সমাজসেবা কর্মকর্তার ছদ্মবেশে প্রতারণা, লোভনীয় প্যাকেজে রাজশাহী মহিলা দলে বিশৃঙ্খলা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি রওশন আরা পপি ও সাধারণ সম্পাদক সাকিনা খাতুন খুকুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন মহিলা দলের নগর যুগ্ম সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি অনুদানের নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অন্তত ২৬ জন হতদরিদ্র নারী।
বিষয়টি নিয়ে আরএমপির চন্দ্রিমা থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ১১ জানুয়ারি মহিলা দলের নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড ভিত্তিক ১০ জন নারীর নাম ও মোবাইল নম্বরের তালিকা সমাজসেবা দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বলা হয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রত্যেক নারীকে ৯ হাজার টাকার ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
এরপর ফরিদাকে ফোন করে নগর সেক্রেটারি সাকিনা খুকু বলেন, “সমাজসেবা অধিদফতরের হারুন ও কামরুজ্জামান খুব ভালো মানুষ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করো।” এরপর হারুন অর রশিদ নামে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে সরকারি অনুদানের কথা বলেন এবং কামরুজ্জামান নামের আরেক ব্যক্তির নম্বর দেন।
কিছুক্ষণ পর কামরুজ্জামান ফরিদাকে ফোন দিয়ে বলেন, “আপনার ওয়ার্ডে যদি আরও হতদরিদ্র নারী থাকে, তাহলে নামের তালিকা দিতে পারেন। বিশেষ সুবিধা হিসেবে বেশি প্যাকেজ বরাদ্দ পাবেন।”
ফরিদা জানান, ভুয়া কর্মকর্তা তার নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে প্রতিটি নামের জন্য ৭৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি বিকাশ করতে বলেন। তিনি ২৬ জন নারীর নাম সংযুক্ত করে ২০ হাজার টাকা পাঠান।
কিন্তু টাকা পাঠানোর পর মোবাইল নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। ফরিদা নগর সভাপতি ও সম্পাদককে জানালে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বাজে ভাষায় কথা বলেন।
রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান জানান, “এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা রাজশাহীতে প্রথম শুনলাম, তবে আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এমন ঘটনা ঘটেছিল।”
সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ বলেন, “হারুন অর রশিদ ও কামরুজ্জামান নামে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী আমাদের দপ্তরে নেই।”
মহিলা দলের সভাপতি ও সম্পাদকের বক্তব্য অভিযুক্ত মহিলা দল সভাপতি রওশন আরা পপি বলেন, “এক যুবদল কর্মীর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আমার নম্বর সংগ্রহ করেন এবং সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দরিদ্র নারীদের তালিকা চান। আমরা টাকা নেওয়ার নির্দেশ দিইনি। ফরিদা নিজেই টাকা পাঠিয়েছে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, “গরিব নারীরা টাকা দিয়েছেন, কিন্তু কেউ দায় নিচ্ছেন না। তদন্ত চলছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা জানান, লোভনীয় প্যাকেজের মধ্যে ছিল ৩০ কেজি চাল, ৫ লিটার তেল, একটি উন্নত মানের কম্বল, চিনি ও নগদ ৪ হাজার টাকা। এখন প্রতারিত হয়ে তারা হতাশ।
এ ঘটনায় মহিলা দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই নগর সভাপতি ও সম্পাদকের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, আবার কেউ কেউ ফরিদা ইয়াসমিনের অসতর্কতাকে দায়ী করছেন।
এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে, নগর মহিলা দলে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.