১৯০ বছর আগে নির্মিত মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু দিয়ে চলছে ট্রেন, জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন, সেতুর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ৯০ বছর আগে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার প্রধান প্রবেশদ্বার ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই তিস্তা রেলসেতু। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বৃহৎ আয়তনের একটি রেলসেতু এটি। নাট-বল্টু দিয়ে নির্মিত এই সেতুর মেয়াদ ৯০ বছর আগে শেষ হলেও দাপটের সাথে ভারবহন করে চলছে। ট্রেন উঠলে পুরো সেতু কেঁপে ওঠে। এরপরেও লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরসহ সারা দেশের রেল যোগাযোগ আজও সচল রেখেছে এই সেতু। এখনো আগের মতো সক্ষম সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৮টি ট্রেন চলাচল করছে বলে খোদ রেলওয়ে বিভাগ দাবি করেছে।
জানা গেছে, ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের আমলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা মৌজায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু। যার দুইহাজার ১১০ ফুট (৬৪৩ মিটার) দীর্ঘ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠান নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নির্মাণ কাজ করে। ফিসপ্লেট-নাট-বল্টু দিয়ে সেতুটির স্থায়ীত্বকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। বর্তমান রেলসেতুর বয়স ১৯০ বছর। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ৯০ বছর আগে। শুরুর দিকে তিস্তা রেল সেতু কেবল লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরসহ সারা দেশের সাথে রেল যোগাযোগের জন্যই ব্যবহৃত হতো।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বোমা মেরে সেতুর একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত করে। তৎকালীন রেল কর্তৃপক্ষ সেতু সংস্কারের পর ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। তার সাথে যুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে সেতুতে মিটার গেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। সেই সাথে ছোট-বড় বাস ও ট্রাকসহ সড়ক যোগাযোগ চালু করা হয়। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। তার ওপর আবার মেয়াদোত্তীর্ণ ৯০ বছর পার হলেও জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।
অপরদিকে এমন আশঙ্কা থেকে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা রেলসেতুর পূর্বপাশে নতুন করে তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। যার কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে, তখন থেকে বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন তিস্তা সড়ক সেতু দিয়ে চলাচল করছে। তারপরও স্বস্তিতে নেই রেলসেতুটি। সেই থেকে রেলসেতুটি লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের রেল সংযোগকারী হিসেবে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে ১৮টি ট্রেন। বর্তমান সেই তিস্তা রেলসেতুর কিছু কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে ক্লিপ, মরিচা ধরেছে সেতুর দুই সারির জোড়ায় ব্যবহৃত ফিসপ্লেটের নাট-বল্টুতে। তবে নির্মাণের ১৯০ বছর পরেও সেতুটি ততোটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ।
কাউনিয়ার কলেজ ছাত্র রাকিব হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ট্রেনে যোগাযোগের উত্তরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা তিস্তা রেলসেতু। সেটিও বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিস্তা পাড়ের আলিমুদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। অথচ এটির কোনো গুরুত্ব নেই প্রশাসনের। জন্মের আগের সেতুটি কি এভাবেই থাকবে?
এ বিষয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) আব্দুস সালাম বিটিসি নিউজকে জানান, তিস্তা রেলসেতুর মেয়াদ শেষ হলেও ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে সেতুর কিছু স্থানের নাট-বল্টু ও স্লিপার চুরি হয়ে যাচ্ছে। এটি ট্রেন চলাচলে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা রেলসেতু রক্ষণাবেক্ষণে জন্য জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.