বিটিসি নিউজ ডেস্ক: সিলেটের বিয়ানীবাজারে ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন পাওয়ার গ্রিড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি মাসে স্টেশনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছেন সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকরা।
জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-১ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম বাসস’কে জানান, গত ১২ জুন থেকে স্টেশনটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। এখন থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমে যাবে এবং গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আবু হানিফ মিয়া জানান, সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন থেকে এ সমিতির গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। প্রাচীনতম এ স্টেশনটি ওভারলোডেড হওয়ায় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হতো না। চারখাই গ্রিড স্টেশনটি চালু হওয়ায় এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে বলে আশাবাদি আমরা।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে জেলার ৮ উপজেলায় ও সমিতি-২ এর অধীনে জেলার ৫টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দুই সমিতির অধীনে প্রায় সাড়ে ৪লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবা পেয়ে থাকেন। এছাড়া সিলেট শহর ও আশপাশ এলাকায় প্রায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের অধীনে ২ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন পাওয়ার গ্রিড স্টেশন চালু থেকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডেও বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরাও সেবা পাবেন। এছাড়া সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথ প্রসারিত হবে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা জানান, চারখাই গ্রিড স্টেশন ছাড়াও সমিতির অধীনে কয়েকটি সাব স্টেশন, সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, পুরাতন লাইন মেরামতসহ বিদ্যুতের উন্নয়নে কাজ চলছে। আগামী ৩০ বছরের চিন্তা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার গ্রিড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
গ্রিড স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি টাওয়ার ও ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
চারখাই গ্রিড স্টেশনের প্রকল্প পরিচালক শফি উল্লাহ বাসসকে জানান, ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বিয়ানীবাজারের চারখাইয়ে পাওয়ার গ্রিড সাব স্টেশনটি। চলতি মাসে এটি পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরোদমে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে সিলেট সদর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত হয়েছে। দু’এক মাসের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। নতুন স্টেশনটি চালু হলে সিলেটের সবক’টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা সহজতর হবে।
সিলেট শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী এলাকা জকিগঞ্জ উপজেলা। নতুন পাওয়ার গ্রিড স্টেশনের ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এ অঞ্চল। কৃষিনির্ভর এই উপজেলার মানুষ এতদিন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলো। উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হান বলেন, সরকার সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু জকিগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুতের নানা সমস্যা ছিল। এখন চারখাইয়ে নতুন গ্রিড স্টেশন চালু হওয়া জকিগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
সিলেটের সীমান্তবর্তী ও দূরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ। বর্ষা মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টিতে কোথাও বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এসব উপজেলার মানুষ। মেরামত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হয়।
প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম জানান, এ সমস্যা দূর করতে আমরা তিনটি সুইচিং স্টেশন করেছি। যার ফলে এক এলাকায় কোনধরণের ত্রুটি দেখা দিলে অন্য এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়বে না। যে অঞ্চলে লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, শুধুমাত্র সে অঞ্চলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। অন্যরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।
বর্তমানে সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড এবং ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রিডের মাধ্যমে সিলেটের ১৩ উপজেলা ও সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সিলেট নগরী ও আশপাশের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবি-১, ২, ৩ ও ৪ শাখার অধীনে নগরীতে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার গ্রাহক।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বাসসকে বলেন, গ্রাহক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও এখন ওভারলোডেড। এ কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। পুরনো হওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে। নতুন পাওয়ার গ্রিড স্টেশন সিলেটের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য সুখবর দেয়া যেতে পারে। চারখাই পাওয়ার গ্রিড স্টেশন পুর্ণমাত্রায় চালু হলে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। ( সূত্র: বাসস )#
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.