খুলনা ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প নির্মাণে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
সোমবার (১২ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৫ এর ক্ষমতাবলে এই আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘোষিত ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ECA)’-র মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান, প্রকল্প বা অবকাঠামো নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, দূষণ প্রতিরোধ ও প্রশমন,জীববৈচিত্র্য রক্ষা,পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, এ নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের সুযোগ রেখেই জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ, ইসিএ এলাকার মধ্যে পরিবেশ উপযোগী কার্যক্রমের অনুমতি থাকবে; তবে বাণিজ্যিক শিল্পনির্ভর প্রকল্প বা দূষণকারী কার্যক্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। এ বনকে ঘিরে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প-কারখানা, বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, জাহাজ ভাঙা শিল্প, কেমিক্যাল কারখানা—ইত্যাদি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
পরিবেশবিদ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন,“এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বহু আগেই কার্যকর করা উচিত ছিল। শিল্পায়নের নামে সুন্দরবনের নিকটবর্তী এলাকায় গত এক দশকে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ প্রায় অসম্ভব।”
বন অধিদপ্তরের খুলনা রেঞ্জ কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনের আশপাশে আরও ১৯টি শিল্প প্রকল্প প্রস্তাবিত রয়েছে, যেগুলো এখন বাতিলের মুখে পড়বে।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও টেকসই ও পরিবেশসম্মত কার্যক্রম যেমন, পরিবেশ শিক্ষামূলক প্রকল্প,ইকো-ট্যুরিজম (নিয়ন্ত্রিত ভাবে),ম্যানগ্রোভ গবেষণা ও স্থানীয় জনগণের সহায়ক উদ্যোগ। এগুলো যথাযথ অনুমোদনের ভিত্তিতে করা যাবে।
এই সিদ্ধান্ত পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে সরকার, স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.