের ভাজে ভাজে লুকিয়ে আছে সেইসব বিরত্বগাথা। আমাদের প্রিয় মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরের সেই আকাঙ্ক্ষারই চূড়ান্ত ফসল এবং একমাত্র সমাধান। এক সাগর রক্তে কেনা প্রিয় স্বাধীনতা।
আমরা ছোটবেলায় ভাব সম্প্রসারণ করতাম, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই কঠিন- সেই ভাব সম্প্রসারণ এর মত করেই যেন চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হলো ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে। এই আন্দোলন কোন দল-মত, ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা ধর্ম -দর্শনের মানুষের আন্দোলন ছিল না। বরং শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন হয়ে উঠে কৃষক- শ্রমিক, বেকার- হকার, গৃহিনী- গৃহহীন সব মানুষের অংশগ্রহণে এক তীব্র জনস্রোত। তরুণ- যুবাদের সাথে দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। অথবা নিজেকে নিরাপদে রেখে নানাভাবে বিপ্লবীদের সাহায্য করতে থাকে। সারিসারি ছাত্র-জনতা এ সময় রক্ত দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার তাজা প্রাণ আর ৩০ হাজার মানুষকে পঙ্গুত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে দানব হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়।
একটি গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংঘটিত হলে সেদেশের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল একটু ভিন্ন চরিত্রের। এই বিপ্লবে দেশের সাধারণ নাগরিকদের প্রতিপক্ষ ছিল রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মূলত ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে রিক্রুট এবং পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ট্রেনিংপ্রাপ্ত পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ছিল বেশি আক্রমণাত্মক। এবং বিভিন্ন বাহিনীর কিছু সুবিধাভোগী ও অতি উৎসাহী সদস্যরা আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়েছিল।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী পোষা বাহিনীগুলো এত বেশি গুলি চালিয়েছে যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দেশের বেশিরভাগ থানা এবং আগ্নেয়াস্ত্র রক্ষণাগারের গোলা-বারুদের রসদে টান পড়ে এসময়। আন্দোলনে পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি বাহিনীগুলোর উন্মত্ত আচরন দেশবাসীকে আরো ক্ষিপ্ত করে তোলে। সারাদেশে প্রায় পাঁচশত থানায় দেশের আন্দোলনরত নাগরিকরা কম -বেশি আক্রমণ চালায় এ সময়। বেশ কিছু পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয় গণ আক্রোশে। সরকারি হিসেবে নিহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৪৪ জন।
আন্দোলনের শেষের দিনগুলোতে ৫৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়ে থানাগুলো থেকে। হাজার হাজার মানুষের আক্রমণে দিশেহারা পুলিশ সদস্যরা এ সময় পালিয়ে যায় দায়িত্বস্থল থেকে। আগস্টের ৫ তারিখ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত দেশে মূলত কোন সরকার ছিল না। দেশের এমন অরাজক সময়ে নাগরিকরা অনেক দায়িত্বশীল আচরণ করে। যেকোন দেশি-বিদেশি চক্রান্ত রুখতে এ সময় নাগরিকরা দেশের পাড়া- মহল্লায় পর্যন্ত পাহারা বসায়। সনাতনী ভাইদের মন্দিরে পাহারা বসায় সাধারণ ছাত্রদের সাথে মাদ্রাসার ছাত্ররাও।
দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রবাসে বসে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারেক রহমান। দলীয় কর্মী ও দেশবাসীকে শান্ত থেকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। বারবার অনুরোধ করতে থাকেন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে। দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর ভাষায় হুশিয়ারি দেন। অভিযোগ পেলে এবং অভিযোগের সত্যতা মিললে এ সময় বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের মতো কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
বিএনপির তৃণমূল এ সময় দেশে কোনই অন্যায় করেনি- এরকম বললে সত্যের খেলাপ হবে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরনো স্বৈরাচারের অনুসারীরা অপরাধ করে সেটা কৌশলে বিএনপি’র লোকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। কিছু নিচের সারির বিএনপি নেতা ও প্রশাসনের লোক মিলে এ সময় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অথবা সুবিধাভোগীদের আশ্রয় দিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
তারেক রহমানের করা হুঁশিয়ারি এবং বারবার করা অনুরোধ অবশ্যই বিএনপি নেতাকর্মীদের এবং দেশের নাগরিকদের ক্ষোভ প্রশমনে বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ আরেকটি ভয়ংকর গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। সময়টা এমন ছিল যে, তারেক রহমানের সামান্য অঙ্গুলী হেলনেও ফ্যাসিস্ট অত্যাচারীদের নাম- নিশানা পর্যন্ত মুছে যেতে পারত। কিন্তু তিনি তা করেননি। বাংলাদেশের এই ঝঞ্ঝামুখর- বিক্ষুব্ধ সময়টাতে প্রবাসে বসেই তারেক রহমানের সময়োচিত ডায়নামিক নেতৃত্বে বিএনপি এবং অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীরাও মুগ্ধ হয়। তার এই হিংসার বদলে অহিংস নীতি এবং তা মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনবরত প্রচার করা বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে ঔষধের মতো কাজ করে। ফলে এ সময় যারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত ছিল, তাদের অনেকেই সংযত ও শান্ত হয়।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ে তারেক রহমান ঘোষণা দেন, যারা বিএনপির নামে অরাজকতা করবে- তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য। তারেক রহমানের তড়িৎ সিদ্ধান্তের ফলে দেশ একটি বিরাট প্রাণঘাতী ম্যাসাকার থেকে রক্ষা পায়। ইতিহাসে একদিন হয়তো তারেক রহমানের এই বিদগ্ধতা তাকে গণতন্ত্রকামী বিশ্বের নেতাদের সামনের কাতারে নিয়ে আসবে।
বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এদেশের নাগরিকরা ও বিশ্ব একজন পরিণত রাজনীতিবিদকে খুঁজে পায়। যার যোগ্য নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ পূর্ববর্তী সময়ের মতো বিপ্লব পরবর্তী সময়েও মানুষ তাকে অকুন্ঠ সমর্থন প্রদান করে এবং ঐক্য বজায় রাখে। একসময় যারা তারেক রহমানকে পছন্দ করত না – তারাও এ সময় তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্ব ও বিনয় দেখে তার প্রতি আগ্রহী হয়।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একটি বৃহৎ অংশ যারা বিগত ৩/৪ টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। এইসব ছাত্র- তরুণদের সাথে তারেক রহমানের পরিচিতি ঘটে- এ সময়। এসব তরুণরা লক্ষ্য করে -;আওয়ামী গোষ্ঠীর বয়ানে তারা মনের মধ্যে যে তারেক রহমানকে চিত্রিত করেছে -আসলে তিনি তা নন। বরং তাদের বর্ণিত চরিত্র থেকে উল্টো শান্ত, সৌম্য,ধীসম্পন্ন একজন রাজনীতিবিদ মানুষ হলো তারেক রহমান।
আন্দোলন পরবর্তী সময়ে তারেক রহমান শুধু বিপ্লবীদের সাথেই সংযুক্ত ছিলেন না। বরং সব শ্রেণী- পেশাজীবী মানুষের সাথেই উনার যোগাযোগ ছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত তারেক রহমানের ফোন কল পেতেন বা এখনও পান। যেকোন দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা অবশ্যই উদাহরণ।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে শেখ মুজিব ও তার লোকদের ধারাবাহিক অপশাসন, লুটপাট, চুরি- চামারিতে দেশের ক্ষুধার্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। একদিকে ভারতের কাছে বর্গা দেয়া হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা। আর অন্যদিকে শেখ মুজিবের নিজের ভাষ্যমতে – তার দলের চোরের খনি দেশের অর্থনীতি, খাদ্যব্যবস্থা ও পররাষ্ট্রনীতিকে এমনভাবে নষ্ট করে ফেলে – যে কারণে দেশে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেলেও শেখ মুজিব নিজেকে শোধরায়নি। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে তার খামখেয়ালিপনার শাসন। জনগণের ভেতর বাড়তে থাকে ক্ষোভ ও ঘৃণা। পরিনিতি স্বরূপ শেষ পর্যন্ত মুজিবের সপরিবারে রক্তাক্ত বিদায় ঘটে।
শেখ মুজিব নিহত হলে খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের টালমাটাল সময়ে এই মন্ত্রিসভা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে এ সময় সেনাবাহিনী এবং জনগণ মিলে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসায়। যা পরবর্তীতে সিপাহী -জনতার বিপ্লব নামে পরিচিতি লাভ করে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে ভারত, সোভিয়েত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি পাল্টে মধ্য প্রাচ্য, চিন ও ইউরোপ- আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সামান্য সময়ের মধ্যে দেশের বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করেন। প্রবাসে জনশক্তি রপ্তানি ও গার্মেন্টস সেক্টরকে প্রতিষ্ঠিত ও আধুনিকায়ন করে দেশের অর্থনীতিকে দাড়া করানোর প্রয়াস চালান। কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সারাদেশে এসময় খাল খনন প্রকল্প হাতে নেন তিনি। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক।
প্রচন্ড পরিশ্রমী, সৎ, স্বাধীনতাচেতা এবং নিরহংকারী জিয়াকে দেখে সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষ মনে করে- দেশের জন্য আকাঙ্খিত নেতাকে পেয়ে গেছে তারা। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ক গঠন প্রেসিডেন্ট জিয়ার অন্যতম কীর্তি । এ সময় তিনি মুজিব দ্বারা অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করে দেন। জিয়ার সুশাসন দেশের জনগণকে যেমন তার প্রতি আকৃষ্ট করছিল , উৎসাহী করছিল- তেমনি নিজস্ব কর্মকাণ্ড দ্বারা বিশ্বমঞ্চেও তিনি আবির্ভূত হচ্ছিলেন একজন বিশ্ব নেতা হিসেবে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেছিলেন এদেশের মানুষের নয়নের মনি। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে ছিলনা। ফলাফলস্বরূপ, দেশে-বিদেশি চক্রান্তে ১৯৮১ সালে ৩০ মে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের শাহাদাত বরণ করেন। জিয়াউর রহমানের জানাজায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণ এবং মাতম করা দেখে তার জনপ্রিয়তার নমুনা কিছুটা আঁচ করা যায়। শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলে এদেশের মানুষ সেদিন দেশ জুড়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিল।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সাহসী ও নির্ভীক। মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার এবং মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির এক্টিভ চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বইছে সেই মহান শাসক , বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের রক্ত। বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতিতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে তারেক রহমানের নাম। যে তারেক রহমান প্রবাসে বসেও প্রাণ ভোমরার মতো ফ্যাসিস্ট বিরোধী সমস্ত শক্তির কাছে শ্রদ্ধার।
ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর শাসনামলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার সহধর্মিনী, দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নিরন্তর অপপ্রচার চালানো হত। অন্যদিকে গুন্ডা ধরনের রাজনীতিবিদ শেখ মুজিব তার নিজের ছেলে ও দলের লোকদের ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করলেও তাকে তার দলের লোকেরা দেবতা বা অতিমানব হিসেবে প্রতিষ্ঠার অনবরত প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু সত্য ও ইতিহাস একদিন প্রকাশিত হবেই। সেই সত্যের জোরের কারণেই এদেশের মানুষের মন থেকে শহীদ জিয়াকে বিন্দুমাত্র মুছা যায়নি। বরং উল্টো শেখ মুজিব, শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সবার অসংখ্য অজানা কুকীর্তিগুলো জনসমক্ষে বেরিয়ে পড়ছে।
তারেক রহমানের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে আলোচনাকালে তার আরও দু/ একটি কাজের সম্পর্কেও আলোকপাত করা দরকার। এ বিষয়ে আমরা স্মরণ করতে পারি বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের টুংগীপাড়া সফরকে। এ সময় তারেক রহমান ভ্রান্ত ইতিহাস তৈরি করা বা এই প্রচেষ্টা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যার যতটুকু ভূমিকা বা অবদান ছিল – সেটা জাতির সামনে স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন। সেই সাথে জাতীয় ঐক্যের উপর ভিত্তি করে একটি আধুনিক ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী গোষ্ঠী ও তাদের প্রভু ভারত তারেক রহমানের এই আহ্বানকে উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।
তারেক রহমান সম্পর্কে আমি দ্বিতীয় যে বিষয়টি উল্লেখ করব তা হয়ত দেশের নাগরিকরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন। বিষয়টি হলো -শান্ত, সৌম্য ,ধীরস্থির তারেক রহমান। এত অন্যায় -অবিচার ,জুলুম- মিথ্যাচারের পরও তারেক রহমান কারো প্রতি কোন প্রকার উগ্রতা প্রদর্শন করেননি। এমনকি পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রতিও কোন কটু উচ্চারণ করেননি। মানুষের মনে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার বদলে অহিংসার বাণী গেঁথে দিয়েছেন তিনি।
৫৩ বছর ধরে আওয়ামী গোষ্ঠী ও তাদের প্রভু ভারত আমাদের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতিকে- চিরস্থায়ীভাবে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে। যেখানে এদেশের জাতীয়তাবাদী ঘরানার নাগরিক, বিএনপি ও জিয়া পরিবারই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ।
আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠী অনবরত প্রচার- প্রচারণা চালিয়েছে, জিয়া পরিবার,তারেক রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নিয়ে। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি এদেশের জাতীয়তাবাদী জনতা কখনোই ভারতের দাদাগিরি বা এদেশের ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপকে সহজভাবে নেয়নি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবিদার ভারতের বোধোদয় হয়নি আজবধি। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত এ দেশের জনগণের পরিবর্তে তাদের অনুগত, তাবেদার সরকার অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের এই নিপীড়নমূলক পররাষ্ট্রনীতি এ দেশের নাগরিকদের দিন দিন সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বের পরিবর্তে ভারত বিদ্বেষী করে তুলেছে। পাশাপাশি অবস্থান করা বিশাল সীমান্তের দুটি দেশের জন্য যা কখনোই মঙ্গলজনক কিছু বয়ে আনবে না।
এখানে পাঠকদের আমি আরেকটা বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হল, স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের পরও তারেক রহমানের দেশে না আসা। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তাড়াহুড়ার পরিবর্তে তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তার প্রতি দায়ের করা ভুয়া মামলাগুলো নিষ্পত্তি করছেন। মামলাগুলো আইনিভাবে নিষ্পত্তি করেই তিনি দেশে আসতে চান।
তারেক রহমানের দেশের জন্য স্যাক্রিফাইস, প্রবাসে বসে দল এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ,পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ভূমিকা ইতিমধ্যে তাকে বিশ্ব রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হিসেবে তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে তারেক রহমানই হলো বর্তমানে প্রধান কান্ডারী। এ বিষয়ে এখন আর কারো দ্বিমত নাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততা, আদর্শ ও নিষ্ঠাকে ধারণ ও লালন করে রাজনীতি করলে হয়তো একদিন বিশ্ব রাজনীতিতেও তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.